ঢাকা ০৪:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ইসরাইলের বেপরোয়া আচরণের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ার ফ্রান্স-ইতালির

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৩:৩৩:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৩৭০ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

লেবাননে প্রাণঘাতি আগ্রাসী হামলা চালিয়েও হিজবুল্লাহকে দুর্বল করতে পারছে না ইসরাইল। উল্টো হিজবুল্লাহ বলছে, যুদ্ধের এখনও কিছুই দেখেনি ইসরাইল, তাদের সঙ্গে লড়াই সবেমাত্র শুরু হয়েছে। এতে চরম চাপে থাকা ইসরাইলি বাহিনী লেবাননে থাকা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী ইউনিফিলের ওপর টানা তৃতীয়দিন হামলা চালিয়েছে। বেপরোয়া এই আচরণের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ার দিয়েছে ফ্রান্স ও ইতালি।

হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ কামান্ডারকে হত্যা করে ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে নেতৃত্ব শূন্য করে দুর্বল করতে চেয়েছিল ইসরাইল। কিন্তু ফলাফল উল্টো দিকে মোড় নিচ্ছে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে আরও বেশি পাকাপোক্ত হচ্ছে হিজবুল্লাহ।

এরই মধ্যে ইসরাইলে স্থল ও রকেট হামলা চালাতে নতুন সামরিক নেতৃত্ব গঠন করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। এগিয়ে নিয়েছে শীর্ষ কমান্ড গঠনের কাজ। ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে পাল্টা হামলা জোরালো করার বিষয়টি সেদিকেই ইঙ্গিত করছে। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে হিজবুল্লাহর জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহাম্মাদ আফিফ হুমকি দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধের এখনও কিছুই দেখেনি ইসরাইল, তাদের সঙ্গে লড়াই শুরু হয়েছে মাত্র।

মুহাম্মাদ আফিফ বলেন, ‘তেল আবিবকে আঘাত করা মাত্র শুরু। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে হাইফা, নাহারিয়া এবং সাফাতে যে কয়টি পাল্টা হামলা চালিয়েছি নিশ্চিত করে যে আমরা এখনও যুদ্ধের শুরুতেই আছি। শত্রুদেরকে বলে দিতে চাই, আপনারা আমাদের পাল্টা জবাবে এখনও কিছুই দেখেননি। যা দেখেছেন তা খুবই সামান্য ছিল।’

লেবাননের ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বিমান এবং ১ অক্টোবর থেকে স্থল আগ্রাসন শুরু করেও হিজবুল্লাহকে দমাতে না পাড়ছে না ইসরাইলি বাহিনী। তার ওপর ফ্রান্স, ইতালিসহ বেশ কয়েকটি পশ্চিমা মিত্র যুদ্ধবিরতির জন্য বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু প্রশাসনকে চাপও দিয়ে আসছে। তবুও কোনোকিছুর তোয়াক্কা করছে না ইসরাইল। বাড়াচ্ছে আগ্রাসনের মাত্রা।’

ইসরাইলের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হার্জি হালেভি বলেন, ‘আমরা শত্রুর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের উত্তরের বাসিন্দাদের নিরাপদ বাসস্থান নিশ্চিত না করতে পারবো ততক্ষণ থামবো না। শুধু এখনই নয়, ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা দৃষ্টিভঙ্গিও মূল্যায়ন করা হবে।’

হিজবুল্লাহকে টার্গেট করার পাশাপাশি লেবাননে থাকা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী ইউনিফিলের ওপর পরপর টানা তৃতীয়দিন হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। বেশ কয়েকজন শান্তিরক্ষী সদস্য আহত হওয়ায় ইসরাইলে বিরুদ্ধে এবার নড়েচড়ে বসছে খোদ মিত্ররাই। এমন বেপরোয়া আচরণ কিছুতেই মেনে নেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করেছে ফ্রান্স ও ইতালি। আর ইসরাইলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে স্পেন। এতে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়ছে ইসরাইল ।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেন, ‘ইউনিফিল মিশনের সদর দপ্তর এবং দু’টি ইতালীয় ঘাঁটিতে ইসরাইলি বাহিনীর হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনা অগ্রহণযোগ্য এবং এটি জাতিসংঘের রেজুলেশন ১৭০১ এর লঙ্ঘন। তাই ইতালি সরকার ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।’

