ঢাকা ০৯:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

বাজার এখনও সিন্ডিকেটের দখলেই রয়ে গেছে ?

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১২:৫১:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৩৬৯ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সপ্তাহ ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে সব ধরনের সবজি, মাছ ও ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। তবে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে জাতীয় মাছ ইলিশ।

শীতের সবজি শিমের দাম দোকানভেদে চাওয়া হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি। ফুলকপি ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং বাঁধাকপি ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত।

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর গুলশান, মালিবাগ, বাড্ডা, রামপুরা, শেওড়াপাড়া ও তালতলা এলাকায় বাজার ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যে কারণে দামটা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে একটু বেশি।

বাজারে শিম, ফুলকপি, পাতাকপি, মূলা, ঢেঁড়সসহ প্রায় সব ধরনের শীতের সবজির দেখা মিলছে। রয়েছে বেগুন, পটল, ঝিঙা, করলা, টমেটো, শসা, গাজরসহ অন্যান্য সবজিও। সব সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও দাম আগের মতোই বেশ চড়া। ফলে সবজির বাজারে এসে স্বস্তি মিলছে না ক্রেতাদের।

বাজারগুলোতে শীতকালীন সবজি শিম ৩০০ টাকা কেজি, ফুলকপি ৭০ থেকে ৮০ টাকা পিস, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, গাজর ১৬০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা এবং জলপাই ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে লেবুর হালি ২০ থেকে ৫০ টাকা, ধনে পাতা কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, কাঁচা কলা হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায় এবং মিষ্টি কুমড়া কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে লাল শাক ১৫ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৪০ টাকা, মূলা শাক ১৫ টাকা, পালং শাক ১৫ থেকে ২০ টাকা, কলমি শাক ১০টাকা, পুঁই শাক ৩০ টাকা এবং ডাটা শাক ২০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। বাজারগুলোতে সপ্তাহ ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজ ১২০ টাকা, আদা ২৮০ টাকা, রসুন ২২০ টাকা এবং আলু কেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে গ্রীষ্মকালীন সবজি কচুরমুখী ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকায়, প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধুন্দুল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা শসা ৮০ থেকে ১০০ টাকা এবং কাঁচামরিচ কেজিতে ১৪০ টাকা বেড়ে প্রকারভেদে ৩৬০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সরবরাহ কম থাকায় কাঁচামরিচের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা। তারা জানান, গত সপ্তাহের তুলনায় কাঁচামরিচ কেজিতে ১০০ টাকা ওপরে দাম বেড়েছে। কাঁচামরিচ বিক্রি করছেন না বলেও জানান অনেক ব্যবসায়ী।

রফিকুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে প্রায় সব সবজির দাম ৫০-৬০ টাকার ওপরে। সবজির এত দাম হলে স্বস্তি মেলে কী করে? সবজিতে বাজার ভরপুর। অথচ দামের বেলায় মনে হয় এগুলো বিরল প্রজাতির সবজি। দু-তিন রকম সবজি কিনলেই এক-দেড়শো টাকার ওপরে চলে যাচ্ছে। মাছ-মাংস বাদ দিয়ে সবজি কিনে খাব তারও উপায় নেই। মোটকথা আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষ খুব কষ্টে আছে।

তিনি বলেন, আমরা তো ভেবেছিলাম নতুন সরকার ঠিকভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই হচ্ছে না। বাজার এখনও সিন্ডিকেটের দখলেই রয়ে গেছে।

মওদুদ আহমদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, বর্তমান বাজারে আমাদের মতো ব্যাচেলর শিক্ষার্থীরা খুবই কষ্টে আছে। কোনো কিছুরই দাম স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। কোনোভাবেই মিলরেট (খাবার খরচ) ১০০ টাকার নিচে আসে না, যেখানে আগে অনেক ভালো খেয়েও ৫০/৬০ টাকার বেশি হতো না। দুইটা টিউশনি করাই, সবকিছুর দাম বাড়লেও তো আমাদের আয়ের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।

