ঢাকা ০৪:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

নির্বাচন আয়োজনে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৬:২৯:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৩৬৯ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নির্বাচনের জন্য সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করার দাবি জানিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। তারা বলেন, নির্বাচন কমিশন সংস্কার করার সময় ত্রুটিগুলো খুঁজে বের করতে হবে। তবে সহযোগিতার মনোভাব ধরে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের ওপর জোর দেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান। আজ (শনিবার, ১২ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত সেমিনারে মতামত তুলে ধরেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, রাজনীতিবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন পদত্যাগের পর ১১ সেপ্টেম্বর দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারকে প্রধান করে কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ‘নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কেমন চাই’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে রিপোর্টার্স ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি)। এতে যোগ দেন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিসহ নির্বাচন সংস্কারের সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা।

সেমিনারে বামধারার রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল-পরিবর্তন করা এখন সময়ের দাবি। ইতোমধ্যে, অন্তর্বর্তী সরকার কালক্ষেপণ করছে উল্লেখ করে সরকারকে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের প্রস্তাবনা দেয়া হয়।

সিপিডির সাধারণ সম্পাদক রুমিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘প্রাদেশিক সরকার আলোচনা হতে পারে। তবে আমি আজকে সে ব্যাপারে আলোচনায় যাচ্ছি না। কিন্তু আমরা আমাদের মত বলছি, আনুপাতিক নির্বাচনটা বাংলাদেশে ইনরোলস করাটা খুব জরুরি মনে করছি।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে তিন থেকে পাঁচটি নির্বাচন করা দরকার। কারণ যে প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি অর্জনের কথা আমরা বলছি যে, প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠবে, তার মধ্য দিয়ে ক্ষমতার ভারসাম্যগুলো সৃষ্টি হবে। এটা আসলে আইন করার সাথে সাথে গড়ে ওঠে না।’

সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের প্রস্তাবনা দেন জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিও। ইসি সংস্কারের সময় কমিশনকে ত্রুটিগুলো খুঁজে বের করার আহ্বান জানান রাজনৈতিক দলের নেতারা। তারা জানান, রাজনৈতিক দলগুলোরও এমন প্রস্তাব দেয়া উচিত যেন পারস্পরিক আস্থার সংকট তৈরি না হয়।

জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘দৃষ্টি দিতে হবে কুসংস্কারগুলোর দিকে। সংস্কারের দিকে কম, কুসংস্কারের দিকে বেশি। অর্থাৎ নির্বাচন ব্যবস্থায় কী কী কুসংস্কার যুক্ত হয়েছে।’

এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন দেশে প্রত্যাখ্যাত ইভিএমের কথা যে আমাদের বলা হয়েছিল, আসলে এটাকে বলা হয়েছে মানুষের ডিটিালাইজেশন না, বরং মানুষকে আর একটি ধোঁকা দেয়ার প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়েছে।’

রাষ্ট্র সংস্কারে নিজেদের দেয়া ৩১ দফার বাস্তবায়ন চায় দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি। আর অন্তত ২০ বছরের জন্য নির্বাচনি কাঠামো তৈরি করার তাগিদ দিয়ে জাতীয় পার্টির নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ কীভাবে হবে তার রূপরেখা প্রয়োজন।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘রুল অব ল মানে হচ্ছে যারা ক্ষমতায় থাকেন তারা আইন প্রণয়ন করবেন, আইন প্রয়োগ করবেন। এটার মধ্যে কিন্তু তাদের হতে সম্পূর্ণ ক্ষমতাটা নিহিত। এটা হওয়া উচিত রুল অব জাস্টিস। তা হলে এই জিনিসটা থাকে না। এখানেই ক্ষমতার ভারসাম্য এবং ভাগাভাগির ব্যাপারটা থাকে।’

নির্বাচনের সময় কমিশনের ওপর পূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। আর নিরপেক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠার সাথে প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করা হবে বলে জানান কমিশন প্রধান বদিউল আলম মজুমদার।

এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘পোলিং অফিসারে যে কেউ থাকতে পারে। যাদের নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেয়, তাদের বিরুদ্ধে যদি নির্বাচন কমিশন অ্যাকশন নেয় তাহলে এই বিতর্কের শেষ হবে এখানেই। এখানে সরকারের যেন কোনো ইন্টারফেয়ার না হয়।’

বদিউল আলম মজুমদার বলেন ‘নির্বাচন কমিশন নিয়োগের ব্যাপারে এটা কিন্তু আমাদের এখতিয়ার নয়। আমাদের এখতিয়ার নয় হলো আপনাদের সবার সাথে আলোচনা করে আমরা শুধু সংস্কার প্রস্তাব, কয়েকটি সুপারিশ করা। এই সিদ্ধান্তটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নেবে।’

কমিশন প্রধান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো দায়িত্বশীল আচরণ না করলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ঐক্য ধরে রাখার ওপরও তাগিদ দেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

