বিশ্বে স্ট্রোকে মোট মৃত্যুর দুই তৃতীয়াংশই বাংলাদেশে
- আপডেট সময় : ১১:২২:৩০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪
- / ৩৬৮ বার পড়া হয়েছে
বিশ্বে স্ট্রোকে মোট মৃত্যুর দুই তৃতীয়াংশই বাংলাদেশে হলেও ঢাকার বাইরে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা যায়নি। এমনকি ঢাকার মাত্র তিনটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে আছে প্রয়োজনীয় ক্যাথল্যাব। অথচ আক্রান্তের ৪০ শতাংশেরই ৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্যাথল্যাবের সাপোর্ট লাগতে পারে। এমন অবস্থায় বাড়ছে স্ট্রোকে মৃত্যুর সংখ্যা ও পঙ্গুত্ব।
রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আছিয়া বেগম। এতটায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন কারো ডাকা সাড়াও দিতে পারছেন না ঠিক মতো।
শয্যা না পেয়ে হাসপাতালের বারান্দায় স্ট্রোকের চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়েছেন ময়না। মাত্র ৩৫ বছর বয়সে তীব্র মাথাব্যথা, বমি এবং অজ্ঞান হয়ে স্ট্রোকে আক্রান্ত হবার ঘটনায় শঙ্কা বেড়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সুমন রানা বলেন, ‘তাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে। এছাড়া স্মোকিংয়ের সমস্যা আছে। বয়সভিত্তিক যারা এই ধরনের সমস্যায় ভুগে তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে বেশি।’
এদিকে গলার রক্তনালীতে ৯৯ শতাংশ ব্লক থাকা মাইনুদ্দীনকে নিউরো ক্যাথল্যাবে নেয়া হয়েছে। ঠিক সময়ে হাসপাতালে আসতে না পারলে যে কোন বড় ধরনের ক্ষতিতে পড়তেন তিনি। ক্যাথল্যাবে ব্লক সরানোর পর প্রাণনাশের ঝুঁকি থেকে মুক্ত হয়েছেন তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্ট্রোকের মোট রোগীর ৮৫ শতাংশই মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বন্ধজনিত স্ট্রোকে ভুগে থাকেন। যাদের ৪০ শতাংশেরই ৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্যাথল্যাবের সাপোর্ট লাগতে পারে।
অন্যদিকে রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোকের ১৫ শতাংশের ১০ শতাংশের দেরীতে হলেও প্রয়োজন পড়ে ক্যাথল্যাবের। ক্যাথল্যাব ছাড়া জটিল স্ট্রোকে ভোগা এই ৫০ শতাংশের অনেকেরই পরিণতি হয় মৃত্যু বা পঙ্গুত্ববরণ।
অথচ সরকারি পর্যায়ে ঢাকার জাতীয় নিউরো সায়েন্স, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল ছাড়া কোথাও নেই নিউরো ক্যাথল্যাব।
ডা. সুমন রানা বলেন, ‘কার্ডিয়াক ক্যাথল্যাব বা হার্টের ক্যাথল্যাব অনেক বড় বড় হাসপাতালে আছে। এই ঢাকা মেডিকেলেও কিন্তু এই ক্যাথল্যাবে নিউরো চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। একই তো মেশিন। কিন্তু এই প্রচলনটা নেই সচেতনতা নেই। এই চিকিৎসা সেবা চালিয়ে নেয়ার জন্য যে ম্যান পাওয়ার দরকার সেটা এখনো চালিয়ে নিতে পারি নাই।’
বিশ্বে স্ট্রোকে মোট মৃত্যুর দুই তৃতীয়াংশই হয় বাংলাদেশে। ২০২০ সালে ৮৫ হাজার মানুষ মারা গেছে যা ২০১৯ সালের দ্বিগুণ। অথচ স্ট্রোকের পূর্ণাঙ্গ সেবা ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হয়নি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘একটা প্রটোকল ও সমন্বয়ের মাধ্যমে আগাতে হবে। অবশ্যই নিউরোলজি রুল প্লে করো সাথে সবাই আরকি।’
অন্তত পুরোনো মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জনবল বাড়িয়ে ক্যাথল্যাবসহ পূর্ণাঙ্গ স্ট্রোক সেন্টার প্রতিষ্ঠার জোর তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।
এদিকে শয্যার বাইরে কোনো রোগীকে ভর্তি করে সেবা না দেয়ায় বরাবরই ক্ষোভ প্রকাশ করে থাকে ভুক্তভোগীরা। তবে মানসম্মত সম্পূর্ণ সেবা নিশ্চিতে এর বিকল্প নেই বলে মত হাসপাতালটির পরিচালকের।
জাতীয় নিউরো সায়েন্সস ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ বলেন, ‘যে রোগী ফ্লোরে পরে থাকে আর যে বিছানায় থাকে তার মধ্যে ট্রিটমেন্টে আকাশ পাতাল পার্থক্য। ফ্লোরে রাখা একটা বিকল্প কিন্তু চিকিৎসা কতটুকু পেলো সেটা নিয়ে আমার চিন্তা আছে।’
ঢাকা ছাড়া কোন জেলাতেই স্ট্রোকের রোগীদের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। এতে বাধ্য হয়ে হাসপাতালের সিঁড়ি বারান্দায় মানবেতর জীবন যাপনের মধ্য দিয়ে সেবা নিচ্ছেন রোগীরা। এতে রোগীদের মৃত্যু বা পঙ্গুত্বের হার কমানো সম্ভব হচ্ছে না বলে মত বিশেষজ্ঞদের।