বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জালিমদের হাত থেকে আল্লাহ বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে মুক্তি দিয়েছে। আমাদের শীর্ষ দায়িত্বশীল ১১ জন নেতাকে বুক থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগ, সাজানো স্বাক্ষী, বানানো আদালতে প্যানেল কোড বসিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিচার পাব কিনা জানি না। তবে বিচারের জন্য লড়াই করে যাব। যারা দেশে ছেড়ে পালিয়ে গেছে সকলকে দেশে ফিরিয়ে এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আগামী দিনে জামায়াত রাষ্ট্রক্ষমতায় আসলে সকল বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে এবং নারীদের সবোর্চ্চ সম্মানের সাথে সমাজ উন্নয়নে কাজে লাগানো হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যারা সিন্ডিকেট করে বাজারে দাম বাড়িয়েছিল এখনও তারা সিন্ডিকেট পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ করেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।
আজ বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ঝিনাইদহ শহরের উজির আলী স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে জেলা জামায়াত আয়োজিত বিশাল কর্মী সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
কর্মী সমাবেশে জেলা জামায়াতের আমীর আলী আজম মো. আবু বক্করের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মো. মোবারক হুসাইন।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঝিনাইদহ শহর আমীর হারুন উর রশীদ, জেলা শিবিরের সভাপতি মনিরুজ্জামান মিঠু, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিবিরের সভাপতি হাফেজ আবু মুসাসহ আঞ্চলিক ও জেলা-উপজেলা নেতৃবৃন্দ। কর্মীসভা পরিচালনা করেন ঝিনাইদহ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক আব্দুল আওয়াল।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামী বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে চায়। সেখানে সমাজে উঁচু-নিচু, ছোট-বড় কোনো কিছু থাকবে না। সাবাইকে সমান চোখে দেখতে চাই।
তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সালে আমি ঝিনাইদহে এসেছিলাম দুই শহীদ পরিবারের সাথে দেখা করতে। কিন্তু পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ ছিল যে একটি বাসায় ১৫ মিনিট পর্যন্ত ছিলাম। আরেকটা বাসায় ঢোকার সাথে সাথে নোটিশ পেলাম এই বাসা থেকে এখনি বের হয়ে চলে যেতে হবে। আমি কোনো চোর ছিলাম না। আমি কোনো ডাকাত ছিলাম। আমি কোনো খুনি ছিলাম না। রাহাজানির নায়ক ছিলাম না। আমি দখলদার বাহিনীর নেতা ছিলাম না। চাঁদাবাজাদের গডফাদার ছিলাম না। আমার মতো সাধারণ একজন নাগরিককে চলে যাওয়ার নোটিশ কেন পেলাম। কয়েক মিনিটের অবস্থা যদি এই হয়। ২০০৯ সালে ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঝিনাইদহসহ বাংলাদেশের অবস্থা কী ছিল। এখান থেকে আমরা বুঝতে পারি। এ বাংলাদেশকে সোনার বাংলার কথা বলে তারা শোষণ বাংলায় পরিণত করেছে। ঘরে ঘরে লাশ, পথে প্রান্তরে ছোপ ছোপ রক্ত, তারা জাতিকে উপহার দিয়েছিল। আমি সেই শহীদের পরিবারের সম্মান জানাতে এসেছি। মন বলে শহীদের প্রত্যেক বাবাকে যদি চুম্বন দিতে পারতাম।
জামায়াত আমির বলেন, আজকের এই সমাবেশে উপস্থিত আছেন শহীদ ইবনুল পারভেজের পিতা মাস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন সাহেব। তিনি যখন হাতটি বাড়িয়ে দিচ্ছেন তখন আমি নিজে বুকে ধরে রাখতে পারেনি।
তিনি আবেগ তাড়িত হয়ে বলেন, আমি আর পারব না, আর সকল শহীদের ঘরে যেতে। সকল শহীদদের মাকে, স্ত্রীকে,বোনকে, বাবাকে, ভাইকে, অবুঝ সন্তানদেরকে সালাম জানাতে। তার প্রতি হিসাবে ঝিনাইদহের একটি শিশু আমার প্রয়োজন ছিল। আমি বলেছিলাম আমার হাতে একটি শিশু তুলে দিন। আমি মন ভরে তাকে চুমো দেব। আদর করব। ভালো বাসব। সম্মান জানাব। এই সকল কিছু হবে সেই শহীদ পরিবারের জন্য উৎসর্গ। আমি আমার হাতটি বুকে ধরে রাখতে পারিনি। আমি যে বাসাটির কথা বলেছি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, অন্যায়ভাবে আমাদের দলের নিবন্ধন বাতিল ও প্রতীক কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ৪ দিনের মাথায় আল্লাহতালা তাদের নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। আমাদের জেলার পাশে সাতক্ষীরায় আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ৫জন লোন একসাথে বসতে পারেনি। বাপ-বেটা একসাথে ভাত খাচ্ছে। দুপুর বেলা তাদেরকে তুলে নিয়ে বলেছে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। যাতে তারা বেল পেয়ে মুক্ত হয়ে না আসতে পারে।