শুধু দেশের রিজার্ভেই ভূমিকা রাখছে না প্রবাসী আয়, সমৃদ্ধ হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি। অবকাঠামো উন্নয়ন, কর্মসংস্থানসহ নানাখাতে বিনিয়োগ হচ্ছে রেমিট্যান্সের অর্থ। যদিও বিনিয়োগে সঠিক পরিকল্পনার অভাব আছে বলে জানান অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, কমাতে হবে প্রবাসী আয়ের লাগামহীন খরচ আর বাড়াতে হবে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ।
কুমিল্লার কালির বাজার ইউনিয়নের ধনুয়াখলা। নীরব শান্ত আর সমৃদ্ধিতে ভরা একটি আদর্শ গ্রামে রূপ নিয়েছে প্রবাসী আয়ে ভর করে। পুকুর ভরা মাছ আর বাড়ির উঠানে তরতর করে বেয়ে উঠছে কার্তিকের পুইয়ের ডগা। প্রবাসী আয়ে গ্রামগুলো কীভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে সৌদি প্রবাসী ওমর ফারুক মোটাদাগে তার বর্ণনাও দিলেন।
ওমরু ফারুক বলেন, ‘প্রবাসে থাকার কারণে আমাদের গ্রামে একটা কাঁচা ভিটা ঘর পাবেন না। বহুতল আধুনিক বাড়ি ছাড়া কোনো বাড়ি নেই।’
ধনুয়াখলার বাসিন্দারা জানান, প্রবাসীর অর্থে নির্মাণ হচ্ছে নতুন নতুন স্থাপনা। আর এতে গতি ফিরেছে স্থানীয় ব্যবসা বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানে।
আরেকজন প্রবাসী বলেন, ‘আমাদের এখানে ৯৫ শতাংশ লোকই প্রবাসে থাকে। প্রবাসে থেকে তারা সফল ব্যবসায়ী।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, গেল সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স আসে ২৮ হাজার কোটি টাকার বেশি, যা গত চার বছরের মধ্যে একক মাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। কিন্তু প্রশ্ন, দেশের রিজার্ভে ভূমিকা রাখা এই প্রবাসী আয়ে কতটা টেকসই ব্যবহার হচ্ছে স্থানীয় ও ব্যক্তি পর্যায়ে? অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও কৃষি অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, প্রবাসীদের পাঠানো টাকার যুতসই বিনিয়োগে পরিকল্পনা থাকা দরকার।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, ‘বিদেশে যারা কাজ করে তাদের আস্থা ফিরে এসেছে। ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে তারা রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে।’
ব্র্যাকের হেড অব মাইগ্রেশন শরিফুল হাসান বলেন, ‘প্রবাসী আয় যদি বড় ভাবে উৎপাদনশীল খাতে কাজে লাগানো যেত তাহলে ছোট ছোট ব্যবসা গড়ে উঠতো সেখানে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেতো।’
পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের নানা প্রান্তে বাংলাদেশের এক কোটি ৩০ লাখের বেশি প্রবাসী থাকেন। তাদের পাঠানো অর্থে শুধু জাতীয় অর্থনীতিই সমৃদ্ধ হচ্ছে না, গ্রামীণ অবকাঠামোসহ আঞ্চলিক উন্নয়নেও এর ভূমিকা বাড়ছে দিন দিন, যার টেকসই ব্যবহারে রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার তাগিদ বিশ্লেষকদের।