রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ-অভিসংশন নিয়ে আইনে যা বলে !
- আপডেট সময় : ০১:৪৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪
- / ৩৬১ বার পড়া হয়েছে
দেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করবেন নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। আর রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করার ক্ষমতাও রয়েছে জাতীয় সংসদের হাতেই। জাতীয় সংসদের অধিবেশন আহ্বান করেন রাষ্ট্রপতি। সংসদ ভেঙেও দিতে পারেন রাষ্ট্রপতি। সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতি নিয়োগসহ এসব ক্ষমতা দেয়া আছে।
জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করতে পারেন। পদে থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির করার আইনগত সুযোগ নেই। দায়িত্ব পালনকালে রাষ্ট্রপতির সকল কাজে দায়মুক্তি সংবিধান কর্তৃক দেয়া রয়েছে।
তবে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘন বা অসদাচরণের অভিযোগে অভিসংশন করা যাবে। যার জন্য দরকার সংসদে সংসদ সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামত। এই প্রস্তাবের চিঠি স্পিকারের কাছে দিতে হবে। এক মাস পর আলোচনার জন্য স্পিকার অধিবেশনে উত্থাপন করবেন।
রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে দায়িত্ব পালন করবেন স্পিকার। ডেপুটি স্পিকার তখন স্পিকারের দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া শারীরিক বা মানসিকভাবে অসামর্থ্যের কারণেও রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা যাবে।
তবে গণঅভ্যুত্থানে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের দায়িত্ব নেয়ার পর দ্বাদশ সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি। পদত্যাগ করেন স্পিকারও।
এমন পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের প্রায় আড়াই মাস পর জাতীয় দৈনিকে রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন সাক্ষাৎকারে জানান, শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী থেকে পদত্যাগের কোনো কাগজপত্র তার কাছে নেই। এই বক্তব্যে সব মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়ার পর রাষ্ট্রপতির অপসারণের আইনি কোনো সুযোগ আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। সংসদ ভেঙে দেয়া হয়েছে। অপসারণের পদক্ষেপ নিতে আইনগত সমস্যা নেই।’
তিনি বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী পালাচ্ছেন এবং সেনা প্রধানের হাতে তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করে যাচ্ছেন। তাহলে সেনা প্রধানের হাতে থাকবে। এই প্রশ্নের উত্তর রাষ্ট্রপতির চেয়ে সবচেয়ে ভালো দিতে পারবেন সেনা প্রধান। উনার কাছে কী আছে, প্রধানমন্ত্রী তো উনাদেরই তত্ত্বাবধানে গেছেন। সেটা হচ্ছে পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারতো, রক্তপাত হতে পারতো। সেটা এড়ানোর জন্য তারা হয়তো তাৎক্ষণিক একটা ব্যবস্থা হিসেবে এটা করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাহলে সাংবিধানিক শূন্যতার যে আলাপটা আমরা এখন তুলছি সেরকম সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হওয়ার কিছু নেই, এখানে আইনের বিশাল ব্যতয়ও ঘটারও কিছু নেই।’
সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন মনে করেন রাষ্ট্রপতির স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করা উচিত।
তিনি বলেন, ‘তিনি কোন পরিপ্রেক্ষিতে কী উদ্দেশে আজকে এই কথা বললেন যে তার কাছে কোনো পদত্যাগপত্র নেই। এটা আমার কাছে অন্তত বোধগম্য হচ্ছে না। এর পেছনে হয়তো কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এবং সেই উদ্দেশ্য কী সেটা তিনি নিজেই বলতে পারেন।’
এদিকে গতকাল রোববার রাতে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জন বিভাগের উপপ্রেস সচিব মুহা. শিপলু জামান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ইস্যুতে রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে প্রচারণা চালানো হয়েছে তা জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে।
এ বিষয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও দেশত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাংবিধানিক বৈধতার ওপর যত প্রশ্ন তৈরি হয়েছে সেগুলোর যাবতীয় উত্তর স্পেশাল রেফারেন্স নং-০১/২০২৪ এ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গত ৮ আগস্টের আদেশে প্রতিফলিত হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, উল্লেখ্য, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি ৮ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামত চাওয়ার প্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ এ মতামত দিয়েছিলেন। মীমাংসিত এ বিষয়ে নতুন করে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অস্থিতিশীল কিংবা বিব্রত করা থেকে বিরত থাকার জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
স্পেশাল রেফারেন্সে বলা হয়, দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যেহেতু প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিগত ৬ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়েছেন, সেহেতু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮(৩) অনুসারে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণ করা সম্ভব নয় ।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করার বিষয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ হতে ০৮/০৮/২০২৪ তারিখের ১০.০০.০০০০.১২৭.৯৯.০০৭.২০.৪৭৫ নং স্মারকে প্রেরিত পত্রে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে বর্ণিত জনগুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামত যাচনা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি-জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের বক্তব্য শোনা হলো।
এমতাবস্থায়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের কোনো বিধান না থাকায় উল্লিখিত প্রশ্নের বিষয়ে বাংলাদেশের সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত উপদেষ্টামূলক এখতিয়ার প্রয়োগ করে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ এই মতামত প্রদান করছে যে, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে জরুরি প্রয়োজনে মহামান্য রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনার নিমিত্ত অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য উপদেষ্টা নিযুক্ত করতে পারবেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি উক্তরূপে নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য উপদেষ্টাগণকে শপথ পাঠ করাতে পারবেন।
দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন মো. সাহাবুদ্দিন।