ঢাকা ০৭:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

জাতীয় পার্টি বৈষম্যের শিকার: জিএম কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১০:৪৯:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৩৭১ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েও জাতীয় পার্টি বৈষম্যের শিকার বলে মন্তব্য করেছেন পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।

জিএম কাদের বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জাতীয় পার্টি সর্বতভাবে সমর্থন দিয়ে আন্দোলনে সক্রিয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেওয়ায় আমাদের দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রংপুরে মামলা হয়েছে। অনেকে গ্রেপ্তার হয়ে হাজতবাস করেছে।’

তিনি বলেন, ‘১ জুলাই ছাত্ররা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু করলে, আমি ৩ জুলাই সংসদে তখনকার প্রধানমন্ত্রীর সামনে ছাত্র আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে বক্তৃতা করেছি। বক্তৃতায় আমি বলেছি, ছাত্রদের এই আন্দোলন যৌক্তিক। চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংবিধান পরিপন্থী। বৈষম্যের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। ৬ জুলাই গাজীপুরে জাতীয় পার্টির কাউন্সিলে বক্তৃতায় আমি বলেছি, চাকরিতে কোটা পদ্ধতি মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী। তখন আমি বলেছিলাম, চাকরিতে কোটা পদ্ধতি হচ্ছে বৈষম্য।’

জিএম কাদের বলেন, ‘আমাদের শহীদ মিনার হচ্ছে বৈষম্যের বিরুদ্ধে জীবন দেওয়ার প্রতীক। আমি ছাত্রদের শহীদ মিনারে গিয়ে শপথ নিতে বলেছি। যখন ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ককে আটক করা হলো, আমরা তাদের মুক্তি দাবি করেছি। ছাত্র আন্দোলনে যখন গুলি চালানো হলো, আমরা এর প্রতিবাদ করেছি। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছি আমরা।’

তিনি বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের মধ্যে সবার আগে রংপুরে গিয়ে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেছি আমি। শহীদ আবু সাঈদের শোকার্ত বাবা-মাকে সান্তনা দিয়েছি। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, ছাত্র আন্দোলনের সাফল্য নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। একটি চক্র জাতীয় পার্টিকে ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষের দল হিসেবে চিহ্নিত করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। যে ছাত্রদের আন্দোলনে আমরা সমর্থন দিয়েছি, আমাদের নেতাকর্মীরা অংশ নিয়ে হামলা-মামলার শিকার হয়ে জেল খেটছে। সেই আন্দোলনের হত্যা মামলায় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের আসামি করা হচ্ছে। এই অন্যায় মেনে নেওয়া হবে না। আমরা রাজপথে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ করবো। জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের সাথে অবিচার হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা রক্ত দিয়েছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির বিরুদ্ধে প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে প্রতিবাদ করা হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েও জাতীয় পার্টি বৈষম্যের শিকার।’

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘মিথ্যা মামলা দিয়ে জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। এটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের স্বপ্নবিরোধী। বৈষম্যবিরোধী ন্যায়বিচারভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের সংগ্রামে অংশ নিয়েও জাতীয় পার্টি ন্যায় বিচার পাচ্ছে না।’

সভাপতির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আমাদের নামে মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে রংপুর থেকে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। রংপুরের মানুষ রাস্তায় জীবনবাজি রেখে আন্দোলন করে পল্লিবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ফাঁসি থেকে রক্ষা করেছে। আমার জন্যও তারা রাজপথে লড়াই শুরু করেছে। আমরা তাদের ঋণ কখনোই শোধ করতে পারবো না। আমরা অপরাধ করিনি, আমাদের অপরাধী করার অপচেষ্টা চলছে। আওয়ামী লীগের দোষর হিসেবে আমাদের ব্র্যান্ডিং করার অপচেষ্টা চলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি গণমাধ্যমসহ সবার সামনে পরিষ্কার করে বলেছি, ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে আমরা যেতে চাইনি। আমাদের জোর করে নির্বাচনে নেওয়া হয়েছে। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ দেশের সব রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। আবার, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও উপজেলা পরিষদ ও মেয়র নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। আওয়ামী লীগের নির্বাচন ব্যবস্থায় অংশ নেওয়ার কারণে কাউকে স্বৈরাচারের দোষর বলা উচিত নয়। কারণ, আওয়ামী লীগের নির্বাচন ব্যবস্থায় বিএনপিসহ সব দলই অংশ নিয়েছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্যরা চার বছর সংসদে ভূমিকা রেখেছেন। আমরা মন্ত্রী বা এমপি হওয়ার জন্য রাজনীতি করি না। জনগণের পক্ষে কাজ করাই আমাদের রাজনীতির মূখ্য উদ্দেশ্য। সংসদে ও সংসদের বাইরে আওয়ামী লীগের দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করেছি আমি।’

এ সময় গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টির একটি উজ্জল ভবিষ্যৎ আছে। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন গোলাম মোহাম্মদ কাদের।

