লেবাননে আগ্রাসনের মাত্রা বাড়িয়ে কোণঠাসা হচ্ছে ইসরাইল। নতুন করে ইসরাইলের হামলায় প্রাণ গেছে লেবাননের ২২ নাগরিকের। লেবাননে থাকা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী ইউনিফিলের ওপরও হামলা চালিয়ে মিত্রদের কঠোর সমালোচনা মুখে পড়েছে তেল আবিব। এমনকি লেবাননে ইসরাইলের সামরিক পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের চরম লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে শান্তিরক্ষীরা।
ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর গুলিতে আরও এক ইসরাইলি সেনা প্রাণ হারিয়েছেন। এতে লেবাননে আগ্রাসী স্থল অভিযানে পাঠিয়ে এখন পর্যন্ত অন্তত ১২ সেনাকে হারালো ইসরাইল।
অন্যদিকে ইরান সমর্থিত ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের হামলায়ও নাস্তানাবুদ ইসরাইল। এমনকি লোহিত সাগর ও ভারত মহাসাগর দিয়ে চলাচল করা ইসরাইল পন্থী বিভিন্ন দেশের জাহাজকেও লক্ষ্যবস্তু করছে হুথিরা।
ইয়েমেনে হুতির মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারেয়া বলেন, 'হুথি বাহিনী দুটি সামরিক অভিযান চালিয়েছে। ১১টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং দুটি ড্রোন দিয়ে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। এটি সরাসরি আঘাত হেনেছে। এই অভিযানটি আমাদের মিসাইল ফোর্স, ড্রোন এয়ার ফোর্স এবং নৌবাহিনী যৌথভাবে পরিচালিত করেছে।'
এ অবস্থায় রীতিমতো মাথা নষ্ট ইসরাইলের। ফলে লেবাননে বর্বরতার মাত্রা ক্রমেই বাড়াচ্ছে। রাজধানী বৈরুতে চালানো হয়েছে ভয়াবহ বিমান হামলা। হতাহতের শিকার হয়েছেন বহু মানুষ। ধ্বংস করা হচ্ছে বেসামরিক স্থাপনা।
এবার লেবাননে থাকা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী ইউনিফিলের ওপরও হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। শান্তি রক্ষীদের ওয়াচ টাওয়ার লক্ষ্য করে ইসরাইলের সেনাদের চালানো গুলিতে বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউনিফিল। আর এর মধ্য দিয়ে ইসরাইল গুরুতর অপরাধ করেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
লেবাননে ইউনাইটেড নেশনস ইন্টারিম ফোর্স-ইউনিফিলের মুখপাত্র আন্দ্রিয়া টেনেন্টি বলেন, 'একদিনে তিনটি ঘটনা। এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। শুধু শান্তিরক্ষীরা সেখানে থাকার কারণে নয়। আপনি জানেন সম্ভবত, এটি আমাদের সৈন্যদের বিরুদ্ধে একটি ইচ্ছাকৃত আক্রমণ। আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এবং নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশন ১৭০১ গুরুতর লঙ্ঘন।'
ইসরাইলি সেনাদের এমন বেপরোয়া আচরণের পর জরুরি বৈঠক করেছে ১৫ সদস্যের জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। ইসরাইলের কঠোর সমালোচনা জানিয়েছে তাদেরই মিত্র যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্সসহ বেশ কয়েকটি দেশ।
ইতালির প্রতিরক্ষামন্ত্রী গুইডো ক্রসেটো বলেন, 'লেবাননের পরিস্থিতি আমাদের উদ্বিগ্ন করছে। তবে গতকাল এবং আজ যা ঘটেছে তা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য। এটা বলার কোন যৌক্তিকতা নেই যে, কিছু ঘাঁটি ছেড়ে দেয়ার জন্য ইসরাইলি সশস্ত্র বাহিনী ইউনিফিলকে সতর্ক করেছিল।'
ইসরাইলের হাত থেকে লেবাননের সার্বভৌম রক্ষায় কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে দাবি তুলেছে জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস ডি রিভিয়ের বলেন, 'লেবাননে অবিলম্বে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতি দরকার। এটি সেই আবেদন যা ফ্রান্স এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুই সপ্তাহ আগে শুরু করেছিল। আমাদের অনেক অংশীদার এতে যোগ দিয়েছে।'
জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট উড বলেন, 'লেবাননকে দুর্বল করে এই সংকটের সমাধান হবে না। লেবানন একটি শক্তিশালী এবং সত্যিকারের সার্বভৌম দেশ। লেবানন সশস্ত্র বাহিনী এবং বৈধ নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা সুরক্ষিত। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া উচিত। লেবাননের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করা দরকার। যাতে তারা নিজেদের ভূখণ্ডে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করতে পারে।'
এ অবস্থায় নিজেদের অপরাধ ঢাকার জন্য ঠিক গাজার মতো করেই, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে হিজবুল্লাহর অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংসের দাবি করে ভিডিও তুলে ধরেছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী আইডিএফ। ধ্বংসযজ্ঞ চালানো একটি ভবনে ঢুকে সবশেষ ইসরাইলের সামরিক মুখপাত্র এমনই এক ভিডিও তুলে ধরেছেন। হামাসের মতো হিজবুল্লাহও বেসামরিক স্থাপনাতে অস্ত্র মজুত রেখেছে বলে দাবি ইসরাইলি বাহিনীর।
ইসরাইলের সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য করে বড় অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে এসব অস্ত্র এই বেসামরিক ভবনে বাড়িটিতে রাখা হয়েছিল। উত্তর ইসরাইলে গত বছরের ৭ অক্টোবরের চেয়েও বড় পরিসরে গণহত্যা চালানোর পরিকল্পনা ছিল হিজবুল্লাহর।'
ইসরাইল-হিজবুল্লাহ সংঘাত উত্তেজনা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা বাড়ছে। কারণ ইরানেও হামলা চালানোর হুমকি দিচ্ছে ইসরাইল। এ অবস্থায় লেবাননে ইসরাইলি বিমান হামলা ও স্থল অভিযান প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।