জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা না গেলে সংকট বাড়বে রাজনীতিতে
- আপডেট সময় : ০৩:১৫:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪
- / ৩৫৮ বার পড়া হয়েছে
রাষ্ট্রপতি ও সংবিধান ইস্যুতে যখন হঠাৎ করেই রাজনীতিতে মতভেদের সুর, তখন তরুণরা বলছেন, ঐক্যে ধরে না রাখলে সুযোগ নিতে পারে ফ্যাসিবাদী শক্তি। একই ভাবনা বিএনপি ও জামায়াতের মত দলগুলোর। বলছেন, দেশের রাজনীতিতে যে ইতিবাচক বদল ঘটেছে, তা ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে। দলীয় কর্মসূচির ভিন্নতা থাকলেও স্বৈরাচার বিরোধী শক্তি ঠেকাতে একসাথে কাজ করার কথা বলছেন বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল। বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা না গেলে সংকট বাড়বে রাজনীতিতে।
দ্বিতীয় স্বাধীনতাখ্যাত ছাত্র জনতার এই গণঅভ্যুত্থানে ঐক্যের যে মিনার রচিত হয়েছে এই জনপদে, মুক্তিযুদ্ধ উত্তর সময়ের সমীকরণে বিরল, সেটা স্বীকার করছে সবাই।
দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কর্তৃত্ববাদী শাসকের, প্রতিটি পর্যায় থেকে সর্বব্যাপী পলায়নের যে দৃশ্যপট রচনা হয়েছে এখানে, সেখানে মতাদর্শের ভেদ ভুলে জুলুমের অবসান ঘটাতে ছাত্র জনতার সাথে এক কাতারে দাঁড়িয়ে গেছে রাজনৈতিক দলগুলোও। সফল গণঅভ্যুত্থানের পর এই ঐক্যের প্রথম ফসল, প্রশ্নবিদ্ধ সংবিধানের বাইরে গিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
কিন্তু এ সরকারের আড়াই মাসের যখন প্রতিটি শিবিরে আলোচনার বিষয়বস্তুর হওয়ার কথা ছিল প্রতিশ্রুত সংস্কার, তার বদলে রাজনীতির মাঠে দেখা যাচ্ছে স্বৈরাচার বিরোধীতার নামে যারা এক হয়েছিলো, তাদের নানামাত্রিক বিভাজন। এটি বড় আকার ধারণ করছে, রাষ্ট্রপতির অপসারণ ইস্যু ঘিরে। সংবিধান না জাতীয় আকাঙ্ক্ষা পূরণ, এই ইস্যুতে বেড়েছে দূরত্ব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি অপসারণে এই মুহূর্তে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি করবে যা জাতির জন্য কাম্য না।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার দোহায় দিয়ে তারা চপ্পুকে রাষ্ট্রপতি পদে দেখতে চাই।’
আর এই যে অনৈক্যের সুর, এখানেই ফ্যাসিবাদ পুনরুত্থানের শঙ্কা দেখছেন তরুণ নেতারা।
বিএনপির নীতি নির্ধারকরা বলছেন, সকল অনৈক্যের সীমানা ভেঙে ঐক্যের যে চেতনা দেশের রাজনীতিতে নতুন আশা দেখিয়েছে তা সুসংহত রাখতে চেষ্টা করছে তাদের দল। আর জামায়াত নেতারা বলছেন, যে কোন সংকটের সমাধান করতে আলোচনার সকল দ্বার খোলা রাখতে চান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এত বছর আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। আমরা রক্ত দিয়েছি। আমরা কষ্ট করছি। আমরা তো সরকারকে সহযোগিতা করেই যাচ্ছি। জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ মাধ্যমে এই সমাধান দিতে হবে।’
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে যেভাবে বিগত সরকারে পতনে একসঙ্গে আন্দোলন, কর্মসূচি দিয়ে ভূমিকা রেখেছি। এর পরেও আমরা করে যাচ্ছি।’
ঐক্য এবং সমঝোতার ব্যাপারে অবশ্য বেশিই স্পষ্টবাদী ক্ষমতার রাজনীতিতে অপেক্ষাকৃত কম ভাগীদার ও ছোট দলগুলো। তারা বলছে, এখানে সবচেয়ে বড় দায় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর।
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের যে চেতনা সেটা যদি ধারণ করে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হতে পারে সেটাই এখন মূল বিষয়।’
রাষ্ট্রপতি ও সংবিধান সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে রাজনৈতিক ঐক্য না হলে অন্তর্বর্তী সরকার যেমন সংকটে পড়বে তেমনি গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ভূলুণ্ঠিত হবার কথা বলছেন এ রাজনীতি বিশ্লেষক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি পদত্যাগে একটা ঐকমত্য দরকার। রাজনৈতিক দলগুলো যদি এক না হতে পারে সেক্ষেত্রে সরকার দুর্বল হয়ে যায়।’
জনজীবনে দ্রব্যমূল্যের চাপ, গণহত্যার বিচারে ধীরগতি, প্রশাসনের অসহযোগিতা কিংবা রাজপথের হরেক রকম আন্দোলনের বিপরীতে যখন বেসামাল হঠাৎ দায়িত্ব পাওয়া একটি সরকার, তখন এই প্রতিবিপ্লবের শঙ্কা নিয়েই আলোচনা হচ্ছে পক্ষে বিপক্ষে। রাজনীতি বিশ্লেষকরা এটিই বলছেন, এমন বহুমুখী সংকটে প্রধানত দেশের রাজনীতিকদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে কোনপথে চান।