ঢাকা ০৫:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

বন্ধ হলো রাজশাহী সিটির ২৮০ কোটি টাকার ছয় উন্নয়ন প্রকল্প

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:১৪:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৩৫৭ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জনদাবির মুখে বন্ধ হলো রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২৮০ কোটি টাকার ছয়টি উন্নয়ন প্রকল্প। এতে কমবে অযাচিত উন্নয়ন ব্যয়। বাতিল হওয়া প্রকল্পের নির্ধারিত অর্থ খরচ করা হবে নগরের সুষম উন্নয়ন ও পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে। এক্ষেত্রে স্থানীয় চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্প নেয়ার পরামর্শ নগর ও অর্থনীতিবিদদের।

প্রশস্ত সড়ক, সবুজ সড়কদ্বীপ আর বাহারি সড়ক বাতি। নান্দনিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন রাজশাহীকে নতুন করে পরিচিত করে তোলে দেশব্যাপী। পরে সেই সুবাদে ২০১৯ সালে সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের নামে, একনেকে তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ পায় রাজশাহী সিটি করপোরেশন। যা ছিল একটি প্রকল্পে প্রতিষ্ঠানটির এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ বরাদ্দ।

তা দিয়ে নগরীর মোহনপুরের রেলক্রসিংয়ে ১৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় একটি ফ্লাইওভার। তৈরি করা হয় কেন্দ্রীয় ঈদগাহ’র নতুন অবকাঠামো। সাথে সংস্কার করা হয় ৪৪টি গোরস্থান ও ঈদগাহ।

একই প্রকল্পের অধীনে প্রক্রিয়াধীন ছিল শেখ কামাল কনভেনশন হল, শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান স্মৃতি কমপ্লেক্স, ভদ্রামোড়ের আন্ডারপাস, হড়গ্রাম কাঁচাবাজারসহ পদ্মা নদী ও চর ঘিরে বেশ কিছু প্রকল্প। এসব প্রকল্প প্রস্তাবনায় মেয়র সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছিলেন ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি প্যাকেজে পাঁচটি ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজকে। যা চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি শুরু করা হয়।

তবে কাজ শুরুর অল্প দিনেই গেল ৩০ জুন মূল প্রকল্পের সময় শেষ হয়। এতে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি ও প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছিল মেয়র লিটন। এ সময় গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ফ্লাইওভার নির্মাণের কারণে যানজট বৃদ্ধি পেলে ক্ষুব্ধ হয় নগরবাসী।

স্থানীয় একজন বলেন, ‘রাস্তার প্রয়োজন সবজায়গায়, সবসময় আছে। এই মুহূর্তে এটার প্রয়োজন ছিল না। আগের চেয়ে রাস্তার পরিস্থিতি অনেক খারাপ হয়েছে। মানুষজন যাতায়াত করতে পারছে না।’

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তোলে নানা নাগরিক সংগঠন। নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনাবিদদের সাথে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, স্থানীয় চাহিদাকে গুরুত্ব না দিয়ে প্রকল্প প্রণয়নে বাধাগ্রস্ত হয়েছে নগরের সুষম উন্নয়ন। যার ফলে প্রান্তিক শহর এখনও বঞ্চিত।

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল ওয়াকিল বলেন, ‘আমি রাস্তা পরিবর্তন করলাম, কিন্তু রাস্তা উন্নয়নের অন্যান্য যে আনুষাঙ্গিক ব্যাপারগুলো আছে সেগুলো আমাদের অনেক দুর্বলতা আছে। এটা ঠিকমতো ম্যানেজ করতে পারলে এখন যে ফ্লাইওভারের কথা বলছি সেটার দরকার হতো না।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক প্রফেসর ফরিদ উদ্দীন খাঁন বলেন, ‘রাস্তা ভাঙা এখনও সেখানে অবকাঠামোর উন্নতি হয়নি। স্ট্রিটলাইট নেই অনেক জায়গায়। সে হিসেবে সুষম উন্নয়নটা খুবই জরুরি। উন্নয়নের ক্ষেত্রে ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে না পারলে উন্নয়নের সুফল সবাই পাবে না।’

