ড. ইউনূসকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য প্রেরণা বলল আরএসএফ
- আপডেট সময় : ০২:৫৮:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪
- / ৪০৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশে সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)। গত ৮ অক্টোবর সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বিষয়ে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি চিঠি লেখে সংস্থাটি। চিঠিতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং তথ্যের অধিকার নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের জন্য সরকারকে আহ্বান জানান তারা। চিঠিটি নিচে তুলে ধরা হলো:
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) এর পক্ষ থেকে, আমরা আপনাকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য পুনরায় আমাদের অভিনন্দন জানাতে চাই। দীর্ঘদিন ধরে, আমাদের সংগঠন বাংলাদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ব্যাপক লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়ে আসছে। আমরা আশাবাদী যে বছরের পর বছর রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের পর আপনার সমঝোতার আকাঙ্ক্ষা, আপনার দেশের নাটকীয় পতনের অবসান ঘটাতে অবদান রাখবে। আরএসএফের ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স ১৮০ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৫ তম।
গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের প্রতি আপনার অবিসংবাদিত অঙ্গীকারের কথা মাথায় রেখে, আমরা বিশ্বাস করি, আপনার অন্তর্বর্তী প্রশাসন সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং তথ্যের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ঘোষণা দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের সবাই এক পরিবার। পার্থক্য বা বিভেদ করার কোনো সুযোগ নেই। সাংবাদিকরাও এর অংশ। তারাও বাংলাদেশ বিনির্মাণে সাহায্য করতে পারে। যেহেতু নতুন প্রশাসন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আইনের অস্ত্র ব্যবহারের পক্ষে নয়।
বিশেষ করে, আমরা আপনাকে সাইবার-নিরাপত্তা আইন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করার জন্য অনুরোধ করছি। আপনার পূর্বসূরি বারবার এগুলোকে পাথরঘাটা নিউজের বশির আকনসহ সাংবাদিকদের হয়রানি ও আটক করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন, যিনি সম্প্রতি তিন বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। এই আইনের অজুহাতে অন্য সাত সাংবাদিকের অন্যায়ভাবে বিচার করা হয়েছে। তাদের নাম হলো- শহিদুল আলম, হেনরি স্বপন, শফিকুল ইসলাম কাজল, সুশান্ত দাশগুপ্ত, শামসুজ্জামান শামস, মতিউর রহমান ও অধরা ইয়াসমিন।
আমরা বিশ্বাস করি এই ধরনের সংস্কারের জন্য সময়ের প্রয়োজন। আমরা আশা করি, আপনি এই আট সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আপনার পূর্বসূরির অধীনে শুরু হওয়া হামলা-মামলা দূর করতে তাত্ক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
চিঠিতে তারা উল্লেখ করেন, বর্তমানে ওই পাঁচ সাংবাদিকের বিচার কাজ চলছে এবং তাদের প্রাক্তন সাংবাদিকদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কারাগারে রাখা হয়েছে। সরকার এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার ভিত্তিহীন অভিযোগ তাদের ন্যায্য বিচারের অধিকার নিশ্চিত করেছে, যেমনটি বাংলাদেশের সংবিধানে দেওয়া আছে। বিশেষ করে, তাদের সঙ্গে নির্দোষ ধারণার নীতি অনুসারে আচরণ করা উচিত এবং স্বাধীন ব্যক্তি হিসাবে তাদের বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য মুক্ত করে দেওয়া উচিত। এজন্য ড. ইউনূসকে তার ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায় আরএসএফ।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ওই পাঁচ সাংবাদিককে মুক্ত করতে গিয়ে বিক্ষোভ ও সংবাদ প্রচারের সময় অন্তত ২০০ সাংবাদিক আহত হোন। এই ঘটনার তদন্তের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি স্বাধীন তদন্ত শুরুর আহ্বান জানানো হয় চিঠিতে। এছাড়া এসব ঘটনায় আহতদের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দিতেও সরকারকে আহ্বান জানানো হয়। বলা হয়, এই কাজ করতে পারলে প্রেসের স্বাধীনতার প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হবে। যা বিগত সরকারের সাংবাদিকদের প্রতি আচরনকে তীব্রভাবে বৈসাদৃশ্য প্রদর্শন করবে।
শেষে, এসব লক্ষ্য অর্জনে ড. ইউনূসকে পূর্ণ সমর্থনের কথা জানায় আরএসএফ।