ঢাকা ০৩:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

পিছিয়েছে বই ছাপা, বিতর্কিত শিক্ষাক্রম বাতিল করে চলছে পরিমার্জন

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:৪৭:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪
  • / ৩৩৮ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

পিছিয়ে যাচ্ছে নতুন বছরের বই ছাপার প্রক্রিয়া। ২০২১ এর বিতর্কিত শিক্ষাক্রম বাতিল করে চলছে পরিমার্জন। এছাড়াও নানা জটিলতায় জানুয়ারিতে সব বই মাঠ পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব না বলে জানিয়েছেন পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা। তবে এবার বইয়ের কাগজের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনসিটিবি।

চলতি বছর ২০২১ এর শিক্ষাক্রম প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে চলমান। এই শিক্ষাক্রম নিয়ে নানান বিতর্কের সঙ্গে বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়েও সমালোচনা শুরু থেকেই তুঙ্গে। এছাড়া সারাদেশেই সরবরাহ করা হয় নিম্নমানের বই। এনসিটিবি’র বেধে দেয়া মান রক্ষা করেনি অনেক মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানই।

তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সংস্কারের ঢেউ লাগে শিক্ষাতেও। বিতর্কিত ২০২১ শিক্ষাক্রম বাতিল করে ২০১২ শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই পরিমার্জন করছে অন্তর্বর্তী সরকার। পরিমার্জন করতে গিয়ে এখনো ২০২৫ সালের বই মুদ্রণ শুরু করা হয়নি।

এখন পর্যন্ত ৯ম-১০ম শ্রেণির বইয়ের টেন্ডারই হয়নি। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণি বাদে কার্যাদেশ হয়নি অন্য কোনো শ্রেণির। এই তিন শ্রেণির বইয়ের চূড়ান্ত পাণ্ডুলিপি ছাপাখানায় দেয়া হলেও হয়নি মুদ্রণাদেশ। প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, এনসিটিবি’র প্রক্রিয়াগত দীর্ঘসূত্রতার কারণে জানুয়ারিতে সব বই দেয়া সম্ভব হবে না এবার।

বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক চেয়ারম্যান তোফায়েল খান বলেন, ‘স্বাভাবিক কারণেই বইয়ের পরিমার্জন সংশোধন করার প্রয়োজন হয়েছে। এই সংশোধন পরিমার্জন করে তারা টেন্ডার প্রক্রিয়া করছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া যথেষ্ট বিলম্ব হয়েছে। এইটা পাণ্ডুলিপি করে আরো আগে করা যেত। বিশেষ করে টেন্ডার মূল্যায়নে যেটা নেয়া হয়েছে তা অতিরিক্ত।’

বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘বাচ্চাদের কাছে নতুন বই পৌঁছাতে কোনো ক্রমেই সম্ভব না। মিনিমাম তিন মাস সময় দরকার। আমরা কোনো কাজই ডিসেম্বর ছাড়া ধরতে পারবো না।’

প্রাথমিকের বইয়ে কাগজের উজ্জ্বলতা সব সময় ৮৫ শতাংশ রাখা হলেও দুর্নীতি করে ২০২৪ সালের বইয়ে তা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ৮০ শতাংশ। আগামী ২০২৫ সালের বইয়ের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে আবারো নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫ শতাংশ। আর জিএসএম থাকছে আগের ৮০ গ্রামই। মাধ্যমিকের বইয়েও উজ্জ্বলতা বেড়ে ৮০ থেকে ৮২ শতাংশ করা হয়েছে। জিএসএম থাকছে ৭০ গ্রামই।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ. কে. এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘এই সরকারের চাহিদা হচ্ছে মান সম্পন্ন বই যথা সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো। এক্ষেত্রে এইটার ব্যত্যয় না হয় সরকার তা সর্বদিক থেকে চেষ্টা করবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা কোভিডের সময় একটা লার্নিং গ্যাপ পেয়েছি আর একটা লার্নিং গ্যাপ হয়েছে এই আন্দোলনের সময়। আর এই লার্নিং গ্যাপ পূরণ করার জন্য যতটা দ্রুত কাজ করার কথা ছিল তা না দেখে আমরা এর উল্টোটা দেখেছি।’

শিক্ষাবিদরা বলছেন, বইয়ের যে মান বেধে দিয়েছে সরকার, তা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে রক্ষা করতে হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সাথে দ্রুত সময়ের মধ্যে বই প্রস্তুত করে মাঠ পর্যায়ে পৌঁছাতে পরামর্শ তাদের।