সম্প্রতি অসঙ্গতি থাকায় ২৮০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের ছয় প্রকল্প বাতিল করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন।

রাজশাহী সিটি কপোরেশনের প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘একেবারে অপচয় আর দুর্নীতির কোনোরকম সুযোগ থাকবে না। এবং দ্রুততম সময়ে শেষ করতে চাই যেন নগরবাসী কোনোভাবে ভোগান্তির মধ্যে না পরে। টেন্ডার প্রক্রিয়া যেগুলো ঠিকঠাকমতো হয়েছে সেগুলো সচল থাকবে। আর যেগুলো ঠিকমতো হয়নি সেগুলো বাতিল হবে।’

তবে ১০ থেকে ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ায়, অব্যাহত রাখা হয়েছে তিনটি প্যাকেজে পাঁচটি ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ। তবে সেখানেও হচ্ছে সংস্কার। ৭২২ কোটি টাকার এ প্রকল্পের ৪৪০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার কাজ হচ্ছে না। অপরিকল্পিত ও বন্ধ হওয়া প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত অর্থ নগরীর পরিচ্ছন্নতা, প্রান্তিক শহর ও পাড়া মহল্লার সড়ক ও পরিবেশগত উন্নয়নে কাজে লাগানো হবে বলে জানালেন রাজশাহী সিটি কপোরেশনের বর্তমান প্রশাসক।

তিনি বলেন, ‘কোথাও কোথাও রাস্তাঘাট মেরামত করা দরকার, উঁচু করা দরকার, কোথাও আবর্জনা দেখা যাচ্ছে। সেগুলো ঠিকঠাক করা দরকার। ড্রেনেজ সিস্টেম উন্নত করা দরকার। এই জায়গুলোতে আমরা মূল ফোকাস করা দরকার।’

৩০টি ওয়ার্ডের ছোট্ট এ নগরে মধ্য শহর ব্যতীত পাড়া মহল্লা ও পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়ন এবং পরিবেশগত পরিবর্তনে রাজশাহী সিটি কপোরেশন মনোযোগী হবে বলেও জানিয়েছেন প্রশাসক।

নিউজটি শেয়ার করুন

বন্ধ হলো রাজশাহী সিটির ২৮০ কোটি টাকার ছয় উন্নয়ন প্রকল্প

আপডেট সময় : ০১:১৪:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

জনদাবির মুখে বন্ধ হলো রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২৮০ কোটি টাকার ছয়টি উন্নয়ন প্রকল্প। এতে কমবে অযাচিত উন্নয়ন ব্যয়। বাতিল হওয়া প্রকল্পের নির্ধারিত অর্থ খরচ করা হবে নগরের সুষম উন্নয়ন ও পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে। এক্ষেত্রে স্থানীয় চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্প নেয়ার পরামর্শ নগর ও অর্থনীতিবিদদের।

প্রশস্ত সড়ক, সবুজ সড়কদ্বীপ আর বাহারি সড়ক বাতি। নান্দনিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন রাজশাহীকে নতুন করে পরিচিত করে তোলে দেশব্যাপী। পরে সেই সুবাদে ২০১৯ সালে সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের নামে, একনেকে তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ পায় রাজশাহী সিটি করপোরেশন। যা ছিল একটি প্রকল্পে প্রতিষ্ঠানটির এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ বরাদ্দ।

তা দিয়ে নগরীর মোহনপুরের রেলক্রসিংয়ে ১৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় একটি ফ্লাইওভার। তৈরি করা হয় কেন্দ্রীয় ঈদগাহ’র নতুন অবকাঠামো। সাথে সংস্কার করা হয় ৪৪টি গোরস্থান ও ঈদগাহ।

একই প্রকল্পের অধীনে প্রক্রিয়াধীন ছিল শেখ কামাল কনভেনশন হল, শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান স্মৃতি কমপ্লেক্স, ভদ্রামোড়ের আন্ডারপাস, হড়গ্রাম কাঁচাবাজারসহ পদ্মা নদী ও চর ঘিরে বেশ কিছু প্রকল্প। এসব প্রকল্প প্রস্তাবনায় মেয়র সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছিলেন ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি প্যাকেজে পাঁচটি ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজকে। যা চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি শুরু করা হয়।

