ঢাকা ০১:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

লেবাননে ইসরাইলি গণহত্যার দ্বিতীয় অধ্যায়

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:৪৪:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৩৭৫ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

গাজায় এক বছরের বেশি সময় ধরে চলমান গণহত্যার মধ্যদিয়ে পশ্চিমা নৈতিকতার ব্যর্থতার প্রমাণ মেলে বলে মন্তব্য লেবানিজ এক জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকের। সেই ব্যর্থতার কারণেই লেবাননেও ইসরাইল গণহত্যার দ্বিতীয় অধ্যায় রচনা করছে বলে অভিযোগ তার। তবে লেবাননের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য হিজবুল্লাহকেই দায়ী করছে ইসরাইলের সবচেয়ে বড় পশ্চিমা মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। যারা লেবাননবিরোধী শক্তিকে জোরদার করার পদক্ষেপ নিচ্ছে তাদের তীব্র নিন্দা জানিয়ে রাশিয়া বলছে, হিজবুল্লাহর চেইন অব কমান্ডকে কোনোভাবেই গুঁড়িয়ে দিতে পারবে না ইসরাইল।

হামাসকে নির্মূলের নামে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় এক বছরের বেশি সময় ধরে যে গণহত্যা চালানো হচ্ছে, ঠিক একই কায়দায় হিজবুল্লাহকে টার্গেট করার নামে লেবাননেও গণহত্যার দ্বিতীয় অধ্যায় রচনা করেছে ইসরাইল।

এর মধ্যদিয়ে পশ্চিমাদের নৈতিকতা ব্যর্থ হওয়ার প্রমাণ এখন দৃশ্যমান। এমনটাই অভিযোগ ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজায় আহত ফিলিস্তিনিদের চিকিৎসা সহায়তা দিয়ে আসা লেবাননের এক জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকের। যুক্তি হিসেবে, গণহত্যা থামাতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে, উল্টো তাদের জন্য অস্ত্র সহায়তা অব্যাহত রাখার বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।

লেবাননের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘আমি মনে করি এক বছর পর এখনও গণহত্যা চলছে। আন্তর্জাতিক আইন দিয়েও তা থামানো যাচ্ছে না। এতে পশ্চিমা নৈতিকতা য়ে ব্যর্থ, তা প্রমাণ হয়েছে। কারণ এই যুদ্ধকে নিয়ন্ত্রণকারী শক্তিগুলো অস্ত্র দিয়ে যাচ্ছে। এখন ইসরাইল তার যুদ্ধকে লেবাননে প্রসারিত করেছে। এর মধ্য দিয়ে গণহত্যামূলক যুদ্ধের দ্বিতীয় অধ্যায়টি এখানে শুরু হতে দেখছি।’

এমন কঠিন পরিস্থিতিতে এই যুদ্ধ আরও দীর্ঘ হলে মানসিক স্বাস্থ্যও ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়বে বলে বলে মনে করছেন এই চিকিৎসক। তাই এই মুহূর্তে সবার আগে গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং একটি মানবিক করিডোর খোলা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে দাবি করেন তিনি। কারণ অবরুদ্ধ ভূখণ্ডটিতে চিকিৎসা, জ্বালানি ও ভোগ্যপণ্যসহ মানবিক সংকটের মাত্রা এখন চরম পর্যায়। লেবাননেও যেই হারে হামলার মাত্রা বাড়ানো হচ্ছে, তাতে গাজার মতোই পরিস্থিতি হতে সময় লাগবে না। তা নিশ্চিতে প্রথমে চিকিৎসা ব্যবস্থাকে গুড়িয়ে দিতে, বেছে বেছে স্বাস্থ্যকর্মীদের হত্যার টার্গেট করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

লেবাননের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি এবং একটি মানবিক করিডোর জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ গাজায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যা অবশিষ্ট আছে তা তার ক্ষমতার মাত্র ১০ শতাংশ। ইসরাইল ৫৪০ জনেরও বেশি স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট মানুষকে হত্যা করেছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ১২০ জনের বেশি জ্যেষ্ঠ ডাক্তারকে হত্যা করেছে। আপনি যদি একজন স্বাস্থ্যকর্মী হন, তবে আপনার নিহত হওয়ার সম্ভাবনা অন্য যেকোনো পেশার চেয়ে দ্বিগুণ বেশি।’

