ঢাকা ০১:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

তিন শীর্ষ ঋণ গ্রহীতা অর্থ ফেরত না দিলে মূলধন হারাবে ১৬ ব্যাংক

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:৪৪:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৩৮০ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শুধুমাত্র উৎপাদন শিল্পে খেলাপি ঋণে আটকে আছে ৭ হাজার ৫৬৯ বিলিয়ন টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, আর মাত্র তিন শতাংশ বাড়লেই পাঁচটি ব্যাংক তাদের সিআরএআর সংরক্ষণে ব্যর্থ হবে। এমনকি তিন শীর্ষ ঋণ গ্রহীতা অর্থ ফেরত না দিলে ১৬টি ব্যাংক হারাবে তাদের মূলধন। নাম না প্রকাশের শর্তে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘রাইট অফ’ এ যেতে পারছে না ব্যাংকগুলো।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুফু, অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল চাচা আর বেনজীর আহমেদ কাজিন। ব্যাংকপাড়ায় এমনটাই পরিচয় পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের।

বিগত সরকারের শেষ ১৩ বছরে পুঁজিবাজার ও ব্যাংক খাতে তার দখলদারিত্বে পদ্মা ব্যাংকে ধস নামে। এমনকি বিভিন্ন ব্যাংকেরও পরিচালনা পর্ষদের কারসাজি ও নিজের লোক বসানোর অভিযোগও রয়েছে। সালমান এফ রহমান, বিএবির চেয়ারম্যান ও সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সাথে সখ্যতায় ভুল বিনিয়োগ কারসাজিতেও নাম আছে। আছে বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগের নামে অর্থ লোপাটের অভিযোগ।

দুদকের মামলায় অবৈধ সম্পদের পরিমাণ প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার মামলা থাকলেও আর্থিক খাতে নেই কোনো অভিযোগ। কাজিন বেনজিরের মতো সবার চোখে ধুলো দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন চৌধুরী নাফিজ।

বিগত সরকারের লাগামহীন সুবিধার সুযোগে এখন দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন ব্যাংক্যারর্স আর ব্যবসায়ীরা। পালাতে গিয়ে ধরাও পড়েছেন কেউ কেউ। কিন্তু অবাধ সুযোগ দিয়ে অর্থলোপটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বা আটকানোর সুযোগ যেনো বন্ধ করে রেখে গেছেন সাবেক গভর্নর। মাত্র দুই শতাংশ দিয়েই যখন ইচ্ছাকৃত খেলাপি তখন পুনঃতফসিল করার সুযোগে গত বছর প্রি-শক পরিস্থিতিতে পড়ে ব্যাংকখাত।

ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক মামুন রশীদ বলেন, ‘আমাদের যেহেতু দেউলিয়া আইনটি নেই সেক্ষেত্রে ব্যাংকের হাতে তো কোনো অস্ত্র নেই। এখানে রিশিডিউল আইন বলে ১৫ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিতে হয়, আর ওইটা নাকি মাত্র দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দেয় বড় লোনগুলো।’

বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটসের মহাপচিালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘২০১৫ সালেই বলা ছিল যে, এগুলোকে পুনরায় আবার রিশিডিউল করা হবে না। তারপর তো লোটাস কামাল সাহেব এসে আবার শুরু করে দিলেন। উনি যে শুরু করেছে এটা আরও মারাত্মকভাবে খারাপ। কারণ সমস্ত আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাক্টিস আমরা ভঙ্গ করে করে তাদেরকে সুবিধাগুলো দিয়েছি।’

মামুন রশীদ বলেন, ‘যেকোনো একটা ফার্মকে দিয়ে এই ধরনের সুযোগ-সুবিধাগুলোর রিভিউ করানো দরকার। দেখা প্রয়োজন যে, বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এ ধরনের স্পেশাল সুযোগ-সুবিধা দেয়ায় কোনো লাভ হয়েছে কি না?’