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘ফ্রান্সের মতো ইউনিফিল মিশনে অবদানকারী ইতালি এবং স্পেনের সাথে লেবানন ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। অবশেষে বলতে চাই, এই বাহিনীর সাথে জড়িত ৭০০ ফরাসি সৈন্য যুক্ত। ইসরাইল এবং লেবানন উভয়ের নিরাপত্তার জন্যও আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবুও লেবাননে থাকা ইউনিফিল মিশন লক্ষ্য করে ইচ্ছাকৃতভাবে ইসরাইলি সশস্ত্র বাহিনীর হামলা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য। আমরা এর কঠোর নিন্দা জানাই। আমরা কিছুতেই এটা সহ্য করব না।’

গাজা ও লেবাননে একই সঙ্গে ইসরাইলি আগ্রাসন অব্যাহত থাকায় পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ছে যুদ্ধ উত্তেজনা। তাই আঞ্চলিক উত্তেজনা কমানো জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস। এমনকি লেবাননে থাকা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের ওপর গুলি চালানো বন্ধ করতে ইসরাইলের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ।

যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস বলেন, ‘অবশ্যই লেবাননে এবং গাজায় যা ঘটছে তা থামাতে কার্যকর যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে হবে। আর এ ব্যাপারে আমরা সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছি। এই যুদ্ধগুলো থামানো জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ এই অঞ্চলে যুদ্ধ উত্তেজনা বাড়তে দেয়া যাবে না। আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি।’

এরমধ্যেই মিশর, সিরিয়া এবং লেবাননের কিছু অংশে ইসরাইল রাষ্ট্র বিস্তৃত হবে মন্তব্য করে মধ্যপ্রাচ্য উত্তেজনাকে আরও উসকে দিলেন দেশটির অর্থমন্ত্রী বেজালেল। আর ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ বলছে, হামাস যদি তাদের কব্জায় থাকা অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দেয়, তাহলে গাজার পাশাপাশি লেবাননেও সামরিক অভিযান বন্ধের কথা ভাববে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ।

নিউজটি শেয়ার করুন

ইসরাইলের বেপরোয়া আচরণের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ার ফ্রান্স-ইতালির

আপডেট সময় : ০৩:৩৩:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪

লেবাননে প্রাণঘাতি আগ্রাসী হামলা চালিয়েও হিজবুল্লাহকে দুর্বল করতে পারছে না ইসরাইল। উল্টো হিজবুল্লাহ বলছে, যুদ্ধের এখনও কিছুই দেখেনি ইসরাইল, তাদের সঙ্গে লড়াই সবেমাত্র শুরু হয়েছে। এতে চরম চাপে থাকা ইসরাইলি বাহিনী লেবাননে থাকা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী ইউনিফিলের ওপর টানা তৃতীয়দিন হামলা চালিয়েছে। বেপরোয়া এই আচরণের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ার দিয়েছে ফ্রান্স ও ইতালি।

হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ কামান্ডারকে হত্যা করে ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে নেতৃত্ব শূন্য করে দুর্বল করতে চেয়েছিল ইসরাইল। কিন্তু ফলাফল উল্টো দিকে মোড় নিচ্ছে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে আরও বেশি পাকাপোক্ত হচ্ছে হিজবুল্লাহ।

এরই মধ্যে ইসরাইলে স্থল ও রকেট হামলা চালাতে নতুন সামরিক নেতৃত্ব গঠন করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। এগিয়ে নিয়েছে শীর্ষ কমান্ড গঠনের কাজ। ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে পাল্টা হামলা জোরালো করার বিষয়টি সেদিকেই ইঙ্গিত করছে। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে হিজবুল্লাহর জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহাম্মাদ আফিফ হুমকি দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধের এখনও কিছুই দেখেনি ইসরাইল, তাদের সঙ্গে লড়াই শুরু হয়েছে মাত্র।

মুহাম্মাদ আফিফ বলেন, ‘তেল আবিবকে আঘাত করা মাত্র শুরু। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে হাইফা, নাহারিয়া এবং সাফাতে যে কয়টি পাল্টা হামলা চালিয়েছি নিশ্চিত করে যে আমরা এখনও যুদ্ধের শুরুতেই আছি। শত্রুদেরকে বলে দিতে চাই, আপনারা আমাদের পাল্টা জবাবে এখনও কিছুই দেখেননি। যা দেখেছেন তা খুবই সামান্য ছিল।’