খুচরা, পাইকারি ও উৎপাদক পর্যায়ে ডিম, মুরগির দাম সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। মূল্য বেঁধে দেওয়ার ১৯ দিন পেরোলেও বাজারে আগের সেই বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার-সোনালি মুরগি। সরকারি দামের চেয়ে ১০ টাকা বেশিতে ব্রয়লার আর ২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সোনালি মুরগি।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৯০ টাকায় আর সোনালি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি লেয়ার মুরগি প্রতি কেজি ৩১০ টাকা, কক কেজি ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা। এছাড়া দেশি মুরগি আগের মতো ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

যদিও শুধু ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। বাকিগুলোর দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করে দিলেও তা বাজারে প্রতি কেজি ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা নির্ধারণ করে দেওয়া দামের চেয়ে ১০ টাকারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে।

একইভাবে সোনালি মুরগির প্রতি কেজির দাম ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৯০ টাকা। যা নির্ধারণ করে দেওয়া দামের চেয়ে কেজিতে ২০ টাকারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর মহাখালী বাজারে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী হাবিবুর রহমান। মুরগির দাম বিষয়ে তিনি বলেন, গণমাধ্যমের খবরে শুনেছিলাম ব্রয়লার আর সোনালি মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু বাজারে এর কোনো প্রভাব একবারও দেখলাম না। ‌ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা কেজিতে, আর সোনালি মুরগি কিনলাম প্রতি কেজি ২৯০ টাকায়। নির্ধারণ করে দেওয়া দামের সঙ্গে বাজারের দামের কোনো মিল নেই। ২০ টাকা বেশি প্রতি কেজিতে নিচ্ছে অথচ এটা মনিটরিং করার কেউ নেই। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। শুধু দাম নির্ধারণ করে দিয়েই চুপ আছে সংশ্লিষ্টরা।

মুরগির দাম বাড়তি বিষয়ে রামপুরা বাজারের আব্দুল মালেক নামের এক বিক্রেতা বলেন, বাজারে মুরগির চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। যে কারণে পাইকারি বাজার থেকেও আমাদের বাড়তি দামে মুরগি কিনতে হচ্ছে। তাই কিছুটা বেশি দামে খুচরা বাজারে আমাদের বিক্রিও করতে হচ্ছে।

এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর মুরগি ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। সেখানকার মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ রেয়াজুল হকের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়, ডিম খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা এবং ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি চিঠিতে মুরগি (সোনালি ও ব্রয়লার) ও ডিমের নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্য (উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে) সঠিকভাবে বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী ডিমের মূল্য উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ০১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। কেজিপ্রতি সোনালি মুরগি উৎপাদক পর্যায়ে ২৬০ টাকা ৭৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ২৬৪ টাকা ৫৭ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর কেজি প্রতি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদক পর্যায়ে ১৬৮ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১৭২ টাকা ৬১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।

একইসঙ্গে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সব বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ছাড়াও বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন, ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল, বাংলাদেশ পোলট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ, অ্যানিমেল হেলথ কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ অ্যাগ্রো ফিড ইনগ্রেডিয়েটস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ১৯ দিনেও মূল্য নির্ধারণের কার্যকারিতা বাজারে দেখা যায়নি।

বাজারগুলোতে গরুর মাংস কেজি প্রতি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১১৫০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে বাজারে সরবরাহ বাড়লেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ মাছ। এসব বাজারগুলোতে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা এবং ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের মাছ ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা, ১ কেজি ওজনের ইলিশ ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা এবং দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ২২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে এক কেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকায়, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৩০ থেকে ৫০০ টাকায়, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১১০০ টাকা, মৃগেল ৩২০ থেকে ৪০০ টাকায়, চাষের পাঙাস ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ১৪০০ টাকায়, বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায়, কাতল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়, পোয়া মাছ ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়, মলা ৫৫০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকায়, পাঁচ মিশালি মাছ ২২০ টাকায়, রূপচাঁদা ১২০০ টাকা, বাইম মাছ ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, দেশি কই ১২০০ টাকা, সোল মাছ ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ টাকা এবং কাইকলা মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে ৫ কেজি সোয়াবিন তেল ৮১৮ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, মিনি কেট চাল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা এবং নাজির সের ৭৫ থেকে ৮২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

বাজার এখনও সিন্ডিকেটের দখলেই রয়ে গেছে ?