সরকারের আস্থাভাজনদের নিয়ন্ত্রণের সুযোগে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে প্রি-শক পরিস্থিতিতে দেশের ১০টি ব্যাংক ন্যূনতম সিআরএআর রাখতে পারেনি। বছর শেষে অভিঘাত পর্যালোচনায় আসে মাত্র তিন গ্রহীতার কাছে আটকে আছে ১০ ব্যাংকের মূলধন। যা ফেরাতে না পারলে ১০ শতাংশ হারে ব্যাংকগুলো নূন্যতম সিআরএআর সংরক্ষণ করতে ব্যার্থ হবে।

এখন শিল্প খাতে খেলাপি ঋণে আটকে আছে ৫৪.৩২ শতাংশের বেশি অর্থ। এরপরই আছে পোশাক খাত। সাবেক ব্যাংকাররা বলছেন, ঋণ খেলাপিদের এমন সুযোগ বন্ধ না করা হলে পুরো ঋণের অর্থ না দিলে হুমকিতে পড়বে এসব ব্যাংক। এছাড়া পাওয়া যাবে না ব্যাংকখাতের মূল চিত্র।

ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘শুধু ক্লাসিফাইড লোন কতটুকু, এটা দেখলে তো হবে না। রিশিডিউল করা হচ্ছে, রাইট অফ করা হচ্ছে এবং নিয়মের বাইরেও তো কাজ করা হচ্ছে।’

এদিকে যে খেলাপি ঋণ রয়েছে তা আর মাত্র তিন শতাংশ বাড়লে পাঁচটি ব্যাংক তাদের সিআরএআর রাখতে ব্যর্থ হবে। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞায়ন পরিবর্তনের সাথে সাথে আদালতে আটকে থাকা অমীমাংসিত মামলারও নিষ্পত্তি করে ব্যাংকে টাকা ফেরানোর পরামর্শ অর্থনীতি বিশ্লেষকদের।

ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক মামুন রশীদ বলেন, ‘ব্যাংকগুলোকে বলা উচিত, নির্দিষ্ট ব্যাংকগুলোকে অবিলম্বে অর্থঋণ আদালতে মামলা করার জন্য। দ্বিতীয় হচ্ছে, অর্থঋণ আদালতে শুধু মামলা করলেও লাভ হবে না, এর সাথে সাথে ওই সমস্ত দুষ্টু ঋণ গ্রহীতারা, খেলাপি ঋণ গ্রহীতারা হাইকোর্টে চলে যাবে।’

গত বছরের ডিসেম্বর শেষে দেশে ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমান দাঁড়িয়েছে ৪.৮৭ লাখ কোটি টাকা। ২০২২ সালে যা ছিল ৩.৭৮ লাখ কোটি টাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন

তিন শীর্ষ ঋণ গ্রহীতা অর্থ ফেরত না দিলে মূলধন হারাবে ১৬ ব্যাংক

আপডেট সময় : ১২:৪৪:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪

শুধুমাত্র উৎপাদন শিল্পে খেলাপি ঋণে আটকে আছে ৭ হাজার ৫৬৯ বিলিয়ন টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, আর মাত্র তিন শতাংশ বাড়লেই পাঁচটি ব্যাংক তাদের সিআরএআর সংরক্ষণে ব্যর্থ হবে। এমনকি তিন শীর্ষ ঋণ গ্রহীতা অর্থ ফেরত না দিলে ১৬টি ব্যাংক হারাবে তাদের মূলধন। নাম না প্রকাশের শর্তে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘রাইট অফ’ এ যেতে পারছে না ব্যাংকগুলো।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুফু, অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল চাচা আর বেনজীর আহমেদ কাজিন। ব্যাংকপাড়ায় এমনটাই পরিচয় পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের।

বিগত সরকারের শেষ ১৩ বছরে পুঁজিবাজার ও ব্যাংক খাতে তার দখলদারিত্বে পদ্মা ব্যাংকে ধস নামে। এমনকি বিভিন্ন ব্যাংকেরও পরিচালনা পর্ষদের কারসাজি ও নিজের লোক বসানোর অভিযোগও রয়েছে। সালমান এফ রহমান, বিএবির চেয়ারম্যান ও সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সাথে সখ্যতায় ভুল বিনিয়োগ কারসাজিতেও নাম আছে। আছে বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগের নামে অর্থ লোপাটের অভিযোগ।

দুদকের মামলায় অবৈধ সম্পদের পরিমাণ প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার মামলা থাকলেও আর্থিক খাতে নেই কোনো অভিযোগ। কাজিন বেনজিরের মতো সবার চোখে ধুলো দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন চৌধুরী নাফিজ।

