ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর, গণভবনে দায়িত্বরত স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সদস্যরা অস্ত্র ভল্টে জমা রেখে চলে যান। ওইদিন অভ্যুত্থানকারীরা গণভবনে ঢুকে পড়লে এক পর্যায়ে ভল্টে রাখা এসএসএফের ৩২টি অত্যাধুনিক অস্ত্র লুট হয়। সেদিনের পর থেকে আজ পর্যন্ত লুট হওয়া অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, লুট হওয়া অস্ত্রগুলো হাতবদল হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গেছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ওই সময় পুলিশ, বিভিন্ন থানা, কারাগার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ হাজার ৮২৯টি অস্ত্র এবং ছয় লাখ ছয় হাজার ৭৪২টি গুলি লুট হয়। এর মধ্যে তিন হাজার ৭৬৩টি অস্ত্র এবং দুই লাখ ৮৬ হাজার ৮২টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো উদ্ধারের বাইরে রয়েছে দুই হাজারের বেশি অস্ত্র।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি ইনামুল হক সাগর জানান, গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে গতকাল পর্যন্ত যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেছে ৩৬৯টি অস্ত্র। আবার উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে যাঁরা লুট করেছিলেন তাঁদের অনেকে সেগুলো জমা দিয়ে যান। তবে এসব অস্ত্রের মধ্যে এসএসএফের লুট হওয়া অস্ত্র রয়েছে কি না তা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।
সূত্র বলছে, মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পের চিহ্নিত সন্ত্রাসী বাহিনীসহ আশপাশের এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের কাছে থানা ও গণভবন থেকে লুট হওয়া অস্ত্র থাকতে পারে। এসব অস্ত্র হাতে পেয়ে মাদক কারবারি ও চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীরা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়াচ্ছে।
এরই মধ্যে মোহাম্মদপুরে একাধিক খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত বানিয়া সোহেলকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করেছে লুট করা অস্ত্র রয়েছে তার বাহিনীর কাছে। জেনেভা ক্যাম্প ছাড়াও মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ, বসিলা, ঢাকা উদ্যান এলাকায় সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গত আড়াই মাসে জেনেভা ক্যাম্পসহ মোহাম্মদপুর এলকায় ১২ জন হত্যার শিকার হয়েছে। প্রকাশ্যে দিনের বেলায় চলছে ছিনতাই, চাঁদাবাজি। নিরাপত্তাঝুঁকিতে সাধারণ মানুষ সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফেরার চেষ্টা করছে।
অনেকে পরিবার নিয়ে এলাকা ছেড়েও চলে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ মিলে যৌথ অভিযান পরিচালনা করছে। যৌথ অভিযান শুরু হওয়ার পর জেনেভা ক্যাম্পের অনেক সন্ত্রাসী পালিয়ে গেছে।
সূত্র মতে, গত ৫ আগস্ট মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পসহ আশপাশের এলাকার অনেক সন্ত্রাসী গণভবন, মোহাম্মদপুর, শেরেবাংলানগর ও আদাবর থানায় হামলা চালিয়ে অস্ত্র লুট করে। আবার যারা অস্ত্র চালাতে জানে না তারা দু-তিন হাজার টাকার বিনিময়ে অনেক অস্ত্র বিক্রিও করে দেয়। এই সুযোগে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসা সন্ত্রাসীরা অস্ত্র সংগ্রহ করেছে বলেও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।