বিদ্যুতের সদ্ব্যবহার ও অপচয় রোধে স্বয়ংক্রিয় বিলিং সুবিধার জন্য ২০১১ সালে চালু করা হয় প্রি-পেইড মিটার ব্যবস্থা। আধুনিক এই মিটার ব্যবস্থা চালু হবার পর খবর বের হতে থাকে গ্রাহকদের অতিরিক্ত বিল কাটা ও হয়রানির। উন্নত সেবার পরিবর্তে গ্রাহকদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এ প্রিপেইড মিটার ব্যবস্থা। বিশ্লেষকদের মত মিটার সিস্টেম পুনঃনিরীক্ষা ও পুনর্গঠনের।
শুধু দেশের প্রাণকেন্দ্র ঢাকা-ই নয়, রাজধানীর বাহিরের জেলাগুলোতে দুর্ভোগের সীমা অতিক্রম করেছে সকল মাত্রা। এই যেমন গাজীপুরের মারিয়ালি এলাকায় সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে প্রিপেইড মিটারের ভোগান্তির কথা বলতে ভিড় জমিয়েছেন তারা।
মিটারে অতিরিক্ত টাকা কাটা সহ পাহাড়সম অভিযোগ বিদ্যুৎ বিভাগের বিরুদ্ধে। প্রিপেইড মিটারের হয়রানি আর দুর্ভোগের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ তাদের।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত লুন্ঠনকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণতি হয়েছিলো বলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেন এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ। বলেন দুর্নীতিবাজরা প্রিপেইড মিটারকে ব্যবহার করেছে লুঠতরাজ ও নিপীড়কের হাতিয়ার হিসেবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘মিটার ব্যবসার মধ্য দিয়ে চুরি হবে আর মিটার নিজেও চুরি করে দিবে। ১০ ডলারের মিটার ২৫ ডলার ৩০ ডলার বা এর বেশি দাম নেয়া হয়েছে। এ টাকাটা ভোক্তাদের কাছ থেকে গেছে। আপনি ক্যাপাসিটি চার্জ ভাড়া নিচ্ছেন তেমন মিটার ভাড়াও নিচ্ছেন। মিটারের দাম যত বেশি হবে ভাড়া তত বেশি হবে।’
সমস্যা সমাধানে গ্রাহকদের অভিযোগ আমলে নিয়ে সেবাদাতাদের সক্ষমতা বাড়ানো ও মিটার ব্যবস্থাপনা পুনঃপরীক্ষা করার পরামর্শ তার।
গ্রাহকদের হয়রানি ও অতিরিক্ত টাকা কেটে নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিপেইড মিটার নিয়ে গ্রাহকদের অজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন প্রিপেইড মিটার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের এই কর্মকর্তা।
ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী কিউ. এম. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এটা আসলে ঠিক না। প্রিপেইড মিটারে বেশি টাকা কাটার অপশন নাই। এটা গ্রাহককে একটু বুঝতে হবে, মিটারের একটা চার্জ কাটে। সিঙ্গেল ফেজ হিসেবে ডিমান্ড চার্জ ৪২ টাকা কিলোওয়াট মাসে একবারই কাটবে। এখন গ্রাহক যদি বেশি লোড করে ফেলে এবং দুই তিন মাস পর আবার যায়, তখন জমে থাকা এসব বিল রিচার্জের সময় কেটে নিবে।’
দেশে বর্তমানে ছয় বিতরণ কোম্পানির বিদ্যুৎ গ্রাহক সংখ্যা মোট ৪ কোটি ৭১ লাখ। এর মধ্যে প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহকের সংখ্যা ৫২ লাখ। বাকিদেরও ক্রমান্বয়ে এর আওতায় আনার কাজ চলছে।