লেবাননের ২০ সেপ্টেম্বর থেকে বিমান এবং ১ অক্টোবর থেকে স্থল আগ্রাসন শুরু করেও হিজবুল্লাহকে দমাতে না পাড়ছে না ইসরাইলি বাহিনী। তার ওপর ফ্রান্স, ইতালিসহ বেশ কয়েকটি পশ্চিমা মিত্র যুদ্ধবিরতির জন্য বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু প্রশাসনকে চাপও দিয়ে আসছে। তবুও কোনোকিছুর তোয়াক্কা করছে না ইসরাইল। বাড়াচ্ছে আগ্রাসনের মাত্রা।’

ইসরাইলের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হার্জি হালেভি বলেন, ‘আমরা শত্রুর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের উত্তরের বাসিন্দাদের নিরাপদ বাসস্থান নিশ্চিত না করতে পারবো ততক্ষণ থামবো না। শুধু এখনই নয়, ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা দৃষ্টিভঙ্গিও মূল্যায়ন করা হবে।’

হিজবুল্লাহকে টার্গেট করার পাশাপাশি লেবাননে থাকা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী ইউনিফিলের ওপর পরপর টানা তৃতীয়দিন হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। বেশ কয়েকজন শান্তিরক্ষী সদস্য আহত হওয়ায় ইসরাইলে বিরুদ্ধে এবার নড়েচড়ে বসছে খোদ মিত্ররাই। এমন বেপরোয়া আচরণ কিছুতেই মেনে নেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করেছে ফ্রান্স ও ইতালি। আর ইসরাইলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে স্পেন। এতে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়ছে ইসরাইল ।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেন, ‘ইউনিফিল মিশনের সদর দপ্তর এবং দু’টি ইতালীয় ঘাঁটিতে ইসরাইলি বাহিনীর হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনা অগ্রহণযোগ্য এবং এটি জাতিসংঘের রেজুলেশন ১৭০১ এর লঙ্ঘন। তাই ইতালি সরকার ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।’

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘ফ্রান্সের মতো ইউনিফিল মিশনে অবদানকারী ইতালি এবং স্পেনের সাথে লেবানন ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। অবশেষে বলতে চাই, এই বাহিনীর সাথে জড়িত ৭০০ ফরাসি সৈন্য যুক্ত। ইসরাইল এবং লেবানন উভয়ের নিরাপত্তার জন্যও আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবুও লেবাননে থাকা ইউনিফিল মিশন লক্ষ্য করে ইচ্ছাকৃতভাবে ইসরাইলি সশস্ত্র বাহিনীর হামলা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য। আমরা এর কঠোর নিন্দা জানাই। আমরা কিছুতেই এটা সহ্য করব না।’

গাজা ও লেবাননে একই সঙ্গে ইসরাইলি আগ্রাসন অব্যাহত থাকায় পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ছে যুদ্ধ উত্তেজনা। তাই আঞ্চলিক উত্তেজনা কমানো জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস। এমনকি লেবাননে থাকা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের ওপর গুলি চালানো বন্ধ করতে ইসরাইলের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ।

যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস বলেন, ‘অবশ্যই লেবাননে এবং গাজায় যা ঘটছে তা থামাতে কার্যকর যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে হবে। আর এ ব্যাপারে আমরা সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছি। এই যুদ্ধগুলো থামানো জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ এই অঞ্চলে যুদ্ধ উত্তেজনা বাড়তে দেয়া যাবে না। আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি।’

এরমধ্যেই মিশর, সিরিয়া এবং লেবাননের কিছু অংশে ইসরাইল রাষ্ট্র বিস্তৃত হবে মন্তব্য করে মধ্যপ্রাচ্য উত্তেজনাকে আরও উসকে দিলেন দেশটির অর্থমন্ত্রী বেজালেল। আর ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ বলছে, হামাস যদি তাদের কব্জায় থাকা অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দেয়, তাহলে গাজার পাশাপাশি লেবাননেও সামরিক অভিযান বন্ধের কথা ভাববে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ।