শিক্ষার্থী বিক্ষোভ: পদত্যাগ করছেন ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান
- আপডেট সময় : ১১:১৭:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪
- / ৩৬৪ বার পড়া হয়েছে
এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের দিনভর বিক্ষোভের মধ্যে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। সোমবার তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
পছন্দমতো ফলের দাবিতে দুপুর থেকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড অবরুদ্ধ করে রেখেছে একদল এইচএসসি পরীক্ষার্থী। তাদের দাবি, প্রকাশিত ফলাফলে তারা বৈষম্যের শিকার হয়েছে। সব বিষয়ের ফল এসএসসির ভিত্তিতে দেওয়ার দাবিও তাদের। শিক্ষার্থীরা তাদের উপর হামলার অভিযোগ করলেও বোর্ড বলছে, কিছু শিক্ষার্থী বোর্ডের চেয়ারম্যানের কক্ষ ভাঙচুর করেছে।
গত ১৫ অক্টোবর প্রকাশ হয় এ বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল। এ বছর পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এছাড়া জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন শিক্ষার্থী।
এতে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার কমেছে। গত বছর ১১টি বোর্ডে গড় পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এ বছর পাসের হার কমেছে দশমিক ৮৬ শতাংশ। তবে গতবছরের চেয়ে এ বছর ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ ছাত্রী বেশি পাস করেছে।
তবে পাসের হার কমলেও জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা বেড়েছে অনেক। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৯২ হাজার ৩৬৫ জন শিক্ষার্থী। চলতি বছর জিপিএ-৫ পেয়েছেন এক লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। সে হিসেবে এবার জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা বেড়েছে ৫৩ হাজার ৫৪৬ জন।এবার এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ৩০ জুন।
সাতটি পরীক্ষা হওয়ার পর সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে কয়েক দফায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তখন পর্যন্ত ছয়টি বিষয়ের পরীক্ষা বাকি ছিল। এ ছাড়া ব্যবহারিক পরীক্ষাও বাকি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। পরে ১১ আগস্ট থেকে নতুন সময়সূচিতে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর প্রতিবাদে সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে পরীক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও ঘেরাও করলে এবারের এইচএসসি বা সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করতে বাধ্য হয় শিক্ষা বিভাগ।
এবারের এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হবে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বিষয় ম্যাপিং করে। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এ বছর অংশ নেন মোট ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ শিক্ষার্থী।ফল প্রকাশের পর থেকেই শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অভিযোগ করে আসছিল যে তারা বৈষম্যের শিকার।
এই শিক্ষার্থীদের একটি দল রোববার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বোর্ড অবরোধ করে। সব বিষয়ের ফল এসএসসির বিষয়ভিত্তিক ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে দেওয়ার দাবি তাদের। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সামনে তাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে বোর্ডের কর্মচারীরা এ হামলা করেছে। এ সময় অন্তত ৫ জন আহত হয় বলে দাবি তাদের।
আহতরা শিক্ষার্থীরা হলেন, সরকারি শাহবাজপুর কলেজের মো. সাগর (১৭), নারায়ণগঞ্জ কলেজের শাহরিয়ার (১৮), কিশোরগঞ্জের ওয়ালি নেওয়াজ খান কলেজের ওয়াহিদ (১৯), বাঘাপুর স্কুল এন্ড কলেজের ফাহমিনা হোসেন (১৭) ও গোপালগঞ্জের শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজের আশুতোষ (১৮)।
এদিকে বোর্ড কর্মকর্তাদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীরাই চেয়ারম্যানের কক্ষ ভাঙচুর করেছেন। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি হবে বলে বিকেলে জানিয়েছিলেন চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।
আন্তঃশিক্ষাবোর্ডের সমন্বয়ক অধ্যাপক তপন কুমার বলেন, ‘একটা গ্রুপ বলছে নিচে যাই, আরেকটা বলছে না এখানেই ঢুকব। জোর করে তারা আমার রুমে ঢুকে গেছে। আরেকটা গ্রুপ বলতেসে যে চলে আসো। এদের মধ্যেই ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। তখন আমার রুমে যে কাগজপত্র ছিল, আপনারা দেখেছেন সেখানে কিছু ভাঙচুর হয়েছে। সেভাবে যদি তারা কোনো আঘাত পেয়ে থাকে, এবং আমরা বলছি যে তারা যেহেতু একটা অভিযোগ করেছে আর এখানে কিছু ঘটনা হয়েছে, আমরা একটি তদন্ত কমিটি করেছি।’
একই দাবিতে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডও অবরোধ করে পরীক্ষার্থীদের একাংশ।