বিষাদের সুর ছড়িয়ে নাদাল জানিয়ে দিলেন বিদায়
- আপডেট সময় : ১০:৩৮:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪
- / ৩৫৮ বার পড়া হয়েছে
চোট নিয়ে যুঝছিলেন গত কয়েক বছর। কোনো গ্র্যান্ড স্লাম এলেই তাঁকে নিয়ে শঙ্কা দেখা যেত, এবার কি খেলতে পারবেন! উইকিপিডিয়ায় তাঁর গ্র্যান্ড স্লাম পারফরম্যান্সে চোখ রাখলেই চিত্রটা খুব সহজে চোখে পড়ে, ২০২০-এর ইউএস ওপেন থেকে শুরু করে গত চার বছরের কিছু বেশি সময়ে যে ১৭টি গ্র্যান্ড স্লাম হয়েছে, তার ৯টিতেই তাঁর পারফরম্যান্সের ঘরে লেখা ‘এ’ – অ্যাবসেন্ট। অনুপস্থিত।
তা-ও চোট সারিয়ে ২০২২-এ প্রবল বিক্রমে ফিরে এসেছিলেন, টানা দুটি গ্র্যান্ড স্লাম – অস্ট্রেলিয়ান ওপেন আর ফ্রেঞ্চ ওপেনও জিতেছিলেন। কিন্তু এরপর আবার সেই চোটের চোটপাট। গত দুই বছরে ৮ গ্র্যান্ড স্লামের ৬টিই তাঁর পারফরম্যান্সের ঘরে – ‘এ!’
এত সব হিসেব-নিকেশ, গ্র্যান্ড স্লাম শুরুর আগের এত শঙ্কা-সম্ভাবনার দোলাচলের হিসেবই আর রাখলেন না নাদাল। এক ভিডিওবার্তায় আজ জানিয়ে দিলেন, আর নয়। ২০২৪ সালই কোর্টে তাঁর শেষ দেখতে পারে – ইঙ্গিতটা আগেই দিয়ে রেখেছিলেন। আজ নাদাল জানিয়ে দিলেন, আগামী মাসে ডেভিস কাপ ফাইনালে স্পেনের হয়ে নামাই হবে প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক টেনিসে তাঁর শেষবার।
১২টি ভাষায় ধন্যবাদ জানানো সে ভিডিওবার্তা টেনিসপ্রেমীদের মনটা বিষাদে ছেয়ে না দিয়ে পারে না! টেনিস যে তাঁর ইতিহাসের সেরা কিংবদন্তিদের একজনকে আর দেখবে না।
রজার ফেদেরার বিদায় জানিয়ে দিয়েছিলেন বছর দুয়েক আগে – ২০২২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বরের বিষাদী সন্ধ্যায়। বিদায়ের রাগিনী আজ অক্টোবরের এক বিকেলে বাজিয়ে দিয়ে গত দুই দশকের টেনিসের সবচেয়ে উজ্জ্বল অধ্যায়ের চূড়ান্ত বিদায় ঘোষণা করে দিলেন নাদালও।
বয়স হয়ে গেছে ৩৮, বিদায়ের গান তো আজ হোক কাল হোক শোনাতেই হতো তাঁকে। গত দুটি বছরে ভুগিয়ে যাওয়া নিতম্বের চোট তাঁর শেষটা সুন্দর হতে দিল না আর কী! ভিডিওবার্তায় শেষ দুই বছরের কথা নাদাল না বলে থাকেন কীভাবে, ‘এখানে আপনাদের এটাই জানাতে এসেছি যে আমি পেশাদার টেনিস থেকে অবসর নিচ্ছি। সত্যিটা হচ্ছে, সর্বশেষ কয়েকটি বছরই খুব কঠিন গেছে, বিশেষ করে সর্বশেষ দুই বছর। (এ সময়ে) কোনো অস্বস্তি ছাড়া খেলতে পেরেছি বলে মনে পড়ছে না।’
গত মাসে তাঁকে স্পেনের ডেভিস কাপের ফাইনালের দলে নেওয়া হয়েছে। দেশের হয়ে সবচেয়ে সম্মানজনক ট্রফিটার শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে খেলে বিদায়ের চেয়ে ভালো উপলক্ষ আর কী হতে পারত নাদালের জন্য! ১৯ থেকে ২৪ নভেম্বর হতে যাওয়া ডেভিস কাপ ফাইনালের প্রসঙ্গ টেনে ভিডিওতে নাদাল বলেছেন, ‘অনেক লম্বা একটা ক্যারিয়ার, যেটাতে কখনো যা কল্পনা করিনি তার চেয়েও বেশি সাফল্য পেয়েছি, এমন ক্যারিয়ারের শেষ টানার জন্য এটিকেই ভালো সময় বলে মনে হয়েছে। ডেভিস কাপের ফাইনাল আমার শেষ টুর্নামেন্ট হবে, সেখানে আমার দেশের প্রতিনিধিত্ব করব – এটা ভেবেই রোমাঞ্চিত আমি।’
ডেভিস কাপ ফাইনালে কী হবে? শিরোপামঞ্চে থেকেই বিদায়টা নেবেন নাদাল? প্রশ্নগুলো আপাতত ভবিষ্যতের হাতে তোলা থাক। বিদায়বেলায় শিরোপা হাতে নাদালের ঠোঁটে হাসি আর চোখের কোণে অশ্রু মেশানো মুখাবয়স আপাতত টেনিসপ্রেমীদের মনের কোণের বিশেষ কল্পনাই হয়ে থাক।
বিদায়ের ঘোষণা দেওয়ার ক্ষণটা যে এখন পেছনে ফিরে তাকানোর। আর সেদিকে তাকালে ফ্ল্যাশব্যাকে নাদালের শিরোপামঞ্চের হাজারো ছবিই যে চোখে ভাসে। শুধু গ্র্যান্ড স্ল্যামেই তেমন ছবি আছে ২২টি। তাঁর চেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্ল্যামের শিরোপাই ইতিহাসে আছে শুধু একজনের – নোভাক জোকোভিচ, ২৪টি। রজার ফেদেরার ২০ গ্র্যান্ড স্লাম নিয়ে তিন নম্বরে।
সব মিলিয়ে জোকোভিচের পেছনে হলেও শুধু ক্লে কোর্টের হিসেবে গেলে নাদালের ধারেকাছেও কেউ নেই। ‘কিং অব ক্লে’ তো আর এমনি এমনি বলা হয় না তাঁকে! ১৪টি ফ্রেঞ্চ ওপেন তাঁর, উন্মুক্ত যুগে তালিকার দুইয়ে থাকা বিয়র্ন বোর্গের ফ্রেঞ্চ ওপেন শিরোপাও নাদালের অর্ধেকের কম – ৬টি। এর সঙ্গে যোগ করে নিন ৪টি অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, দুটি করে উইম্বলডন আর ইউএস ওপেন – নাদালের বিশেষত্ব ফুটে ওঠে।
এর সঙ্গে যোগ করে নিন অলিম্পিকে একক আর দ্বৈতে সোনা, স্পেনকে চারবার ডেভিস কাপ জেতানো – নাদাল হয়ে ওঠেন অনন্য।
অসাধারণ সে ক্যারিয়ারেরই শেষের বিন্দুটা দেখিয়ে দিলেন নাদাল। টেনিসপ্রেমী তো বটেই, বিষাদে টেনিসেরই ছেয়ে যাওয়ার কথা।