আটকে আছে ৬ ছয় লাখের বেশি ড্রাইভিং লাইসেন্স, বেড়েছে ভোগান্তি
- আপডেট সময় : ০১:২৯:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪
- / ৩৫৮ বার পড়া হয়েছে
টাকা জমা দেওয়া আছে। পরীক্ষাও শেষ। তারপরও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ভবনে আটকে আছে প্রায় ৬ ছয় লাখের বেশি মানুষের ড্রাইভিং লাইসেন্স। লাইসেন্স না পেয়ে ভোগান্তিতে রয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাজ বাকি শুধু একটি, ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্টকার্ড প্রিন্ট করে গ্রাহককে দেওয়া। এই সাধারণ কাজটিই করতে পারছে না সরকারি এই সংস্থা।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের আমলে মানুষের এই ভোগান্তি তৈরি হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, তখন পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার চেষ্টার কারণে জটিলতা তৈরি হয়। সেই থেকে ভুগছেন মানুষ। তবে নতুন সরকার ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্টকার্ড ব্যবস্থাই তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার বদলে দেওয়া হবে সাধারণ মানের প্লাস্টিকের পলিভিনাইল ক্লোরাইড (পিভিসি) কার্ড।
বিআরটিএ সূত্র জানিয়েছে, পিভিসি কার্ড দেওয়া হবে নতুন আবেদনকারীদের। পুরোনো আবেদনকারীদের আগের কার্ডই দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে কবে তাঁরা কার্ড পাবেন, সেই নিশ্চয়তা নেই।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. এহসানুল হক বলেন, পুরোনো ঠিকাদার কার্ড এনেছেন বলে জানিয়েছেন। ধীরে ধীরে জটিলতা কেটে যাবে।
তিনি বলেন, পিভিসি কার্ড চালুর মূল লক্ষ্য দ্রুত প্রিন্ট করা যায়। এতে মানুষের ভোগান্তি কমবে। তবে এই কার্ডেও কিউআর কোড থাকবে, যা দিয়ে পথে লাইসেন্সের সঠিকতা যাচাই করা যাবে। সংস্থাটিকে ঢেলে সাজাতে হবে। নতুন সরকার যদি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে সাধারণ মানুষের কাছে গণ-অভ্যুত্থানটি শুধু একটি রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হিসেবে গণ্য হবে।
স্মার্টকার্ড যথাসময়ে দিতে না পেরে বিআরটিএ গ্রাহককে একটি কাগুজে লাইসেন্স দিচ্ছে। সেটা দেখালে ট্রাফিক পুলিশ আইনি ব্যবস্থা থেকে বিরত থাকে। অবশ্য সবচেয়ে ভোগান্তিতে আছেন লাইসেন্স নিয়ে বিদেশে কর্মী হিসেবে যেতে আগ্রহীরা। কারণ, স্মার্টকার্ড ছাড়া তাঁরা বিদেশ যেতে পারছেন না।
সৌদি আরবের ভিসা নিয়ে বসে আছেন আবদুল মতিন নামের এক ব্যক্তি। তাঁর লাইসেন্সটি সংশোধন করা দরকার। এ জন্য দালালের মাধ্যমে ১৩ হাজার টাকা দিয়ে আবেদন করেছেন। তিনি বলেন, কার্ডটি প্রিন্টিংয়ের (ছাপা) অপেক্ষায়। এভাবে দুই মাস কেটে গেছে। লাইসেন্স পেলেই দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা দেবেন।
সূত্র বলছে, এখন অল্প অল্প কার্ড এনে প্রভাবশালী আমলা ও বিদেশগামীদের দেওয়া হয়। এ জন্য বিআরটিএর চেয়ারম্যানের দপ্তরে ভিসা দেখিয়ে তালিকাভুক্ত হতে হয় বিদেশগামীদের। তবে এই তথ্য অনেকেই জানেন না। যাঁরা জানেন, তাঁদের বড় অঙ্কের টাকা দিতে হয় বলে অভিযোগ আছে। এ ছাড়া মাদ্রাজ প্রিন্টার্সের স্থানীয় কর্মী ও বিআরটিএর কিছু কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটা ‘সিন্ডিকেট’ তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে। তারা সংকটের সুযোগ নিয়ে বাড়তি টাকা নিয়ে কিছু কিছু লাইসেন্স প্রিন্ট করছে।
এদিকে স্মার্টকার্ড যথাসময়ে দিতে না পেরে বিআরটিএ গ্রাহককে একটি কাগুজে লাইসেন্স দিচ্ছে। সেটা দেখালে ট্রাফিক পুলিশ আইনি ব্যবস্থা থেকে বিরত থাকে। অবশ্য সবচেয়ে ভোগান্তিতে আছেন লাইসেন্স নিয়ে বিদেশে কর্মী হিসেবে যেতে আগ্রহীরা। কারণ, স্মার্টকার্ড ছাড়া তাঁরা বিদেশ যেতে পারছেন না।
তবে বিআরটিএর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রবল। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ২০২১ সালে একটি জরিপে জানিয়েছিল, ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে গিয়ে দুর্নীতির শিকার হয় ৮৩ দশমিক ১ শতাংশ খানা (পরিবার)। ৮৩ দশমিক ৭ শতাংশ পরিবার সেবা নিয়েছে দালাল বা অন্য কোনো মাধ্যমে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সাধারণ একটি কার্ড দিতে এই অযোগ্যতা রোগের লক্ষণ। রোগটি হলো যোগসাজশের মাধ্যমে অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া। এ ক্ষেত্রে দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। কর্তৃত্ববাদী সরকারের সময় সেই জবাবদিহি ছিল না।
বাংলাদেশে সড়ক খাতে অব্যবস্থাপনার একটি বড় কারণ বিআরটিএ বলে উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংস্থাটিকে ঢেলে সাজাতে হবে। নতুন সরকার যদি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে সাধারণ মানুষের কাছে গণ-অভ্যুত্থানটি শুধু একটি রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হিসেবে গণ্য হবে।