আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বাজারভিত্তিক সুদহার নির্ধারণের নির্দেশ
- আপডেট সময় : ০৩:৩১:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪
- / ৩৭০ বার পড়া হয়েছে
ব্যাংকের পর ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে (এনবিএফআই) ঋণ ও আমানতের সুদহার বাজারভিত্তিক নির্ধারণ করতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সুদহারের সঙ্গে অতিরিক্ত কোনো সার্ভিস চার্জ আরোপ বা আদায় করা যাবে না। এতদিন স্মার্ট ভিত্তিক সুদহার নির্ধারণ করত এসব প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ (ডিএফআইএম) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা অনুসরণের মাধ্যমে ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর ঋণ, লিজ, বিনিয়োগ ও আমানতের সুদ ও মুনাফার হার সম্পূর্ণরূপে বাজারভিত্তিক করার লক্ষ্যে স্মার্ট ভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থা প্রত্যাহার করা হলো। ঋণের চাহিদা ও ঋণযোগ্য তহবিলের জোগানের ভিত্তিতে ঋণ, লিজ, বিনিয়োগ ও আমানতের সুদ ও মুনাফার হার নির্ধারিত হবে।
বাজারভিত্তিক সুদহার নির্ধারণে যেসব নির্দেশ প্রযোজ্য হবে সেগুলো হলো– ১) আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণের খাতভিত্তিক সুদহার ও আমানতের সুদহার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে।
২) ঝুঁকি বিবেচনায় গ্রাহক ভেদে নির্ধারিত সীমার মধ্যে সুদ ও মুনাফার হারে ১ শতাংশ পর্যন্ত তারতম্য করা যাবে।
৩) বাজার বহির্ভূত হারে (আউট অব মার্কেট রেট) ঋণ, লিজ, বিনিয়োগের ওপর সুদ ও মুনাফা আরোপ না করা এবং আমানতের ওপর সুদ বা মুনাফা প্রদান না করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
৪) ঋণের মঞ্জুরিপত্রে ঋণের সুদহারের ধরন অর্থাৎ তা অপরিবর্তনশীল (ফিক্সড রেট) বা পরিবর্তনশীল (ফ্লোটিং রেট) কি না উল্লেখ থাকতে হবে।
৫) পরিবর্তনশীল সুদহারের ক্ষেত্রে ঋণ বিতরণের ৬ মাসের মধ্যে মঞ্জুরিপত্রে নির্ধারিত সুদহার বৃদ্ধি করা যাবে না; পরবর্তীতে প্রতি ৬ মাস অন্তর বাজার সুদহারের ভিত্তিতে সুদহার পুনর্নির্ধারণ করা যাবে।
৬) কোনো ঋণ অথবা ঋণের কিস্তি সম্পূর্ণ বা আংশিক মেয়াদোত্তীর্ণ (ওভার ডিউ) হিসেবে চিহ্নিত হলে যে সময়ের জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ হবে, ওই মেয়াদোত্তীর্ণ কিস্তির ওপর নিয়মিত সুদহারের অতিরিক্ত সর্বোচ্চ ০.৫০ শতাংশ দণ্ড সুদ আরোপ করা যাবে। তবে দণ্ড সুদ আরোপের ক্ষেত্রে গ্রাহকভিত্তিক পরিচালক পর্ষদের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে।
৭) ঘোষিত সুদহারের অতিরিক্ত কোনো সার্ভিস চার্জ আরোপ বা আদায় করা যাবে না।
৮) বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকারের গঠিত প্রণোদনা প্যাকেজ, বিশেষ তহবিল, পুনঃঅর্থায়ন, প্রাক-অর্থায়ন তহবিলের আওতায় প্রদত্ত ঋণের সুদহার নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট তহবিলের জন্য প্রণীত নীতিমালা প্রযোজ্য হবে।
এছাড়া ইসলামী শরীয়াহ ভিত্তিক পরিচালিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের দেয়া বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উল্লিখিত নির্দেশনা অনুসরণ করে মুনাফা নির্ধারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সংশ্লিষ্ট মাসের ৭ তারিখের মধ্যে ওই মাসের ঘোষিত সুদহার বিবরণী রেশনালাইজড ইনপুট টেম্পলেট ব্যবহার করে ওয়েব পোর্টালে আপলোড করার বিষয়টি চলমান থাকবে বলে নির্দেশনায় বলা হয়েছে।
এই নির্দেশনার মাধ্যমে ঋণ-আমানতের স্মার্ট রেট সম্পর্কিত আগে জারি করা সার্কুলারগুলোর নির্দেশনা রহিত করা হয়েছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন, ২০২৩ এর ৪১(২) (ঘ) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে দেশে কার্যরত সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এর আগে চলতি বছরের ৮ মে এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছিল, ব্যাংক ঋণের বাজারভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থা প্রবর্তনের অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ হিসেবে ছয় মাসের মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিলের (স্মার্ট) সঙ্গে নির্ধারিত মার্জিন যোগ করে ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার নির্ধারণ করতে হবে।
তবে বর্তমানে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা অনুসরণের মাধ্যমে ব্যাংক ঋণের সুদহার সম্পূর্ণরূপে বাজারভিত্তিক করার লক্ষ্যে ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‘স্মার্ট’ ভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থা প্রত্যাহার করা হলো। এক্ষেত্রে ব্যাংকখাতে ঋণের চাহিদা ও ঋণযোগ্য তহবিলের জোগান সাপেক্ষে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণের সুদহার নির্ধারিত হবে। এ ছাড়া ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত নির্দেশনা মানতে হবে।