বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে জুলাই ও আগস্ট মাসে সংঘটিত গণহত্যার অভিযোগে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
আজ বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এই আদেশ দেন। একইসঙ্গে শেখ হাসিনাকে আগামী ১৮ নভেম্বরের মধ্যে গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ এজলাসে বসেছেন। অন্য দুই বিচারপতি হলেন, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মেহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
তারা এজলাসে বসার পর প্রসিকিউশন টিম আদালত কক্ষে যান। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কয়েকটি আবেদন করা হয় আজ। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদনও করা হয়।
ট্র্যাইব্যুনালের (পুরাতন) মূল ভবনের সংষ্কার কাজ চলমান থাকায় ভবন সংলগ্ন (অস্থায়ী) ট্রাইব্যুনালে আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে এগারোটায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। একপর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারসহ অপর দুই বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
এরপর ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশ দেন। একই সঙ্গে আগামী ১৮ নভেম্বরের মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেন আদালত।
ট্রাইব্যনালের সুচনা বক্তব্যে বিডিআর বিদ্রহে ৭৪ জনকে হত্যা, শাপলা চত্তরে হেফাজতের সমাবেশে হত্যা, র্যাবের বিচার বহির্ভূত হত্যা, জুলাইগণ হত্যাসহ আওয়ামী শাসনামলে মানবতা বিরোধী অপরাধের ঘটনা তুলে ধরেছে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। কার্যতালিকায় রয়েছে তিনটি অভিযোগ।
যে ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হয়েছে, সেখানেই ২৪’র গণঅভ্যুত্থান দমনে চালানো নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞের বিচার শুরু হলো। যেখানে মূল অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা এবং তার দোসররা।
মূল ভবনের সংস্কার কাজ প্রায় শেষের দিকে। পহেলা নভেম্বরের মধ্যে সেখানে বিচার কাজ হবে। এখন পর্যন্ত তদন্ত সংস্থা এবং প্রসিকিউশনে ৫৮টি অভিযোগ জমা পড়েছে। যেগুলোর তদন্ত কাজ চলছে।
প্রসিকিউশন জুলাই ও আগষ্ট গণহত্যায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাইবে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন। অভিযুক্তের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য বিদেশ থেকে আইনজীবী নিয়োগেরও সুযোগ রাখা হয়েছে।
এদিকে, দ্রুততম সময়ে বিতর্কমুক্ত একটি বিচারকাজ সম্পন্ন করতে আশাবাদী ট্রাইব্যুনালের নতুন প্রসিকিউশন টিম। কিন্তু, সাক্ষীদের নিরাপত্তা, ভুক্তভোগীর ক্ষতিপূরণ আইন এবং রাজনৈতিক দলকে সাজা দেওয়ার এখতিয়ারের যে সংশোধনীর কথা বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিতে তার কতোটা হয়- সেটি বোঝা যাবে অধ্যাদেশ জারির পর।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে সংঘটিত অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে গত ৫ আগস্ট দেশ থেকে ভারত চলে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতী সরকার শপথ গ্রহণ করে।
টানা ৩৬ দিনের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, তৎকালীন আওয়ামী লীগ দলীয় ক্যাডারদের হামলায় প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছেন। গুলিতে আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন পাঁচ শতাধিক। আহত হয়েছেন ২৩ হাজার ছাত্র-জনতা। তাদের অনেকে এখনো চিকিৎসাধীন।
আর গণহত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্র্বতী সরকার। এরই অংশ হিসেবে নতুন প্রসিকিউশন টিম ও তদন্ত সংস্থা গঠিত হয়েছে।