ঢাকা ১২:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অর্থনীতির নানা সূচকে গরমিল

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৩:১০:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০২৪
  • / ৩৬০ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গরমিল শুরু হয় রপ্তানি তথ্যে। যা উঠে আসে বিদায়ী অর্থবছরের শেষ সময়ে। এতে জিডিপির আকার থেকে শুরু করে কমবে মাথাপিছু আয়, অর্থনীতির নানা সূচক। এমন ভুল তথ্যের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা আর্থিক কাঠামোয় ভর করে এলডিসি থেকে উত্তরণ কতটা সঠিক সিদ্ধান্ত তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। তড়িঘড়ি করে এলডিসি উত্তরণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে আরও সময় নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

সূর্যও জাগাার আগেই জেগে যায় কৃষক। ফরহাদ খান নামের এক কৃষক খোলা আকাশের নিচে নিজ হাতে বোনা সবজির হালচাল দেখছেন। দেনা-পাওনা, সংসার আর ঋণের বোঝা। রাজ্যের ভার যার মাথায় তার কাছে মাথাপিছু আয় নিছক গল্পের সমান।

ফরহাদ খান বলেন, ‘মাথাপিছু আয়টায় আমি বুঝিটুঝি না। কারণ আমি চাষাবাদ করলে মোটামুটি তিন বিঘা জমিতে চাষ করলে দেখা যায় দেড় লাখ টাকা থাকে। সেটা পোলাপানের লেখাপড়ার পিছে খরচা হয়ে যায়। আবার ৭চাষাবাদ করতে হলে ধারদেনা করতে হয়। তখন কিস্তিতে সুদের টাকা আনতে হয়।’

কৃষক নান্নু মিয়ার গল্পও এমন। ভিটাবাড়ি ছাড়া নিজের দুই বিঘা জমি আর চার বিঘা লিজ নিয়ে আবাদ করেছেন তিনি। বছর শেষে খরচবাদে বিঘা প্রতি জমা করেন ৪০ হাজার টাকা।

নান্নু মিয়া বলেন, ‘তিন লাখ টাকা দেনা করে চাষ করেছি। আজ পর্যন্ত তিন টাকাও দিতে পারিনি। ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা মজুরির দাম দিতে হয়। আর সার দিয়ে অনেক খরচ হয়ে যায়। টাকা থাকে না।’

কড়াইল বস্তির মর্জিনার টানাটানির সংসারে স্বামীই একমাত্র ভরসা। বাড়ি মালিক ঘরভাড়া মওকুফ করলেও পরিমিত আহার, সু-চিকিৎসা আর আয়-ব্যয়ের হিসাবে তিনি নিত্য ধরাশায়ী।

মর্জিনা বলেন, ‘ডাক্তার দেখাতে গেলে কষ্ট অনেক হয়। সকালে গিয়ে সিরিয়াল ধরা লাগে। ২টা বা আড়াইটায় সিরিয়াল থেকে শেষ করা লাগে। আআর ওষুধ নিতে সিরিয়াল ধরা লাগে। ৫টা বা ৬টা বেজে যায় আমার বাসায় আসতে। আমার সেই দিন অ্যাবসেন্ট থাকে। মালিক টাকা কেটে দেয়।’

সন্দিপ পাল বংশ পরম্পরায় মৃৎশিল্পের কারিগর হলেও ৮০’র দশকে শুরু হয় বাণিজ্যিক উৎপাদন, তারও কিছুদিন পর রপ্তানি যাত্রা। ৪০ বিলিয়ন ডলারের বৃহৎ রপ্তানিতে মৃৎশিল্পের অবদান থাকলেও তার ছিটে ফোঁটাও বোঝেন না তারা। তাই অর্থনৈতিক সূচক ভাবায় না তাদের।

