ঢাকা ০৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১২:১৬:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৩৭৪ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী আর নেই। তিনি আজ (৫ অক্টোবর) রাত ৩টা ১৫ মিনিটে নিজের প্রতিষ্ঠিত উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। (ইন্নলিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন।)

তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। ফুসফুসে সংক্রমণ হওয়ায় গত ২ অক্টোবর সকালে বি. চৌধুরীকে উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেদিন বি. চৌধুরীর মেয়ে ডা. শায়লা চৌধুরী জানান, তাৱর বাবা আগে থেকেই স্কিমিক হার্ট ডিজিজে ভূগছিলেন।

বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী দেশের খ্যাতিমান চিকিৎসক ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ বি. চৌধুরী ১৯৩০ সালের ১১ অক্টোবর কুমিল্লা শহরে (প্রখ্যাত ‘মুন্সেফ বাড়ি) নানাবাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাবা অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী কৃষক প্রজা পার্টির সহ-সভাপতি, যুক্তফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার মজিদপুর দয়হাটা গ্রামে।

বি. চৌধুরী একজন কৃতি ছাত্র। ১৯৪৭ সালে ঢাকার বিখ্যাত স্কুল সেন্ট গ্রেগরি থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৫৪-৫৫ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। সব পরীক্ষাতেই তিনি মেধা তালিকায় ছিলেন।

বি. চৌধুরী যুক্তরাজ্যের তিনটি রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস্ লন্ডন, এডিনবার্গ ও গ্লাসগো থেকে নির্বাচিত ফেলো-এফ.আর.সি.পি এবং বাংলাদেশের (সম্মানিত) এফ.সি.পি.এস।

তিনি রোগ বিজ্ঞানে দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় অধ্যাপক, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং রোগ বিজ্ঞান বিষয়ে টিভি অনুষ্ঠানের রেকর্ডঅর্জনকারী উপস্থাপক। সফল পার্লামেন্টেরিয়ান বি. চৌধুরী জাতিসংঘে তিন বার বক্তৃতা দেন। তিনি স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং বহু গ্রন্থের প্রণেতা।

বি. চৌধুরী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের অনুরোধে ১৯৭৮ সালে রাজনীতি শুরু করেন। তিনি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে ১৯৭৯ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং কেবিনেট মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে তিনি দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং প্রথমে শিক্ষামন্ত্রী ও পরে সংসদ উপনেতা হন। ১৯৯৬ সালে তিনি সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০০১ সালে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং একই বছরের অক্টোবর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বেগম বিএনপি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।

অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক কারণে ২০০২ সালের ২১ জুন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন।

বি. চৌধুরী ২০০৪ সালের ৮ মে বিকল্পধারা বাংলাদেশ নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। এতোদিন তিনি দলটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

তাঁর সহধর্মিনীর নাম হাসিনা ওয়ার্দা চৌধুরী। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, দুই মেয়ে এবং নাতি-নাতনীসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার বড় মেয়ে মুনা চৌধুরী পেশায় একজন ব্যারিস্টার। ছোট মেয়ে শায়লা চৌধুরী পেশায় চিকিৎসক এবং ঢাকার উত্তরা মহিলা মেডিক্যাল কলেজে অধ্যাপনা করেন। একমাত্র ছেলে মাহী. বি. চৌধুরী রাজনীতিবিদ এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।

জানাজা কখন-কোথায়
প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর প্রথম নামাজে জানাজা শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৮টায় উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় নামাজে জানাজা বাদ জোহর বারিধারা কূটনৈতিক এলাকার ৮ নম্বর সড়কে অবস্থিত বায়তুল আতিক জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে।

রোববার (৬ অক্টোবর) সকাল ১০টায় মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর স্টেডিয়ামে তৃতীয় নামাজে জানাজা এবং বাদ জোহর গ্রামের বাড়ি মজিদপুর দয়হাটায় চতুর্থ নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর প্রেস সচিব জাহাঙ্গীর আলম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী আর নেই