আপডেট সময় : ১২:৫১:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪

সপ্তাহ ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে সব ধরনের সবজি, মাছ ও ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। তবে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে জাতীয় মাছ ইলিশ।

শীতের সবজি শিমের দাম দোকানভেদে চাওয়া হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি। ফুলকপি ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং বাঁধাকপি ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত।

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর গুলশান, মালিবাগ, বাড্ডা, রামপুরা, শেওড়াপাড়া ও তালতলা এলাকায় বাজার ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যে কারণে দামটা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে একটু বেশি।

বাজারে শিম, ফুলকপি, পাতাকপি, মূলা, ঢেঁড়সসহ প্রায় সব ধরনের শীতের সবজির দেখা মিলছে। রয়েছে বেগুন, পটল, ঝিঙা, করলা, টমেটো, শসা, গাজরসহ অন্যান্য সবজিও। সব সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও দাম আগের মতোই বেশ চড়া। ফলে সবজির বাজারে এসে স্বস্তি মিলছে না ক্রেতাদের।

বাজারগুলোতে শীতকালীন সবজি শিম ৩০০ টাকা কেজি, ফুলকপি ৭০ থেকে ৮০ টাকা পিস, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, গাজর ১৬০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা এবং জলপাই ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে লেবুর হালি ২০ থেকে ৫০ টাকা, ধনে পাতা কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, কাঁচা কলা হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায় এবং মিষ্টি কুমড়া কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে লাল শাক ১৫ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৪০ টাকা, মূলা শাক ১৫ টাকা, পালং শাক ১৫ থেকে ২০ টাকা, কলমি শাক ১০টাকা, পুঁই শাক ৩০ টাকা এবং ডাটা শাক ২০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। বাজারগুলোতে সপ্তাহ ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজ ১২০ টাকা, আদা ২৮০ টাকা, রসুন ২২০ টাকা এবং আলু কেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে গ্রীষ্মকালীন সবজি কচুরমুখী ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকায়, প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধুন্দুল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা শসা ৮০ থেকে ১০০ টাকা এবং কাঁচামরিচ কেজিতে ১৪০ টাকা বেড়ে প্রকারভেদে ৩৬০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সরবরাহ কম থাকায় কাঁচামরিচের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা। তারা জানান, গত সপ্তাহের তুলনায় কাঁচামরিচ কেজিতে ১০০ টাকা ওপরে দাম বেড়েছে। কাঁচামরিচ বিক্রি করছেন না বলেও জানান অনেক ব্যবসায়ী।

রফিকুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে প্রায় সব সবজির দাম ৫০-৬০ টাকার ওপরে। সবজির এত দাম হলে স্বস্তি মেলে কী করে? সবজিতে বাজার ভরপুর। অথচ দামের বেলায় মনে হয় এগুলো বিরল প্রজাতির সবজি। দু-তিন রকম সবজি কিনলেই এক-দেড়শো টাকার ওপরে চলে যাচ্ছে। মাছ-মাংস বাদ দিয়ে সবজি কিনে খাব তারও উপায় নেই। মোটকথা আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষ খুব কষ্টে আছে।

তিনি বলেন, আমরা তো ভেবেছিলাম নতুন সরকার ঠিকভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই হচ্ছে না। বাজার এখনও সিন্ডিকেটের দখলেই রয়ে গেছে।

মওদুদ আহমদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, বর্তমান বাজারে আমাদের মতো ব্যাচেলর শিক্ষার্থীরা খুবই কষ্টে আছে। কোনো কিছুরই দাম স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। কোনোভাবেই মিলরেট (খাবার খরচ) ১০০ টাকার নিচে আসে না, যেখানে আগে অনেক ভালো খেয়েও ৫০/৬০ টাকার বেশি হতো না। দুইটা টিউশনি করাই, সবকিছুর দাম বাড়লেও তো আমাদের আয়ের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।