নির্বাচন আয়োজনে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের দাবি

আপডেট সময় : ০৬:২৯:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪

নির্বাচনের জন্য সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করার দাবি জানিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। তারা বলেন, নির্বাচন কমিশন সংস্কার করার সময় ত্রুটিগুলো খুঁজে বের করতে হবে। তবে সহযোগিতার মনোভাব ধরে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের ওপর জোর দেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান। আজ (শনিবার, ১২ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত সেমিনারে মতামত তুলে ধরেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, রাজনীতিবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন পদত্যাগের পর ১১ সেপ্টেম্বর দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারকে প্রধান করে কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ‘নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কেমন চাই’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে রিপোর্টার্স ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি)। এতে যোগ দেন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিসহ নির্বাচন সংস্কারের সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা।

সেমিনারে বামধারার রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল-পরিবর্তন করা এখন সময়ের দাবি। ইতোমধ্যে, অন্তর্বর্তী সরকার কালক্ষেপণ করছে উল্লেখ করে সরকারকে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের প্রস্তাবনা দেয়া হয়।

সিপিডির সাধারণ সম্পাদক রুমিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘প্রাদেশিক সরকার আলোচনা হতে পারে। তবে আমি আজকে সে ব্যাপারে আলোচনায় যাচ্ছি না। কিন্তু আমরা আমাদের মত বলছি, আনুপাতিক নির্বাচনটা বাংলাদেশে ইনরোলস করাটা খুব জরুরি মনে করছি।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে তিন থেকে পাঁচটি নির্বাচন করা দরকার। কারণ যে প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি অর্জনের কথা আমরা বলছি যে, প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠবে, তার মধ্য দিয়ে ক্ষমতার ভারসাম্যগুলো সৃষ্টি হবে। এটা আসলে আইন করার সাথে সাথে গড়ে ওঠে না।’

সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের প্রস্তাবনা দেন জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিও। ইসি সংস্কারের সময় কমিশনকে ত্রুটিগুলো খুঁজে বের করার আহ্বান জানান রাজনৈতিক দলের নেতারা। তারা জানান, রাজনৈতিক দলগুলোরও এমন প্রস্তাব দেয়া উচিত যেন পারস্পরিক আস্থার সংকট তৈরি না হয়।

জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘দৃষ্টি দিতে হবে কুসংস্কারগুলোর দিকে। সংস্কারের দিকে কম, কুসংস্কারের দিকে বেশি। অর্থাৎ নির্বাচন ব্যবস্থায় কী কী কুসংস্কার যুক্ত হয়েছে।’

এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন দেশে প্রত্যাখ্যাত ইভিএমের কথা যে আমাদের বলা হয়েছিল, আসলে এটাকে বলা হয়েছে মানুষের ডিটিালাইজেশন না, বরং মানুষকে আর একটি ধোঁকা দেয়ার প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়েছে।’

রাষ্ট্র সংস্কারে নিজেদের দেয়া ৩১ দফার বাস্তবায়ন চায় দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি। আর অন্তত ২০ বছরের জন্য নির্বাচনি কাঠামো তৈরি করার তাগিদ দিয়ে জাতীয় পার্টির নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ কীভাবে হবে তার রূপরেখা প্রয়োজন।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘রুল অব ল মানে হচ্ছে যারা ক্ষমতায় থাকেন তারা আইন প্রণয়ন করবেন, আইন প্রয়োগ করবেন। এটার মধ্যে কিন্তু তাদের হতে সম্পূর্ণ ক্ষমতাটা নিহিত। এটা হওয়া উচিত রুল অব জাস্টিস। তা হলে এই জিনিসটা থাকে না। এখানেই ক্ষমতার ভারসাম্য এবং ভাগাভাগির ব্যাপারটা থাকে।’

নির্বাচনের সময় কমিশনের ওপর পূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। আর নিরপেক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠার সাথে প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করা হবে বলে জানান কমিশন প্রধান বদিউল আলম মজুমদার।

এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘পোলিং অফিসারে যে কেউ থাকতে পারে। যাদের নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেয়, তাদের বিরুদ্ধে যদি নির্বাচন কমিশন অ্যাকশন নেয় তাহলে এই বিতর্কের শেষ হবে এখানেই। এখানে সরকারের যেন কোনো ইন্টারফেয়ার না হয়।’

বদিউল আলম মজুমদার বলেন ‘নির্বাচন কমিশন নিয়োগের ব্যাপারে এটা কিন্তু আমাদের এখতিয়ার নয়। আমাদের এখতিয়ার নয় হলো আপনাদের সবার সাথে আলোচনা করে আমরা শুধু সংস্কার প্রস্তাব, কয়েকটি সুপারিশ করা। এই সিদ্ধান্তটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নেবে।’

কমিশন প্রধান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো দায়িত্বশীল আচরণ না করলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ঐক্য ধরে রাখার ওপরও তাগিদ দেন তিনি।