বছরের বাকি সময়েও থাকবে ডেঙ্গুর প্রকোপ, বাড়বে সংক্রমণ-মৃত্যু
- আপডেট সময় : ০২:৪৩:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪
- / ৩৪৬ বার পড়া হয়েছে
চলতি বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরেও থাকবে ডেঙ্গুর প্রকোপ। নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সংক্রমণের সঙ্গে বাড়বে মৃত্যু। চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন শিশু ও বয়স্করা। সচেতনতার পাশাপাশি, জ্বর হলেই অ্যান্টিবায়োটিক সেবন না করার পরামর্শ তাদের।
চলতি মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে সহস্রাধিক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে ঢাকার ৭৭টি হাসপাতালসহ দেশের কয়েকটি জেলার তথ্য যুক্ত থাকে। বাস্তবে এ সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বেশি।
শীতে মশার প্রজনন কমে আসে। যদিও মাত্রাতিরিক্ত প্রজনন ও সংক্রমণে এ বছরের চিত্র ভিন্ন। নভেম্বর-ডিসেম্বরেও ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমছে না এ বছর- বলছেন গবেষকেরা।
কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘এ বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরেও ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ থাকবে। বাংলাদেশে অধিকাংশ জায়গায় এডিস মশার ঘনত্বের যে পরিমাণ বিশেষ করে সিটি করপোরেশনগুলোতে ২০ এর উপরে আছে।’
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এডিস মশাও প্রজনন ও বসবাসে নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়ায় তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বাড়ার সঙ্গে এডিস মশার বংশবৃদ্ধি এবং ডেঙ্গুর সংক্রমণও বাড়ছে। তাই জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ গবেষকদের।
ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য হটস্পট ম্যানেজম্যান্ট করাটা জরুরি। এর সঙ্গে ব্রিডিং সোর্স এবং লার্ভা ম্যানেজমেন্টেও জোর দিতে হবে।’
পৃথিবীতে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি প্রজাতির মশা রয়েছে, তার মধ্যে প্রায় ২০০ প্রজাতির মশা বিভিন্নভাবে মানুষের রোগশোকের জন্য দায়ী। ক্ষুদ্র এই পতঙ্গ দ্বারা অর্থনৈতিক ক্ষতিও কম নয়।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য মশাকে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। প্রতিবছর বিভিন্ন দেশ মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। মশার কারণে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীদের আক্রান্ত হওয়া এবং মশক নিধনে পরিবেশ ও প্রতিবেশের যে ক্ষতি হয়- বিশ্বে তার পরিমাণ বার্ষিক ৬১ মিলিয়ন ডলার।
দীর্ঘমেয়াদে দেশব্যাপী ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এক্ষেত্রে গবেষণা এবং উন্নয়নের উপর জোর দিচ্ছেন তারা। যদিও চিকিৎসকরা বলছেন, এ বছর গুরুতর রোগীর সংখ্যা কম হলেও নানা উপসর্গ নিয়ে আছেন তারা। এক্ষেত্রে আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের ঝুঁকি বেশি থাকে।
ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজউদ্দিন দানিশ বলেন, ‘ডেঙ্গুতে সাধারণ শিশু ও বয়োবৃদ্ধ এদের মৃত্যুর হারটা একটু বেশি। জ্বর যদি বেশি না হয় তাহলে প্যারাসিটামল দেয়া। জ্বর যদি বেশি হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি। শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের জন্য আমরা বলবো অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া ভালো।’
ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেই হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সময়মতো খাবার খাওয়াতে হবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবন না করার আহ্বান এ চিকিৎসকের।
ডা. মোহাম্মদ রেয়াজউদ্দিন দানিশ বলেন, সকল জ্বরের চিকিৎসা অ্যান্টিবায়োটিক না। জ্বর হলে যেটা খেতে হবে সেটা হলো প্যারাসিটামল। জ্বর কমানোর ওষুধ হচ্ছে প্যারাসিটামল। দ্বিতীয়ত জ্বর যে কারণে হয়েছে, সেটা যদি ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে হয়ে থাকে তাহলেই শুধু অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে। ডেঙ্গু হচ্ছে ভাইরাসজনিত। এক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো ভূমিকা নেই।’
ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পেতে দিনের বেলায় ঘুমাতে গেলে মশারি দেয়াসহ শিশুদের ফুলহাতা জামাকাপড় পরিয়ে রাখার পরামর্শ চিকিৎসকদের।