গাজার পর লেবাননে অভিযান শুরুর জন্য ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকেই দায়ী করছে ইসরাইলের সবচেয়ে বড় পশ্চিমা মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। তাদের দাবি, বিশ্ব সম্প্রদায়ের আহ্বান উপেক্ষা করে এক বছর ধরে ইসরাইলি ভূখণ্ডে হামলা অব্যাহত রেখেছে হিজবুল্লাহ।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এক বছর ধরে হিজবুল্লাহকে ‘যুদ্ধ বন্ধ করার’ আহ্বান জানিয়ে আসছে। ইসরাইলও বলছে, যদি হিজবুল্লাহ সীমান্তের ওপারে হামলা বন্ধ করে তাহলে ইসরাইলও হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসাবে তাদের আক্রমণ বন্ধ করবে। হিজবুল্লাহ এটিতে রাজি হতে অস্বীকার করেছিল। এখন যখন বিধ্বস্ত হচ্ছে, হঠাৎ তারা তাদের সুর পরিবর্তন করেছে এবং যুদ্ধবিরতির কথা বলছে। আমি মনে করি এটি আশ্চর্যজনক নয়।’

এদিকে ইরান ও তাদের সমর্থিত বিভিন্ন দেশের সশস্ত্র গোষ্ঠীদের মিত্র দেশ রাশিয়া বলছে, ইসরাইলি হামলা সত্ত্বেও হিজবুল্লাহ এখনো ভেঙে পরেনি। সংগঠনের প্রধান হাসান নাসরাল্লাহসহ অনেক নেতাকে হারানোর পর এখনও শক্তিশালী অবস্থানে হিজবুল্লাহ।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, ‘হিজবুল্লাহ তার চেইন অব কমান্ড হারায়নি। তারা এখনও সাংগঠনিকভাবে তাদের শক্তি প্রদর্শন করছে। এই মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্য উত্তেজনার অন্যতম উপাদান লেবানন। তাই এই অঞ্চলে আগুন নিয়ে খেলার জন্য যারা লেবানন বিরোধী শক্তিকে জোরদার করার পদক্ষেপ নিচ্ছে আমরা তাদের তীব্র নিন্দা জানাই।’

লেবাননে ইসরাইলি আগ্রাসন শুরুর মধ্যদিয়ে মধ্যপ্রাচ্য উত্তেজনার পারদ বাড়তে থাকায় একইসঙ্গে গাজা এবং লেবাননে যুদ্ধবিরতির চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

নিউজটি শেয়ার করুন

লেবাননে ইসরাইলি গণহত্যার দ্বিতীয় অধ্যায়

আপডেট সময় : ০১:৪৪:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪

গাজায় এক বছরের বেশি সময় ধরে চলমান গণহত্যার মধ্যদিয়ে পশ্চিমা নৈতিকতার ব্যর্থতার প্রমাণ মেলে বলে মন্তব্য লেবানিজ এক জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকের। সেই ব্যর্থতার কারণেই লেবাননেও ইসরাইল গণহত্যার দ্বিতীয় অধ্যায় রচনা করছে বলে অভিযোগ তার। তবে লেবাননের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য হিজবুল্লাহকেই দায়ী করছে ইসরাইলের সবচেয়ে বড় পশ্চিমা মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। যারা লেবাননবিরোধী শক্তিকে জোরদার করার পদক্ষেপ নিচ্ছে তাদের তীব্র নিন্দা জানিয়ে রাশিয়া বলছে, হিজবুল্লাহর চেইন অব কমান্ডকে কোনোভাবেই গুঁড়িয়ে দিতে পারবে না ইসরাইল।

হামাসকে নির্মূলের নামে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় এক বছরের বেশি সময় ধরে যে গণহত্যা চালানো হচ্ছে, ঠিক একই কায়দায় হিজবুল্লাহকে টার্গেট করার নামে লেবাননেও গণহত্যার দ্বিতীয় অধ্যায় রচনা করেছে ইসরাইল।

এর মধ্যদিয়ে পশ্চিমাদের নৈতিকতা ব্যর্থ হওয়ার প্রমাণ এখন দৃশ্যমান। এমনটাই অভিযোগ ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজায় আহত ফিলিস্তিনিদের চিকিৎসা সহায়তা দিয়ে আসা লেবাননের এক জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকের। যুক্তি হিসেবে, গণহত্যা থামাতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে, উল্টো তাদের জন্য অস্ত্র সহায়তা অব্যাহত রাখার বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।

