নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ-শেরপুরের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
- আপডেট সময় : ০১:০৫:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪
- / ৩৭৫ বার পড়া হয়েছে
বৃষ্টি না থাকায় শেরপুরে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। তবে এখনো পানিবন্দি রয়েছেন অনেক মানুষ। অন্যদিকে পানি কমতে শুরু করায় ভেসে উঠছে ক্ষতির চিহ্ন। দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার ও সুপেয় পানির সংকট।
শেরপুরে বন্যার পানির উচ্চতা ছিল প্রায় ১৫ ফুট, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। গত সপ্তাহে মেঘালয়ের ঢলের সঙ্গে প্রায় ৪৫০ মিলিমিটার বৃষ্টির পানি যোগ হলে বন্যা তীব্রতর হয়। এতে ভোগাই, মহারশি, কংশ নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গবেষকেরা বলছেন, মৌসুমী বায়ু যাওয়ার আগে অতি বৃষ্টির জন্যই দেড় মাসে দুবার বন্যা হয়েছে ময়মনসিংহ, ফেনী ও শেরপুরে।
অক্টোবরের শুরুতে শেরপুর জেলার উজানে মেঘালয় পাহাড়ের আশপাশে অতিভারী বৃষ্টি হয়। উজান থেকে আসা এই পানি সাধারণত চেরাপুঞ্জি হয়ে সুনামগঞ্জের হাওরে আসে। তবে এবারের এই ঢল অর্ধেকই দক্ষিণে ভোগাই, মহারশি, কংশ নদী দিয়ে শেরপুর, নালিতাবাড়ী ও নেত্রকোণা দিয়ে প্রবাহিত হয়।
সেই সাথে দুই দিনে প্রায় সাড়ে চার শ মিলিমিটার বৃষ্টিতে বন্যার তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। ময়মনসিংহ, শেরপুরের নালিতাবাড়ী, ধোবাউরা ও হালুয়াঘাটসহ কিছু এলাকা ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়।
তবে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র বলছে, জিঞ্জিরাম ও সোমেশ্বরীর পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকায় জামালপুর ও নেত্রকোণার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে আরও কয়েক দিন লাগতে পারে।
চারদিনের বন্যায় এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। কৃষি বিভাগ বলছে, পৌনে দুই লাখ কৃষকের প্রায় পঞ্চাশ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে এবারের বন্যায়। বন্যায় শেরপুরে ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা। তিন হাজার মাছের ঘের ভেসে গিয়ে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ত্রিশ কোটি টাকা। বন্যার কারণে জেলার ২৪২টি প্রাথমিক ও ৮৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা দিয়েছে প্রশাসন।
ঝিনাইগাতী উপজেলাতে পানি কমলেও, এখনো ঘরে পানি রয়েছে নকলা ও নালিতাবাড়ীতে উপজেলাতে। স্থানীয় প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও বিভিন্ন দপ্তর। তবে সব জায়গায় নৌকা না থাকায়, ত্রাণ সরবরাহে দেরি হচ্ছে।
এদিকে, নেত্রকোণায় টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে জেলার সদর, দুর্গাপুর, কলমাকান্দা,পূর্বধলা, বারহাট্টায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে দুর্ভোগে রয়েছেন প্রায় এক লাখ পানিবন্দি মানুষ। মানুষের খাবারের পাশাপাশি গো খাদ্য সংকট, বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। গ্রামীণ সড়ক ডুবে গেছে। জেলার অনেক জায়গায় আমন ও শাক-সবজি খেত তলিয়ে গেছে। এতে করে কৃষকেরা পড়েছেন বিপাকে।
এদিকে দুর্গম এলাকার বানভাসি মানুষেরা ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টা স্বীকার করে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, বন্যার আকার বেশি হওয়ায় তারা জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
নেত্রকোণা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া তাবাসসুম বলেন, ‘আসলে একই সাথে চারটি ইউনিয়ন এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আমরা প্রত্যেকটি বাড়ি বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করছি। গত দুই-তিন দিন ধরে আমাদের ত্রাণ কার্যক্রম চলছে। কিছু অভিযোগ হয়ত থাকতে পারে। আমরা সেই অভিযোগগুলোর প্রত্যেকটি আমলে নিচ্ছি এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ সকলের সহযোগিতায় এই দুর্যোগটি মোকাবিলার চেষ্টা করছি।’
বন্যা কবলিত এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া পুকুরের মাছ পানিতে বের হয়ে গেছে। গরু-বাছুরের কষ্ট হচ্ছে। মানুষের রান্নাবান্না হচ্ছে না, চিরা-মুড়ি খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। বাড়িঘর তো পানির তলে রয়েছেই।’
জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাব ছিল সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে। আবার এই মাসের মাঝামাঝিতে মৌসুমী বায়ু বিদায় নেবে। তাই শেষ সময়ে বিক্ষিপ্তভাবে সারা দেশে বৃষ্টি হলেও টানা বর্ষণের সম্ভাবনা নেই। তবে দুই থেকে তিনটি লঘু চাপের সম্ভাবনা আছে বঙ্গোপসাগরে। যার একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
এদিকে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র বলছে, ৭২ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র যমুনার পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে। তিস্তা, পদ্মা ও মেঘনার পানি বিপৎসীমার অনেক নিচে থাকায় বড় বন্যার শঙ্কা নেই।