আপডেট সময় : ১২:১৬:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪

বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী আর নেই। তিনি আজ (৫ অক্টোবর) রাত ৩টা ১৫ মিনিটে নিজের প্রতিষ্ঠিত উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। (ইন্নলিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন।)

তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। ফুসফুসে সংক্রমণ হওয়ায় গত ২ অক্টোবর সকালে বি. চৌধুরীকে উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেদিন বি. চৌধুরীর মেয়ে ডা. শায়লা চৌধুরী জানান, তাৱর বাবা আগে থেকেই স্কিমিক হার্ট ডিজিজে ভূগছিলেন।

বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী দেশের খ্যাতিমান চিকিৎসক ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ বি. চৌধুরী ১৯৩০ সালের ১১ অক্টোবর কুমিল্লা শহরে (প্রখ্যাত ‘মুন্সেফ বাড়ি) নানাবাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাবা অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী কৃষক প্রজা পার্টির সহ-সভাপতি, যুক্তফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার মজিদপুর দয়হাটা গ্রামে।

বি. চৌধুরী একজন কৃতি ছাত্র। ১৯৪৭ সালে ঢাকার বিখ্যাত স্কুল সেন্ট গ্রেগরি থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৫৪-৫৫ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। সব পরীক্ষাতেই তিনি মেধা তালিকায় ছিলেন।

বি. চৌধুরী যুক্তরাজ্যের তিনটি রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস্ লন্ডন, এডিনবার্গ ও গ্লাসগো থেকে নির্বাচিত ফেলো-এফ.আর.সি.পি এবং বাংলাদেশের (সম্মানিত) এফ.সি.পি.এস।

তিনি রোগ বিজ্ঞানে দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় অধ্যাপক, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং রোগ বিজ্ঞান বিষয়ে টিভি অনুষ্ঠানের রেকর্ডঅর্জনকারী উপস্থাপক। সফল পার্লামেন্টেরিয়ান বি. চৌধুরী জাতিসংঘে তিন বার বক্তৃতা দেন। তিনি স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং বহু গ্রন্থের প্রণেতা।

বি. চৌধুরী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের অনুরোধে ১৯৭৮ সালে রাজনীতি শুরু করেন। তিনি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে ১৯৭৯ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং কেবিনেট মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে তিনি দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং প্রথমে শিক্ষামন্ত্রী ও পরে সংসদ উপনেতা হন। ১৯৯৬ সালে তিনি সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০০১ সালে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং একই বছরের অক্টোবর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বেগম বিএনপি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।

অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক কারণে ২০০২ সালের ২১ জুন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন।

বি. চৌধুরী ২০০৪ সালের ৮ মে বিকল্পধারা বাংলাদেশ নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। এতোদিন তিনি দলটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

তাঁর সহধর্মিনীর নাম হাসিনা ওয়ার্দা চৌধুরী। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, দুই মেয়ে এবং নাতি-নাতনীসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার বড় মেয়ে মুনা চৌধুরী পেশায় একজন ব্যারিস্টার। ছোট মেয়ে শায়লা চৌধুরী পেশায় চিকিৎসক এবং ঢাকার উত্তরা মহিলা মেডিক্যাল কলেজে অধ্যাপনা করেন। একমাত্র ছেলে মাহী. বি. চৌধুরী রাজনীতিবিদ এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।

জানাজা কখন-কোথায়
প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর প্রথম নামাজে জানাজা শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৮টায় উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় নামাজে জানাজা বাদ জোহর বারিধারা কূটনৈতিক এলাকার ৮ নম্বর সড়কে অবস্থিত বায়তুল আতিক জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে।

রোববার (৬ অক্টোবর) সকাল ১০টায় মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর স্টেডিয়ামে তৃতীয় নামাজে জানাজা এবং বাদ জোহর গ্রামের বাড়ি মজিদপুর দয়হাটায় চতুর্থ নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর প্রেস সচিব জাহাঙ্গীর আলম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।