নিউজটি শেয়ার করুন

জাতীয় পার্টি বৈষম্যের শিকার: জিএম কাদের

আপডেট সময় : ১০:৪৯:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েও জাতীয় পার্টি বৈষম্যের শিকার বলে মন্তব্য করেছেন পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।

জিএম কাদের বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জাতীয় পার্টি সর্বতভাবে সমর্থন দিয়ে আন্দোলনে সক্রিয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেওয়ায় আমাদের দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রংপুরে মামলা হয়েছে। অনেকে গ্রেপ্তার হয়ে হাজতবাস করেছে।’

তিনি বলেন, ‘১ জুলাই ছাত্ররা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু করলে, আমি ৩ জুলাই সংসদে তখনকার প্রধানমন্ত্রীর সামনে ছাত্র আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে বক্তৃতা করেছি। বক্তৃতায় আমি বলেছি, ছাত্রদের এই আন্দোলন যৌক্তিক। চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংবিধান পরিপন্থী। বৈষম্যের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। ৬ জুলাই গাজীপুরে জাতীয় পার্টির কাউন্সিলে বক্তৃতায় আমি বলেছি, চাকরিতে কোটা পদ্ধতি মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী। তখন আমি বলেছিলাম, চাকরিতে কোটা পদ্ধতি হচ্ছে বৈষম্য।’

জিএম কাদের বলেন, ‘আমাদের শহীদ মিনার হচ্ছে বৈষম্যের বিরুদ্ধে জীবন দেওয়ার প্রতীক। আমি ছাত্রদের শহীদ মিনারে গিয়ে শপথ নিতে বলেছি। যখন ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ককে আটক করা হলো, আমরা তাদের মুক্তি দাবি করেছি। ছাত্র আন্দোলনে যখন গুলি চালানো হলো, আমরা এর প্রতিবাদ করেছি। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছি আমরা।’

তিনি বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের মধ্যে সবার আগে রংপুরে গিয়ে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেছি আমি। শহীদ আবু সাঈদের শোকার্ত বাবা-মাকে সান্তনা দিয়েছি। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, ছাত্র আন্দোলনের সাফল্য নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। একটি চক্র জাতীয় পার্টিকে ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষের দল হিসেবে চিহ্নিত করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। যে ছাত্রদের আন্দোলনে আমরা সমর্থন দিয়েছি, আমাদের নেতাকর্মীরা অংশ নিয়ে হামলা-মামলার শিকার হয়ে জেল খেটছে। সেই আন্দোলনের হত্যা মামলায় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের আসামি করা হচ্ছে। এই অন্যায় মেনে নেওয়া হবে না। আমরা রাজপথে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ করবো। জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের সাথে অবিচার হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা রক্ত দিয়েছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির বিরুদ্ধে প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে প্রতিবাদ করা হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েও জাতীয় পার্টি বৈষম্যের শিকার।’

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘মিথ্যা মামলা দিয়ে জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। এটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের স্বপ্নবিরোধী। বৈষম্যবিরোধী ন্যায়বিচারভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের সংগ্রামে অংশ নিয়েও জাতীয় পার্টি ন্যায় বিচার পাচ্ছে না।’

সভাপতির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আমাদের নামে মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে রংপুর থেকে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। রংপুরের মানুষ রাস্তায় জীবনবাজি রেখে আন্দোলন করে পল্লিবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ফাঁসি থেকে রক্ষা করেছে। আমার জন্যও তারা রাজপথে লড়াই শুরু করেছে। আমরা তাদের ঋণ কখনোই শোধ করতে পারবো না। আমরা অপরাধ করিনি, আমাদের অপরাধী করার অপচেষ্টা চলছে। আওয়ামী লীগের দোষর হিসেবে আমাদের ব্র্যান্ডিং করার অপচেষ্টা চলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি গণমাধ্যমসহ সবার সামনে পরিষ্কার করে বলেছি, ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে আমরা যেতে চাইনি। আমাদের জোর করে নির্বাচনে নেওয়া হয়েছে। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ দেশের সব রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। আবার, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও উপজেলা পরিষদ ও মেয়র নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। আওয়ামী লীগের নির্বাচন ব্যবস্থায় অংশ নেওয়ার কারণে কাউকে স্বৈরাচারের দোষর বলা উচিত নয়। কারণ, আওয়ামী লীগের নির্বাচন ব্যবস্থায় বিএনপিসহ সব দলই অংশ নিয়েছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্যরা চার বছর সংসদে ভূমিকা রেখেছেন। আমরা মন্ত্রী বা এমপি হওয়ার জন্য রাজনীতি করি না। জনগণের পক্ষে কাজ করাই আমাদের রাজনীতির মূখ্য উদ্দেশ্য। সংসদে ও সংসদের বাইরে আওয়ামী লীগের দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করেছি আমি।’

এ সময় গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টির একটি উজ্জল ভবিষ্যৎ আছে। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন গোলাম মোহাম্মদ কাদের।