লেবাননের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘আমি মনে করি এক বছর পর এখনও গণহত্যা চলছে। আন্তর্জাতিক আইন দিয়েও তা থামানো যাচ্ছে না। এতে পশ্চিমা নৈতিকতা য়ে ব্যর্থ, তা প্রমাণ হয়েছে। কারণ এই যুদ্ধকে নিয়ন্ত্রণকারী শক্তিগুলো অস্ত্র দিয়ে যাচ্ছে। এখন ইসরাইল তার যুদ্ধকে লেবাননে প্রসারিত করেছে। এর মধ্য দিয়ে গণহত্যামূলক যুদ্ধের দ্বিতীয় অধ্যায়টি এখানে শুরু হতে দেখছি।’

এমন কঠিন পরিস্থিতিতে এই যুদ্ধ আরও দীর্ঘ হলে মানসিক স্বাস্থ্যও ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়বে বলে বলে মনে করছেন এই চিকিৎসক। তাই এই মুহূর্তে সবার আগে গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং একটি মানবিক করিডোর খোলা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে দাবি করেন তিনি। কারণ অবরুদ্ধ ভূখণ্ডটিতে চিকিৎসা, জ্বালানি ও ভোগ্যপণ্যসহ মানবিক সংকটের মাত্রা এখন চরম পর্যায়। লেবাননেও যেই হারে হামলার মাত্রা বাড়ানো হচ্ছে, তাতে গাজার মতোই পরিস্থিতি হতে সময় লাগবে না। তা নিশ্চিতে প্রথমে চিকিৎসা ব্যবস্থাকে গুড়িয়ে দিতে, বেছে বেছে স্বাস্থ্যকর্মীদের হত্যার টার্গেট করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

লেবাননের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি এবং একটি মানবিক করিডোর জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ গাজায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যা অবশিষ্ট আছে তা তার ক্ষমতার মাত্র ১০ শতাংশ। ইসরাইল ৫৪০ জনেরও বেশি স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট মানুষকে হত্যা করেছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ১২০ জনের বেশি জ্যেষ্ঠ ডাক্তারকে হত্যা করেছে। আপনি যদি একজন স্বাস্থ্যকর্মী হন, তবে আপনার নিহত হওয়ার সম্ভাবনা অন্য যেকোনো পেশার চেয়ে দ্বিগুণ বেশি।’

গাজার পর লেবাননে অভিযান শুরুর জন্য ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকেই দায়ী করছে ইসরাইলের সবচেয়ে বড় পশ্চিমা মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। তাদের দাবি, বিশ্ব সম্প্রদায়ের আহ্বান উপেক্ষা করে এক বছর ধরে ইসরাইলি ভূখণ্ডে হামলা অব্যাহত রেখেছে হিজবুল্লাহ।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এক বছর ধরে হিজবুল্লাহকে ‘যুদ্ধ বন্ধ করার’ আহ্বান জানিয়ে আসছে। ইসরাইলও বলছে, যদি হিজবুল্লাহ সীমান্তের ওপারে হামলা বন্ধ করে তাহলে ইসরাইলও হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসাবে তাদের আক্রমণ বন্ধ করবে। হিজবুল্লাহ এটিতে রাজি হতে অস্বীকার করেছিল। এখন যখন বিধ্বস্ত হচ্ছে, হঠাৎ তারা তাদের সুর পরিবর্তন করেছে এবং যুদ্ধবিরতির কথা বলছে। আমি মনে করি এটি আশ্চর্যজনক নয়।’

এদিকে ইরান ও তাদের সমর্থিত বিভিন্ন দেশের সশস্ত্র গোষ্ঠীদের মিত্র দেশ রাশিয়া বলছে, ইসরাইলি হামলা সত্ত্বেও হিজবুল্লাহ এখনো ভেঙে পরেনি। সংগঠনের প্রধান হাসান নাসরাল্লাহসহ অনেক নেতাকে হারানোর পর এখনও শক্তিশালী অবস্থানে হিজবুল্লাহ।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, ‘হিজবুল্লাহ তার চেইন অব কমান্ড হারায়নি। তারা এখনও সাংগঠনিকভাবে তাদের শক্তি প্রদর্শন করছে। এই মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্য উত্তেজনার অন্যতম উপাদান লেবানন। তাই এই অঞ্চলে আগুন নিয়ে খেলার জন্য যারা লেবানন বিরোধী শক্তিকে জোরদার করার পদক্ষেপ নিচ্ছে আমরা তাদের তীব্র নিন্দা জানাই।’

লেবাননে ইসরাইলি আগ্রাসন শুরুর মধ্যদিয়ে মধ্যপ্রাচ্য উত্তেজনার পারদ বাড়তে থাকায় একইসঙ্গে গাজা এবং লেবাননে যুদ্ধবিরতির চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।