সন্দিপ পাল বলেন, ‘আমরাই তৈরি করছি। আমাদের হাতেই ডিজাইনগুলোর উন্নতি হচ্ছে। আমরাই এগুলো প্রতিষ্ঠানের কাছে দিয়ে আসছি। তারা বিদেশে রপ্তানি করে পয়সা উপার্জন করছে। কিন্তু আমাদের প্রোডাক্টের পয়সা আমাদের হাতে কিন্তু সেভাবে পাচ্ছি না।’

তাদের সবার আয়ে ভিন্নতা থাকলেও তা ১০ থেকে ১৫ হাজারের বেশি নয়। মৌলিক চাহিদা মিটিয়ে বছর শেষে তাই তিন লাখ টাকা জামানো তাদের আকাশ কুসুম কল্পনা।

মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ ও অর্থনৈতিক স্তর স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি থেকে উত্তরণে অন্যতম তিনটি ধাপ। সবশেষ মূল্যায়নেও এ তিন সূচকে সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ। তবে মর্জিনা বেগম, ফরহাদ খান কিংবা ন্নানু মিয়া মতো সাধারণ মানুষ কি উত্তীর্ণ হতে পেরেছে? সে প্রশ্নের উত্তর যতটা স্বচ্ছ, গেল সাড়ে ১৫ বছরে ততটাই গরমিল ছিল অর্থনৈতিক সূচকগুলো।

গেল ১০ বছরের মধ্যে নয় বছরই এনবিআরের চেয়ে রপ্তানির হিসাব বেশি দেখিয়েছে ইপিবি। তবে বড় গরমিল হয়েছে গত তিন অর্থবছরের রপ্তানির হিসাবে। এসময় এনবিআরের চেয়ে ২ হাজার ২৬১ কোটি ডলারের রপ্তানি বেশি দেখিয়েছে সংস্থাটি। আর বিদায়ী অর্থবছরের শুধু ১০ মাসেই উধাও হয়েছে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয়। দুই বছরের হিসাবে উধাও হওয়া অর্থের পরিমাণ প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলার। ফলে রপ্তানি আয়ের এই চুপসে যাওয়া পরিসংখ্যান বিবেচনায় কমে যেতে পারে জিডিপি আকার, যা প্রায় দুই শতাংশ বা ৯০০ কোটি ডলার। জিডিপির আকার কমলে কমবে মাথাপিছু আয়, কমবে অর্থনীতির নানা সূচক।

২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর এলডিসি থেকে বের হবে বাংলাদেশ। তবে ভুল তথ্যের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা আর্থিক কাঠামোয় ভর করে এলডিসি থেকে উত্তরণ কতটা সঠিক সিদ্ধান্ত তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। তড়িঘড়ি করে এ আয়োজন আওয়ামি লীগের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অংশ ছিল বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে ২০২৬ সালে এলডিসি গ্রাজুয়েশন হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। এটা নরমাল গতিতে এটাতে যেতে দেওয়া উচিত। জোর করে সবাই মিলে টানাহেঁচড়া করে ২০২৬ সালে এলডিসি গ্র্যাজুয়েট হয়ে যাওয়ার কোনো যুক্তি আমাদের কাছে নেই।’

স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, ‘এই এলডিসি প্রি ম্যাচিউর গ্রাজুয়েশনের যে পরিকল্পনাটি এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ছিল। পরীক্ষায় নকল করে পাশ করা যেমন একটি উপায় এলডিসি গ্রাজুয়েশন জাস্ট সেরকমই একটা ব্যাপার ছিল। কিছু জিনিস সময় নিয়ে যখন আমাদের গ্রাজুয়েশনের সময় হবে ঠিক সেসময় যদি আমরা গ্রাজুয়েশন করি তখন আমরা কম্পিটিশন করার জন্য রেডি।’

এ অবস্থায় প্রকৃত যোগ্যতা ছাড়াই উন্নয়নশীল দেশের কাতারে এলডিসির সুবিধা হারিয়ে নামতে হবে নতুন প্রতিযোগিতায়। তাই উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য আরও সময় নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