বিগত সরকারের লাগামহীন সুবিধার সুযোগে এখন দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন ব্যাংক্যারর্স আর ব্যবসায়ীরা। পালাতে গিয়ে ধরাও পড়েছেন কেউ কেউ। কিন্তু অবাধ সুযোগ দিয়ে অর্থলোপটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বা আটকানোর সুযোগ যেনো বন্ধ করে রেখে গেছেন সাবেক গভর্নর। মাত্র দুই শতাংশ দিয়েই যখন ইচ্ছাকৃত খেলাপি তখন পুনঃতফসিল করার সুযোগে গত বছর প্রি-শক পরিস্থিতিতে পড়ে ব্যাংকখাত।

ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক মামুন রশীদ বলেন, ‘আমাদের যেহেতু দেউলিয়া আইনটি নেই সেক্ষেত্রে ব্যাংকের হাতে তো কোনো অস্ত্র নেই। এখানে রিশিডিউল আইন বলে ১৫ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিতে হয়, আর ওইটা নাকি মাত্র দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দেয় বড় লোনগুলো।’

বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটসের মহাপচিালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘২০১৫ সালেই বলা ছিল যে, এগুলোকে পুনরায় আবার রিশিডিউল করা হবে না। তারপর তো লোটাস কামাল সাহেব এসে আবার শুরু করে দিলেন। উনি যে শুরু করেছে এটা আরও মারাত্মকভাবে খারাপ। কারণ সমস্ত আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড প্র্যাক্টিস আমরা ভঙ্গ করে করে তাদেরকে সুবিধাগুলো দিয়েছি।’

মামুন রশীদ বলেন, ‘যেকোনো একটা ফার্মকে দিয়ে এই ধরনের সুযোগ-সুবিধাগুলোর রিভিউ করানো দরকার। দেখা প্রয়োজন যে, বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এ ধরনের স্পেশাল সুযোগ-সুবিধা দেয়ায় কোনো লাভ হয়েছে কি না?’

সরকারের আস্থাভাজনদের নিয়ন্ত্রণের সুযোগে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে প্রি-শক পরিস্থিতিতে দেশের ১০টি ব্যাংক ন্যূনতম সিআরএআর রাখতে পারেনি। বছর শেষে অভিঘাত পর্যালোচনায় আসে মাত্র তিন গ্রহীতার কাছে আটকে আছে ১০ ব্যাংকের মূলধন। যা ফেরাতে না পারলে ১০ শতাংশ হারে ব্যাংকগুলো নূন্যতম সিআরএআর সংরক্ষণ করতে ব্যার্থ হবে।

এখন শিল্প খাতে খেলাপি ঋণে আটকে আছে ৫৪.৩২ শতাংশের বেশি অর্থ। এরপরই আছে পোশাক খাত। সাবেক ব্যাংকাররা বলছেন, ঋণ খেলাপিদের এমন সুযোগ বন্ধ না করা হলে পুরো ঋণের অর্থ না দিলে হুমকিতে পড়বে এসব ব্যাংক। এছাড়া পাওয়া যাবে না ব্যাংকখাতের মূল চিত্র।

ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘শুধু ক্লাসিফাইড লোন কতটুকু, এটা দেখলে তো হবে না। রিশিডিউল করা হচ্ছে, রাইট অফ করা হচ্ছে এবং নিয়মের বাইরেও তো কাজ করা হচ্ছে।’

এদিকে যে খেলাপি ঋণ রয়েছে তা আর মাত্র তিন শতাংশ বাড়লে পাঁচটি ব্যাংক তাদের সিআরএআর রাখতে ব্যর্থ হবে। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞায়ন পরিবর্তনের সাথে সাথে আদালতে আটকে থাকা অমীমাংসিত মামলারও নিষ্পত্তি করে ব্যাংকে টাকা ফেরানোর পরামর্শ অর্থনীতি বিশ্লেষকদের।

ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক মামুন রশীদ বলেন, ‘ব্যাংকগুলোকে বলা উচিত, নির্দিষ্ট ব্যাংকগুলোকে অবিলম্বে অর্থঋণ আদালতে মামলা করার জন্য। দ্বিতীয় হচ্ছে, অর্থঋণ আদালতে শুধু মামলা করলেও লাভ হবে না, এর সাথে সাথে ওই সমস্ত দুষ্টু ঋণ গ্রহীতারা, খেলাপি ঋণ গ্রহীতারা হাইকোর্টে চলে যাবে।’

গত বছরের ডিসেম্বর শেষে দেশে ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমান দাঁড়িয়েছে ৪.৮৭ লাখ কোটি টাকা। ২০২২ সালে যা ছিল ৩.৭৮ লাখ কোটি টাকা।