লিওনেল মেসির প্রশংসার কোনো সুযোগ পেলে পেপ গার্দিওলা কখনো সেটা ছাড়েন না। প্রসঙ্গে না থাকলেও মেসিকে টেনে এনে কিছু বলে বসেন বার্সেলোনার সাবেক ও ম্যানচেস্টার সিটির বর্তমান কোচ, আর সেখানে প্রসঙ্গক্রমে মেসি চলে এলে তো কথাই নেই! গতকাল যেমন প্রসঙ্গ না চাইতেও চলে এল!
প্রসঙ্গ – বালন দ’র। বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কারটি ঘিরে কদিন ধরে সমালোচনা আর বিতর্কই হচ্ছে, তা অবশ্য কোনবারে না হয়! রেয়াল মাদ্রিদের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ভিনিসিয়ুস জুনিয়র পুরস্কারের জন্য ফেবারিট ছিলেন, কিন্তু তাঁকে টপকে এবার ম্যানচেস্টার সিটির স্প্যানিশ মিডফিল্ডার রদ্রি জিতেছেন বালন দ’র। এ নিয়ে ভিনি, রেয়াল মাদ্রিদ আর ব্রাজিলের ভক্তরা মহাখ্যাপা। তবে অন্যদিকে রদ্রিকে নিয়ে স্পেন আর ম্যানচেস্টার সিটিতে চলছে প্রশংসা-বৃষ্টি।
গার্দিওলাও তাঁর ক্লাবের খেলোয়াড়ের এ অর্জনে যে গর্বিত, তা আর বলতে! তবে পুরস্কারের প্রসঙ্গেই চলে এল মাঝে প্রায় দেড় দশক বালন দ’রের শিরোপামঞ্চে ‘দ্বি-ছত্র’ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা মেসি আর রোনালদোর কথা। তাঁদের নিয়ে বলতে গিয়েই গার্দিওলা বলে বসেছেন, রোনালদো দানব, তবে মেসি দানবের বাপ!
রদ্রিকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মেসি-রোনালদো এসেছেন কেন? সেটির সূত্র টানা বালন দ’র জেতার পর পুরস্কারমঞ্চে রদ্রিরই একটা মন্তব্য ধরে। রদ্রি পুরস্কার হাতে নিয়ে স্মরণ করেছেন গত দশকে স্পেনকে সর্বজয়ী করার পথে বিশ্ব মাতানো মিডফিল্ডার শাভি এর্নান্দেস, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, সের্হিও বুসকেতসদের নিয়ে। গার্দিওলাও কাল বার্সেলোনায় মেসির পাশাপাশি তাঁর অধীনে কোচিং করা শাভি-ইনিয়েস্তাদের কথাই বলেছেন।
রদ্রির মতো শাভি-ইনিয়েস্তারাও বালন দ’র জেতার কাছাকাছি গিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁরা পারেননি, রদ্রি বনে গেলেন ৬৪ বছরে বালন দ’র জেতা প্রথম স্প্যানিশ! এ নিয়েই কাল গার্দিওলা বলছিলেন, রদ্রির পুরস্কার জেতাটা আসলে গত দশকের স্পেনের খেলোয়াড়দের প্রতি এক ধরনের কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন। ‘গত দশকে স্পেনের ফুটবল একটা বড় পার্থক্য তৈরি করে দেওয়া দল হয়ে উঠেছিল – একটা বিশ্বকাপ জিতেছে, একটা ইউরো জিতেছে। এবং এই পুরস্কারটা স্পেন এর আগে কখনো জেতেনি’ – বলেছেন গার্দিওলা।
কিন্তু গত দশকে স্পেন এত ট্রফি জিতলেও, তিকিতাকায় মুগ্ধতা ছড়ালেও, রেয়াল মাদ্রিদ আর বার্সেলোনার মতো ক্লাব চ্যাম্পিয়নস লিগে দাপট দেখালেও স্প্যানিশ কোনো খেলোয়াড়ের কেন বালন দ’র জেতা হয়নি? গার্দিওলার মুখে উঠে এল বার্সেলোনা আর রেয়াল মাদ্রিদের দাপটের পেছনে থাকা দুই কিংবদন্তির কথা, ‘আমার মনে আছে, একবার লা মাসিয়ারই তিন খেলোয়াড় (বালন দ’রের জন্য) মনোনীত হয়েছিল। শাভি আর ইনিয়েস্তা জিততে পারেনি, কারণ মেসি একটা দানব ছিল! আর কেউ ওকে হারাতে পারেনি – শুধু ক্রিস্তিয়ানো (রোনালদো) পেরেছে। ও (রোনালদো) একটা দানব, আর দানবের বাপ হচ্ছে মেসি!’
এবারের বালন দ’র অবশ্য একদিক থেকে মেসি আর রোনালদোর অধ্যায়ের শেষ টেনে দিয়েছে। ইউরোপ ছেড়ে রোনালদো তো দুবছর ধরেই সৌদি আরবের বাসিন্দা, খেলছেন আল নাসরে। মেসির ঠিকানা এখন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টার মায়ামি। ২০০৩ সালের পর এবারই প্রথম দুজনের কারোরই বালন দ’রের মনোনয়নের সেরা ৩০-এ জায়গা হয়নি।