অর্থনীতিবিদ ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকার এখানে ছিল যারা দুর্নীতিবাজ সরকার। ব্যাপকভাবে অর্থ লুটপাট করেছে। কাজেই এরকম একটা তথ্যের ভিত্তিতে এখনই যদি আমরা এলডিসি থেকে উত্তরণ করি, গ্রাজুয়েশন হই তাহলে এই যে আমাদের ঘাটতিগুলো ছিল তা মেকাপ করা কঠিন হয়ে যাবে। ভুল তথ্যের ভিত্তিতে আমরা যে গ্রাজুয়েশন সার্টিফিকেট দিচ্ছি এটা ভুল হবে। ফলে আমরা বাজারে গিয়ে কম্পিটিশনে পড়ে যাবো। এই অর্থনীতিতে আমাদের যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেই সমস্যাগুলো আমরা মিটআপ করে তারপর আমরা এলডিসিতে যেতে পারি তাহলে আমরা এর বেনিফিটটা বেশি পাবো।’

রপ্তানি বহুমুখীকরণের পাশাপাশি রাজস্ব আহরণ বাড়াতে কাঠামো সংস্কারসহ অর্থনীতির ঘাটতি মিটিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সক্ষমতা বৃদ্ধির পরামর্শ তাদের।

নিউজটি শেয়ার করুন

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অর্থনীতির নানা সূচকে গরমিল

আপডেট সময় : ০৩:১০:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০২৪

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গরমিল শুরু হয় রপ্তানি তথ্যে। যা উঠে আসে বিদায়ী অর্থবছরের শেষ সময়ে। এতে জিডিপির আকার থেকে শুরু করে কমবে মাথাপিছু আয়, অর্থনীতির নানা সূচক। এমন ভুল তথ্যের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা আর্থিক কাঠামোয় ভর করে এলডিসি থেকে উত্তরণ কতটা সঠিক সিদ্ধান্ত তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। তড়িঘড়ি করে এলডিসি উত্তরণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে আরও সময় নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

সূর্যও জাগাার আগেই জেগে যায় কৃষক। ফরহাদ খান নামের এক কৃষক খোলা আকাশের নিচে নিজ হাতে বোনা সবজির হালচাল দেখছেন। দেনা-পাওনা, সংসার আর ঋণের বোঝা। রাজ্যের ভার যার মাথায় তার কাছে মাথাপিছু আয় নিছক গল্পের সমান।

ফরহাদ খান বলেন, ‘মাথাপিছু আয়টায় আমি বুঝিটুঝি না। কারণ আমি চাষাবাদ করলে মোটামুটি তিন বিঘা জমিতে চাষ করলে দেখা যায় দেড় লাখ টাকা থাকে। সেটা পোলাপানের লেখাপড়ার পিছে খরচা হয়ে যায়। আবার ৭চাষাবাদ করতে হলে ধারদেনা করতে হয়। তখন কিস্তিতে সুদের টাকা আনতে হয়।’

কৃষক নান্নু মিয়ার গল্পও এমন। ভিটাবাড়ি ছাড়া নিজের দুই বিঘা জমি আর চার বিঘা লিজ নিয়ে আবাদ করেছেন তিনি। বছর শেষে খরচবাদে বিঘা প্রতি জমা করেন ৪০ হাজার টাকা।

নান্নু মিয়া বলেন, ‘তিন লাখ টাকা দেনা করে চাষ করেছি। আজ পর্যন্ত তিন টাকাও দিতে পারিনি। ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা মজুরির দাম দিতে হয়। আর সার দিয়ে অনেক খরচ হয়ে যায়। টাকা থাকে না।’

কড়াইল বস্তির মর্জিনার টানাটানির সংসারে স্বামীই একমাত্র ভরসা। বাড়ি মালিক ঘরভাড়া মওকুফ করলেও পরিমিত আহার, সু-চিকিৎসা আর আয়-ব্যয়ের হিসাবে তিনি নিত্য ধরাশায়ী।

