অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার টুর্ক। আজ (মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর) সচিবালয়ে আইন উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারকে আইনি সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি। বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, জাতিসংঘের হাইকমিশনার মৃত্যুদণ্ড রহিতের প্রস্তাব দিলেও তা বাতিল করবে না সরকার।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন দমাতে চেয়েছিল কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ সরকার। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশের গুলি চালানোর প্রতিবাদে একপর্যায়ে দেশব্যাপী রাজপথে নামে ছাত্র-জনতা। নিহত হয় প্রায় দেড় হাজার মানুষ।
আন্দোলনে এমন দমন পীড়নকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে আসছিল জাতিসংঘ। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারকে অনুরোধ জানায় অন্তর্বর্তী সরকার। এরই অংশ হিসেবে দু'দিনের সফরে ঢাকায় অবস্থান করছেন হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক।
আজ (মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর) আইন উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারকে আইনি সব সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে মানবাধিকারকে গুরুত্ব দিতে বলেন ভলকার টুর্ক। পাশাপাশি সরকারের সংস্কার কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান।
ভলকার টুর্ক বলেন, ‘সেক্ষেত্রে মানবাধিকার যে নিশ্চিত করা হয় সেটি বলেছি। জুলাই গণহত্যার বিষয়ে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি কাজ করছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছি। আমাদের হেড অফিস পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে কথা বলেছি। এই দু'টি বিষয় একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বর্তমান সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে।’
বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের জানান, জাতিসংঘের হাইকমিশনার মৃত্যুদণ্ড রহিতের প্রস্তাব দিলেও সরকার তার বাতিল করবে না।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘জাতিসংঘের একটা অপশোনাল প্রটোকল আছে। সেই প্রটোকলের মূল কথাই হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড রোধ করা। কিন্তু পৃথিবীতে অনেক অল্প দেশই মৃত্যুদণ্ড রোধ করেছে। ইউরোপ আর আমেরিকার বাইরে অনেক অল্প দেশই আছে যারা মৃত্যুদণ্ড রোধ করেছে। সেজন্য তারা তো এটা তাদের কমিটমেন্ট থেকে বলবেই। কিন্তু আমাদের যে ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম, যে জুডিশিয়াল কালচার আছে সেগুলো তো আমাদের কাছে প্রাধান্য পাবে। সবচেয়ে বড় কথা মৃত্যুদণ্ড রোধ করার যে অপশনাল প্রটোকল সেটা বাংলাদেশের কোনো সরকারই এটার পক্ষরাষ্ট্র হয়নি।’
পরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসেন জাতিসংঘেরই মানবাধিকার প্রধান। সফরে প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, সেনাপ্রধানসহ বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের প্রধানসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে তার।