নিউজটি শেয়ার করুন

পিছিয়েছে বই ছাপা, বিতর্কিত শিক্ষাক্রম বাতিল করে চলছে পরিমার্জন

আপডেট সময় : ০১:৪৭:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪

পিছিয়ে যাচ্ছে নতুন বছরের বই ছাপার প্রক্রিয়া। ২০২১ এর বিতর্কিত শিক্ষাক্রম বাতিল করে চলছে পরিমার্জন। এছাড়াও নানা জটিলতায় জানুয়ারিতে সব বই মাঠ পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব না বলে জানিয়েছেন পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা। তবে এবার বইয়ের কাগজের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনসিটিবি।

চলতি বছর ২০২১ এর শিক্ষাক্রম প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে চলমান। এই শিক্ষাক্রম নিয়ে নানান বিতর্কের সঙ্গে বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়েও সমালোচনা শুরু থেকেই তুঙ্গে। এছাড়া সারাদেশেই সরবরাহ করা হয় নিম্নমানের বই। এনসিটিবি’র বেধে দেয়া মান রক্ষা করেনি অনেক মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানই।

তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সংস্কারের ঢেউ লাগে শিক্ষাতেও। বিতর্কিত ২০২১ শিক্ষাক্রম বাতিল করে ২০১২ শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই পরিমার্জন করছে অন্তর্বর্তী সরকার। পরিমার্জন করতে গিয়ে এখনো ২০২৫ সালের বই মুদ্রণ শুরু করা হয়নি।

এখন পর্যন্ত ৯ম-১০ম শ্রেণির বইয়ের টেন্ডারই হয়নি। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণি বাদে কার্যাদেশ হয়নি অন্য কোনো শ্রেণির। এই তিন শ্রেণির বইয়ের চূড়ান্ত পাণ্ডুলিপি ছাপাখানায় দেয়া হলেও হয়নি মুদ্রণাদেশ। প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, এনসিটিবি’র প্রক্রিয়াগত দীর্ঘসূত্রতার কারণে জানুয়ারিতে সব বই দেয়া সম্ভব হবে না এবার।

বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক চেয়ারম্যান তোফায়েল খান বলেন, ‘স্বাভাবিক কারণেই বইয়ের পরিমার্জন সংশোধন করার প্রয়োজন হয়েছে। এই সংশোধন পরিমার্জন করে তারা টেন্ডার প্রক্রিয়া করছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া যথেষ্ট বিলম্ব হয়েছে। এইটা পাণ্ডুলিপি করে আরো আগে করা যেত। বিশেষ করে টেন্ডার মূল্যায়নে যেটা নেয়া হয়েছে তা অতিরিক্ত।’

বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘বাচ্চাদের কাছে নতুন বই পৌঁছাতে কোনো ক্রমেই সম্ভব না। মিনিমাম তিন মাস সময় দরকার। আমরা কোনো কাজই ডিসেম্বর ছাড়া ধরতে পারবো না।’

প্রাথমিকের বইয়ে কাগজের উজ্জ্বলতা সব সময় ৮৫ শতাংশ রাখা হলেও দুর্নীতি করে ২০২৪ সালের বইয়ে তা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ৮০ শতাংশ। আগামী ২০২৫ সালের বইয়ের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে আবারো নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫ শতাংশ। আর জিএসএম থাকছে আগের ৮০ গ্রামই। মাধ্যমিকের বইয়েও উজ্জ্বলতা বেড়ে ৮০ থেকে ৮২ শতাংশ করা হয়েছে। জিএসএম থাকছে ৭০ গ্রামই।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ. কে. এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘এই সরকারের চাহিদা হচ্ছে মান সম্পন্ন বই যথা সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো। এক্ষেত্রে এইটার ব্যত্যয় না হয় সরকার তা সর্বদিক থেকে চেষ্টা করবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা কোভিডের সময় একটা লার্নিং গ্যাপ পেয়েছি আর একটা লার্নিং গ্যাপ হয়েছে এই আন্দোলনের সময়। আর এই লার্নিং গ্যাপ পূরণ করার জন্য যতটা দ্রুত কাজ করার কথা ছিল তা না দেখে আমরা এর উল্টোটা দেখেছি।’

শিক্ষাবিদরা বলছেন, বইয়ের যে মান বেধে দিয়েছে সরকার, তা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে রক্ষা করতে হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সাথে দ্রুত সময়ের মধ্যে বই প্রস্তুত করে মাঠ পর্যায়ে পৌঁছাতে পরামর্শ তাদের।