প্রায় একমাস বাদে ইরানে পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। ডেইজ অফ রিপেনটেন্স নামের এই অভিযানে অংশ নেয় ডজনখানেক যুদ্ধবিমান। তেহরান, কারাজ ও সিরাজসহ বেশ কয়েকটি শহরের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালানোর কথা জানালেও ইরান বলছে, সব হামলাই প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে। এদিকে পাল্টা হামলার জন্য ইরান প্রস্তুত বলে জানিয়েছে আইআরজিসি।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) ভোরে হঠাৎই ইরানের আকাশে দেখা মেলে আলোর ঝলকানি। তেহরান, কারাজ ও সিরাজসহ বেশ কয়েকটি শহরে সামরিক ঘাঁটির কাছে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। প্রায় চার সপ্তাহ বাদে ইসরাইলের পাল্টা হামলার চিত্র এটি।
ইসরায়েলি ন্যাশনাল এয়ার ডিফেন্স হেডকোয়ার্টার্স এক বিবৃতিতে বলেছে: "ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সফলভাবে তা সনাক্ত করে মোকাবিলা করেছে। তবে কিছু স্থানে সীমিত ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতির মাত্রা সঠিকভাবে জানতে তদন্ত চলছে।"
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, গোয়েন্দা রিপোর্ট থেকে তথ্য নিয়ে ইসরায়েলি বিমান 'ইরান যে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ইসরায়েলে করেছিল, সেই ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে আঘাত করা হয়েছে।' এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের নাগরিকদের জন্য সরাসরি এবং তাৎক্ষণিক হুমকি সৃষ্টি করেছিল। এটি ভূপৃষ্ঠ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র অ্যারেকেও আঘাত করেছে বলে দাবি সামরিক বাহিনীর।
এদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা "ইরানি ভূখণ্ডের গভীরে কৌশলগত সম্পদের ওপর হামলা চালিয়েছে এবং এই অভিযান শেষ হয়েছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "আইডিএফ ইরানের বেশ কয়েকটি এলাকায় সামরিক লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট হামলা সম্পন্ন করেছে। হামলার পর আমাদের বিমানগুলো নিরাপদে ফিরে এসেছে। ইসরায়েল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইরানি হামলার প্রতিক্রিয়ায় এই হামলা চালানো হয়েছিল, মিশনটি সম্পন্ন হয়েছে।"
আইডিএফের বরাত দিয়ে টাইমস অফ ইসরাইল জানিয়েছে, ডেইজ অফ রিপেনটেন্স নামের এই অভিযানে যোগ দেয় ডজনখানেক যুদ্ধবিমান, গোয়েন্দা বিমান ও রিফুয়েলার। হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল ইরানের মিসাইল প্রোডাকশন ও এয়ার ডিফেন্স ফ্যাসিলিটি। অভিযান সম্পন্নের পর নিরাপদে ইসরাইলে ফিরে এসেছে বিমানগুলো। এক বিবৃতিতে ইরানের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে সফলভাবে হামলা চালানো হয়েছে বলে জানায় আইডিএফ।
আইডিএফের মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, 'শুক্রবার রাতের শেষভাগে ইরানের সামরিক স্থাপনায় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি আর্মি। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরাইলে হামলার জবাবে এই হামলা চালানো হয়েছে। আমরা আক্রমণ ও রক্ষণ, দুই দিক থেকেই প্রস্তুত আছি।'
তাসনীম নিউজসহ ইরানের গণমাধ্যমগুলো জানায়, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে হামলা প্রতিহত করায় শোনা গেছে বিস্ফোরণের শব্দ। ভিডিওফুটেজেও পরিষ্কারভাবে ইরানের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের সক্ষমতা দেখা যায়। ইসরাইলের হামলাকে ব্যঙ্গ করতে ছাদে উঠে মিসাইল খুঁজতে শুরু করেন অনেক ইরানি।
এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি। এমনকি সামরিক ঘাঁটিগুলোও সুরক্ষিত রয়েছে। তবে পররর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত ইরানে বাতিল করা হয়েছে সকল ফ্লাইট। পাল্টা হামলা শঙ্কাই একই পদক্ষেপ নিয়েছে ইসরাইল।
ইসরাইলের এই আক্রমণকে আত্মরক্ষা হিসেবে মন্তব্য করেছে পেন্টাগন। জানানো হয়, এই হামলায় ওয়াশিংটনের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। যদিও ফক্স নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মার্কিন কর্মকর্তা জানান, হামলার আগেই বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করেছে ইসরাইল।
ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কপর্সের বরাত দিয়ে তাসনীম নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, ইসরাইলকে জবাব দিতে প্রস্তুত ইরান। এদিকে ইরানের পাশাপাশি সিরিয়াতেও চালানো হয়েছে হামলা। সানা নিউজ জানিয়েছে, রাজধানী দামেস্ক ও হোমসসহ দেশটির মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের সামরিক স্থাপনায় ঘটেছে বিস্ফোরণ। যদিও বেশ কয়েকটি মিসাইলকে ভূপাতিত করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।