আওয়ামী লীগ কি রাজনীতিতে ফিরতে পারবে?
- আপডেট সময় : ০৩:১০:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪
- / ৩৬৫ বার পড়া হয়েছে
নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পক্ষে নয় বিএনপিসহ কয়েকটি দল। তারা মনে করে, রাজনীতি থেকে বিরত রাখার বিষয়টি ছেড়ে দিতে হবে আদালত ও জনগণের ওপর। এদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দলটিকে নিষিদ্ধ করলে উল্টো জনগণের সহানুভূতি সৃষ্টি হবে। হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার ও সংস্কার করে ঘুরে দাঁড়াতে হবে আওয়ামী লীগকেই।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর গত ৫ আগস্ট সারা দেশের মত রাজধানীতেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
এরপর থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় নেতা-কর্মী বা নিরাপত্তা কর্মী কাউকেই দেখা যায়নি। সরকার পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও আত্মগোপনে আছেন। অনেকে আবার গ্রেপ্তারও হয়েছেন। দলটি এখন ছিন্নবিচ্ছিন্ন। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফিরে আসতে পারবে কিনা সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. রাশেদা রওনক খান বলেন, ‘অপরাধ করলে তো দায় স্বীকার করতে হবে। দায় স্বীকার করে নেওয়ার মাঝেই আসলে একটি গণতান্ত্রিক চর্চার সূচনা ঘটবে। একেবারেই ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে গেছে, ফ্যাসিজমের একটা চর্চা হয়েছে। দায় স্বীকার করেই আসলে রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগকে খেলতে হবে, যা পরিস্থিতি আমরা দেখতে পাচ্ছি। এটা না হলে অনেক মহল থেকে কিন্তু দাবি উঠছে রাজনীতি করার পথ বন্ধ হয়ে যাবে আওয়ামী লীগের জন্য।’
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতা হত্যাকাণ্ডের দায়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে নানা মহলে চলছে আলোচনা। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে গত বুধবার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে প্রস্তাব এসেছে। সবার ঐকমত্য হওয়ার বিষয় আছে। বৃহত্তর সংলাপের বিষয়, সব দলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
অবশ্য বিএনপিসহ কয়েকটি দল মনে করে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে জনগণই। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক বিষয়। রাজনৈতিকভাবে জনগণের মধ্য থেকে উঠে আসতে হবে এর ফয়সালা, এর সিদ্ধান্ত এবং ব্যাপক সংলাপের মধ্য দিয়ে। নির্বাহী আদেশে নয়। এটা আদালতের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা হতে হবে।’
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক উপদেষ্টাই এ ব্যাপারে কথা বলেছেন। আমরা মনে করি, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এ দেশের জনগণই নেবে।’
আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে যেন অংশ নিতে না পারে, সে ব্যাপারে ছাত্র নেতৃত্বসহ বিভিন্ন মহল থেকেও সরকারের ওপর বাড়ছে চাপ।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোর্তিময় বড়ুয়া বলেন, ‘পুরো দলটাকে তাদের সমস্ত কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করতে পারার মতো আইনও কিন্তু আছে। তারা যেভাবে গণহত্যা চালিয়েছেন ২০২৪–এ, এগুলোতো মানুষ ভুলবে না এতো তাড়াতাড়ি। এ রকম একটি রাজনৈতিক দলকে যখন আপনি ব্যান করার জন্য উঠে পড়ে লাগবেন বস্তুত এটা তাদের পক্ষেই কাজ করবে। মানুষের সহানুভূতি অর্জন করতে তাদের সহযোগিতা করবে।’
তবে শেষ পর্যন্ত কী হয় তা দলটির অনুশোচনার ওপরেও নির্ভর করছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।