স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে কাঁচাবাজারে
- আপডেট সময় : ০১:১৫:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪
- / ৩৫৫ বার পড়া হয়েছে
শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়ায় কাঁচাবাজারে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। সপ্তাহ ব্যবধানে সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। তবে বেড়েছে পেঁয়াজ ও আলুর দাম। গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩৫ টাকায়। আর কেজিকে ৫ টাকা বেড়ে আলুর দাম হয়েছে ৬০ টাকা। ক্রেতাদের মতে, মাছের বাজারের অস্থিরতা কাটছে না কোনোভাবেই। অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, ফিডের দাম বৃদ্ধির পর থেকেই মাছের বাজার বাড়তি যাচ্ছে, যা আর কমেনি।
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) রাজধানীর রামপুরা, মালিবাগ, গুলশান, শেওড়াপাড়া ও তালতলা বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
রাজধানীর এসব বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতিটি সবজি কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা কমেছে। এসব বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি কচুরমুখি কেজিতে ২০ টাকা কমে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন কেজিতে ৪০ টাকা কমে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, পটল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকায়, প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধুন্দুল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙ্গা ১০০ টাকা শসা ৫০ থেকে ৮০ টাকা এবং কাঁচামরিচ কেজিতে ২০০ টাকা কমে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজার সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, সপ্তাহজুড়ে তেজ ছড়ানো কাঁচামরিচের দামও কিছুটা কমতে শুরু করেছে। প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা দরে, যা গত সপ্তাহেও ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। তবে নিম্নমুখী শাকের বাজারও। লালশাকের আঁটি ২০ থেকে ২৫ টাকা, পাটশাক ১৫ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা, লাউশাক ৪০ টাকা, মুলাশাক ২০ টাকা, ডাঁটাশাক ২৫ টাকা, কলমিশাক ১৫ থেকে ২০ টাকা ও পালংশাক বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়।
গত সপ্তাহে বাড়তির দিকে থাকা কাঁচা মরিচের দাম কমে চলতি সপ্তাহে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়, আর পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৫০-১৬০ টাকা দরে।
ক্রেতা মারুফ মিয়া বলেন, বাজারে শাক-সবজির দাম অনেকটাই কমে এসেছে। তবে আরেকটু কমলে আমাদের জন্য ভালো হয়৷ সরকার মনিটরিং বজায় রাখলে বাজার নাগালে রাখা সম্ভব।
তিনি বলেন, আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ, প্রতিদিন মাছ-মাংস খাই না। শাকসবজি খেয়েই বাঁচি, এগুলোর দাম বেশি থাকলে আমাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।
তবিবুর রহমান নামে আরেক ক্রেতা বলেন, প্রায় মাসখানেক ধরে দেখছি বাজার চড়া, অথচ নতুন সরকারের কাছে মানুষের অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সে অনুযায়ী আমরা এখনও তেমন কিছুই দেখছি না। এই মুহূর্তে সরকারের উচিত বাজারে তদারকি বাড়ানো এবং যেকোনো মূল্যে এই নিয়ন্ত্রণ করা। নয়ত সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে সরকার ব্যর্থ হবে।
সবজির বাজারের দাম প্রসঙ্গে বিক্রেতা রুহুল আমিন বলেন, বাজারে সবজির দাম কমেছে। ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বেশিরভাগ সবজি পাওয়া যাচ্ছে। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে সবজির দাম আরও কমে যাবে।
এদিকে গত সপ্তাহের মতো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মুরগি। গত সপ্তাহের মতোই ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে সোনালি কক মুরগি কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি হাইব্রিড ২৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৫২০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ৩১০ টাকা এবং সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে শীতকালীন সবজি শিম ১৬০ থেকে ২০০ টাকা কেজি, ফুলকপি ৪০ থেকে ৬০ টাকা পিস, বাঁধাকপি ছোট সাইজের ৬০ টাকা পিস, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, গাজর ১৬০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা এবং জলপাই ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
লেবুর হালি ২০ থেকে ৪০ টাকা, ধনে পাতা কেজিতে ২০০ টাকা কমে ৪০০ টাকা কেজি, কাঁচা কলা হালি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, চাল কুমড়া ৬০ টাকা পিস এবং মিষ্টি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে লাল শাক ২০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৪০ টাকা, মুলা শাক ২০ টাকা, কলমি শাক ১৫ টাকা, পুঁই শাক ৪০ টাকা এবং ডাঁটা শাক ৩০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
বাজারগুলোতে সপ্তাহ ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে ১৪০ টাকা, আদা ৩২০ টাকা, রসুন ২২০ টাকা, নতুন আলু ১২০ টাকা, বগুড়ার আলু ১০০ টাকা এবং পুরান আলুর কেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে গরুর মাংস কেজি প্রতি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১১৫০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকায়, হাঁসের ডিমের ডজন ২৩০ টাকায়, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
গত সপ্তাহের মতো চলতি সপ্তাহেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ। বাজারগুলোতে এক কেজি চাষের শিং মাছ আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকার ভেদে) ৩৮০ থেকে ৫০০ টাকা, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১১০০ টাকা, মৃগেল ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ১৪০০ টাকা, বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, পোয়া মাছ ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫৫০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১৩০০ টাকায়, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকায়, পাঁচ মিশালি মাছ ২২০ টাকা, রূপচাঁদা ১২০০ টাকা, বাইম মাছ ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, দেশি কই ১২০০ টাকা, শোল মাছ ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, আইড় মাছ ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ টাকা এবং কাইকলা বা কাইক্ক্যা মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বেসরকারি চাকরিজীবী তুহিন আহমেদ বলেন, বাজারের সব ধরনের পণ্যের দাম উঠানামা করলেও ব্যতিক্রম দেখি মাছের বাজারে। দীর্ঘদিন যাবত মাছের দাম কমার কোনো নাম নেই। সবসময় অতিরিক্ত দামে সব ধরনের মাছ কিনতে হচ্ছে। একসময় পাঙাস, তেলাপিয়া, চাষের কই এসব মাছের দাম কম থাকলেও বর্তমান বাজারে এগুলোরও দাম বেশি।
রামপুরা বাজারের মাছ বিক্রেতা বিদ্যুৎ সরকার বলেন, মূলত মাছের খাবারের দাম বৃদ্ধির পর থেকে বাজারে মাছের দাম বাড়তি। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত আর মাছের দাম কমেনি। আমরা পাইকারি বাজারে গেলেও বাড়তি দামেই মাছ কিনে আনতে হয়, সেই প্রভাব পড়ে খুচরা বাজারে।
অন্যদিকে ৫ কেজি সোয়াবিন তেল ৮১৮ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, মিনিকেট চাল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা এবং নাজিশাইল ৭৫ থেকে ৮২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।