বিনা শুল্কে গাড়ি আমদানি: ১৫ বছরে লোকসান ৫ হাজার কোটি টাকা
- আপডেট সময় : ০২:৩৯:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪
- / ৩৪৩ বার পড়া হয়েছে
সামরিক শাসক এরশাদের হাত ধরে দেশে বিনা শুল্কে গাড়ি আমদানির সুবিধা পায় এমপি, মন্ত্রীরা। সে সুবিধায় গত ১৫ বছরে ৫৭২টি বিলাসবহুল গাড়ি দেশে এসেছে, যেখানে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। অথচ এমন গাড়ি কিনতে দামের চাইতে আটগুণ বেশি শুল্ক দিতে হয় সাধারণ মানুষকে।
বিশিষ্টজনরা বলছেন, সাধারণ মানুষ ঔষধ থেকে শুরু করে ফলমূল, ভোগ্যপণ্য আমদানিতে শুল্ক দিচ্ছে, সেখানে আইনপ্রণেতাদের বিনা শুল্কে বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি অনৈতিক। এদিকে সরকার পতনের আগে বিলুপ্ত সংসদের এমপিদের আমদানি করা ২৪টি গাড়ি খালাস না করায় নিলামে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস।
১৯৮৮ সালে সামরিক শাসক এরশাদ সংসদ সদস্যদের বিনা শুল্কে গাড়ি আনার সুযোগ করে দেন। এরপর ৩৬ বছর ধরে চলছে এ রীতি। সবশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে সাবেক অর্থমন্ত্রী শুল্ক অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমানোর প্রস্তাব দিলেও এমপিদের বিরোধিতায় তা পাস হয়নি।
যদিও সাধারণ মানুষকে চাল, ডাল কিনতে শুল্ক, কর দিতে হচ্ছে। অথচ দেশের আইন প্রণেতাদের বিলাসিতার জন্য বহাল রাখা হয়েছে বিনা শুল্কে বিলাসবহুল গাড়ি আমদানির এমন সুযোগ। যা অনেকেই বিক্রি করে দিচ্ছেন। এই নীতিকে বৈষম্যমূলক ও সংবিধানের মূলনীতির সাথে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা।
সুজনের সদস্য সচিব আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘নাগরিক ও সংসদ সদস্য এভাবে ভিন্নতা বা ডিফারেনশিয়েট সৃষ্টি করাটা কোনোভাবেই উচিত হয় নাই। আমি নির্বাচিত প্রতিনিধি। আমি সব সুযোগ নিব সে উপোস থাকবে সেটা হয় না।’
২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত গত ১৫ বছরে সংসদ সদস্যরা ৫৭২টি গাড়ি আমদানি করেন। যার বিপরীতে ৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা শুল্ক মওকুফ পেয়েছেন তারা। অথচ সাধারণ নাগরিকদের এসব গাড়ি আমদানি করতে অন্তত ১০০ থেকে সাড়ে ৮শ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক কর দিতে হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিগত সংসদের এমপিদের বড় অংশই ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। তাই ব্যক্তিগত ব্যবহার ছাড়া এসব গাড়ি এমপিদের নির্বাচনী এলাকার মানুষের কোনো কাজে আসেনা। বরং বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
এনবিআর রির্ফম কমিটির সদস্য মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের দেশে যেখানে দারিদ্র্য শিক্ষা, সামাজিক খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের দরকার সেখানে এসব খাতে বিনিয়োগ দেশের অর্থনৈতিক খাতের উন্নতি করতে পারে না।’
দ্বাদশ সংসদ ভেঙ্গে যাওয়ার আগে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, চিত্রনায়ক ফেরদৌস এবং ব্যারিস্টার সুমনসহ ৭ জন এমপি জুলাই মাসেই গাড়ি ছাড় করে নেন। যারা ছাড় করতে পারেননি বিপাকে তারা। সংসদ ভেঙ্গে যাওয়ায় এখন আর শুল্কমুক্ত সুবিধা মিলবে না।
এ অবস্থায় সাবেক এমপিদের আমদানি করা ২৪টি ল্যান্ডক্রুজার পড়ে আছে বন্দরের কার শেডে। ৩০ দিনেও গাড়ি খালাস না করায়, নিয়ম অনুযায়ী সাবেক সংসদ সদস্যদের গাড়ি ছাড়িয়ে নিতে নোটিশ দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ। খালাসের উদ্যোগ না নিলে এসব গাড়ি তোলা হবে নিলামে ।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের উপ-কমিশনার সাইদুল ইসলাম বলেন, ২৪টা গাড়ি শুল্ক মুক্ত সুবিধায় আমদানি আছে। এসব গাড়ির আমদারিকারক বরাবর কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হয়েছে। এখন আমদানিকারকরা যদি গাড়ি না নেয় বা জবাব না দেয় সে প্রেক্ষিতে আমরা নিলাম প্রক্রিয়ায় চলে যেতে পারবো।’
বিগত সংসদের এমপিরা মোট ৫২টি বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করেছেন। শুল্ক করসহ এসব গাড়ির বাজারমূল্য প্রায় ৫শ কোটি টাকা।