তবে কাজ শুরুর অল্প দিনেই গেল ৩০ জুন মূল প্রকল্পের সময় শেষ হয়। এতে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি ও প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছিল মেয়র লিটন। এ সময় গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ফ্লাইওভার নির্মাণের কারণে যানজট বৃদ্ধি পেলে ক্ষুব্ধ হয় নগরবাসী।

স্থানীয় একজন বলেন, ‘রাস্তার প্রয়োজন সবজায়গায়, সবসময় আছে। এই মুহূর্তে এটার প্রয়োজন ছিল না। আগের চেয়ে রাস্তার পরিস্থিতি অনেক খারাপ হয়েছে। মানুষজন যাতায়াত করতে পারছে না।’

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তোলে নানা নাগরিক সংগঠন। নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনাবিদদের সাথে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, স্থানীয় চাহিদাকে গুরুত্ব না দিয়ে প্রকল্প প্রণয়নে বাধাগ্রস্ত হয়েছে নগরের সুষম উন্নয়ন। যার ফলে প্রান্তিক শহর এখনও বঞ্চিত।

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল ওয়াকিল বলেন, ‘আমি রাস্তা পরিবর্তন করলাম, কিন্তু রাস্তা উন্নয়নের অন্যান্য যে আনুষাঙ্গিক ব্যাপারগুলো আছে সেগুলো আমাদের অনেক দুর্বলতা আছে। এটা ঠিকমতো ম্যানেজ করতে পারলে এখন যে ফ্লাইওভারের কথা বলছি সেটার দরকার হতো না।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক প্রফেসর ফরিদ উদ্দীন খাঁন বলেন, ‘রাস্তা ভাঙা এখনও সেখানে অবকাঠামোর উন্নতি হয়নি। স্ট্রিটলাইট নেই অনেক জায়গায়। সে হিসেবে সুষম উন্নয়নটা খুবই জরুরি। উন্নয়নের ক্ষেত্রে ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে না পারলে উন্নয়নের সুফল সবাই পাবে না।’

সম্প্রতি অসঙ্গতি থাকায় ২৮০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের ছয় প্রকল্প বাতিল করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন।

রাজশাহী সিটি কপোরেশনের প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘একেবারে অপচয় আর দুর্নীতির কোনোরকম সুযোগ থাকবে না। এবং দ্রুততম সময়ে শেষ করতে চাই যেন নগরবাসী কোনোভাবে ভোগান্তির মধ্যে না পরে। টেন্ডার প্রক্রিয়া যেগুলো ঠিকঠাকমতো হয়েছে সেগুলো সচল থাকবে। আর যেগুলো ঠিকমতো হয়নি সেগুলো বাতিল হবে।’

তবে ১০ থেকে ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ায়, অব্যাহত রাখা হয়েছে তিনটি প্যাকেজে পাঁচটি ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ। তবে সেখানেও হচ্ছে সংস্কার। ৭২২ কোটি টাকার এ প্রকল্পের ৪৪০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার কাজ হচ্ছে না। অপরিকল্পিত ও বন্ধ হওয়া প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত অর্থ নগরীর পরিচ্ছন্নতা, প্রান্তিক শহর ও পাড়া মহল্লার সড়ক ও পরিবেশগত উন্নয়নে কাজে লাগানো হবে বলে জানালেন রাজশাহী সিটি কপোরেশনের বর্তমান প্রশাসক।

তিনি বলেন, ‘কোথাও কোথাও রাস্তাঘাট মেরামত করা দরকার, উঁচু করা দরকার, কোথাও আবর্জনা দেখা যাচ্ছে। সেগুলো ঠিকঠাক করা দরকার। ড্রেনেজ সিস্টেম উন্নত করা দরকার। এই জায়গুলোতে আমরা মূল ফোকাস করা দরকার।’

৩০টি ওয়ার্ডের ছোট্ট এ নগরে মধ্য শহর ব্যতীত পাড়া মহল্লা ও পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়ন এবং পরিবেশগত পরিবর্তনে রাজশাহী সিটি কপোরেশন মনোযোগী হবে বলেও জানিয়েছেন প্রশাসক।