খুচরা, পাইকারি ও উৎপাদক পর্যায়ে ডিম, মুরগির দাম সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। মূল্য বেঁধে দেওয়ার ১৯ দিন পেরোলেও বাজারে আগের সেই বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার-সোনালি মুরগি। সরকারি দামের চেয়ে ১০ টাকা বেশিতে ব্রয়লার আর ২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সোনালি মুরগি।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৯০ টাকায় আর সোনালি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি লেয়ার মুরগি প্রতি কেজি ৩১০ টাকা, কক কেজি ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা। এছাড়া দেশি মুরগি আগের মতো ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

যদিও শুধু ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। বাকিগুলোর দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করে দিলেও তা বাজারে প্রতি কেজি ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা নির্ধারণ করে দেওয়া দামের চেয়ে ১০ টাকারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে।

একইভাবে সোনালি মুরগির প্রতি কেজির দাম ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৯০ টাকা। যা নির্ধারণ করে দেওয়া দামের চেয়ে কেজিতে ২০ টাকারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর মহাখালী বাজারে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী হাবিবুর রহমান। মুরগির দাম বিষয়ে তিনি বলেন, গণমাধ্যমের খবরে শুনেছিলাম ব্রয়লার আর সোনালি মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু বাজারে এর কোনো প্রভাব একবারও দেখলাম না। ‌ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা কেজিতে, আর সোনালি মুরগি কিনলাম প্রতি কেজি ২৯০ টাকায়। নির্ধারণ করে দেওয়া দামের সঙ্গে বাজারের দামের কোনো মিল নেই। ২০ টাকা বেশি প্রতি কেজিতে নিচ্ছে অথচ এটা মনিটরিং করার কেউ নেই। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। শুধু দাম নির্ধারণ করে দিয়েই চুপ আছে সংশ্লিষ্টরা।

মুরগির দাম বাড়তি বিষয়ে রামপুরা বাজারের আব্দুল মালেক নামের এক বিক্রেতা বলেন, বাজারে মুরগির চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। যে কারণে পাইকারি বাজার থেকেও আমাদের বাড়তি দামে মুরগি কিনতে হচ্ছে। তাই কিছুটা বেশি দামে খুচরা বাজারে আমাদের বিক্রিও করতে হচ্ছে।

এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর মুরগি ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। সেখানকার মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ রেয়াজুল হকের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়, ডিম খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা এবং ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি চিঠিতে মুরগি (সোনালি ও ব্রয়লার) ও ডিমের নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্য (উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে) সঠিকভাবে বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী ডিমের মূল্য উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ০১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। কেজিপ্রতি সোনালি মুরগি উৎপাদক পর্যায়ে ২৬০ টাকা ৭৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ২৬৪ টাকা ৫৭ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর কেজি প্রতি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদক পর্যায়ে ১৬৮ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১৭২ টাকা ৬১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।

একইসঙ্গে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সব বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ছাড়াও বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন, ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল, বাংলাদেশ পোলট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ, অ্যানিমেল হেলথ কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ অ্যাগ্রো ফিড ইনগ্রেডিয়েটস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ১৯ দিনেও মূল্য নির্ধারণের কার্যকারিতা বাজারে দেখা যায়নি।

বাজারগুলোতে গরুর মাংস কেজি প্রতি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১১৫০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে বাজারে সরবরাহ বাড়লেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ মাছ। এসব বাজারগুলোতে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা এবং ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের মাছ ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা, ১ কেজি ওজনের ইলিশ ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা এবং দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ২২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে এক কেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকায়, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৩০ থেকে ৫০০ টাকায়, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১১০০ টাকা, মৃগেল ৩২০ থেকে ৪০০ টাকায়, চাষের পাঙাস ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ১৪০০ টাকায়, বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায়, কাতল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়, পোয়া মাছ ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়, মলা ৫৫০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকায়, পাঁচ মিশালি মাছ ২২০ টাকায়, রূপচাঁদা ১২০০ টাকা, বাইম মাছ ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, দেশি কই ১২০০ টাকা, সোল মাছ ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ টাকা এবং কাইকলা মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এসব বাজারে ৫ কেজি সোয়াবিন তেল ৮১৮ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, মিনি কেট চাল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা এবং নাজির সের ৭৫ থেকে ৮২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।