মর্জিনা বলেন, ‘ডাক্তার দেখাতে গেলে কষ্ট অনেক হয়। সকালে গিয়ে সিরিয়াল ধরা লাগে। ২টা বা আড়াইটায় সিরিয়াল থেকে শেষ করা লাগে। আআর ওষুধ নিতে সিরিয়াল ধরা লাগে। ৫টা বা ৬টা বেজে যায় আমার বাসায় আসতে। আমার সেই দিন অ্যাবসেন্ট থাকে। মালিক টাকা কেটে দেয়।’

সন্দিপ পাল বংশ পরম্পরায় মৃৎশিল্পের কারিগর হলেও ৮০’র দশকে শুরু হয় বাণিজ্যিক উৎপাদন, তারও কিছুদিন পর রপ্তানি যাত্রা। ৪০ বিলিয়ন ডলারের বৃহৎ রপ্তানিতে মৃৎশিল্পের অবদান থাকলেও তার ছিটে ফোঁটাও বোঝেন না তারা। তাই অর্থনৈতিক সূচক ভাবায় না তাদের।

সন্দিপ পাল বলেন, ‘আমরাই তৈরি করছি। আমাদের হাতেই ডিজাইনগুলোর উন্নতি হচ্ছে। আমরাই এগুলো প্রতিষ্ঠানের কাছে দিয়ে আসছি। তারা বিদেশে রপ্তানি করে পয়সা উপার্জন করছে। কিন্তু আমাদের প্রোডাক্টের পয়সা আমাদের হাতে কিন্তু সেভাবে পাচ্ছি না।’

তাদের সবার আয়ে ভিন্নতা থাকলেও তা ১০ থেকে ১৫ হাজারের বেশি নয়। মৌলিক চাহিদা মিটিয়ে বছর শেষে তাই তিন লাখ টাকা জামানো তাদের আকাশ কুসুম কল্পনা।

মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ ও অর্থনৈতিক স্তর স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি থেকে উত্তরণে অন্যতম তিনটি ধাপ। সবশেষ মূল্যায়নেও এ তিন সূচকে সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ। তবে মর্জিনা বেগম, ফরহাদ খান কিংবা ন্নানু মিয়া মতো সাধারণ মানুষ কি উত্তীর্ণ হতে পেরেছে? সে প্রশ্নের উত্তর যতটা স্বচ্ছ, গেল সাড়ে ১৫ বছরে ততটাই গরমিল ছিল অর্থনৈতিক সূচকগুলো।

গেল ১০ বছরের মধ্যে নয় বছরই এনবিআরের চেয়ে রপ্তানির হিসাব বেশি দেখিয়েছে ইপিবি। তবে বড় গরমিল হয়েছে গত তিন অর্থবছরের রপ্তানির হিসাবে। এসময় এনবিআরের চেয়ে ২ হাজার ২৬১ কোটি ডলারের রপ্তানি বেশি দেখিয়েছে সংস্থাটি। আর বিদায়ী অর্থবছরের শুধু ১০ মাসেই উধাও হয়েছে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয়। দুই বছরের হিসাবে উধাও হওয়া অর্থের পরিমাণ প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলার। ফলে রপ্তানি আয়ের এই চুপসে যাওয়া পরিসংখ্যান বিবেচনায় কমে যেতে পারে জিডিপি আকার, যা প্রায় দুই শতাংশ বা ৯০০ কোটি ডলার। জিডিপির আকার কমলে কমবে মাথাপিছু আয়, কমবে অর্থনীতির নানা সূচক।

২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর এলডিসি থেকে বের হবে বাংলাদেশ। তবে ভুল তথ্যের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা আর্থিক কাঠামোয় ভর করে এলডিসি থেকে উত্তরণ কতটা সঠিক সিদ্ধান্ত তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। তড়িঘড়ি করে এ আয়োজন আওয়ামি লীগের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অংশ ছিল বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে ২০২৬ সালে এলডিসি গ্রাজুয়েশন হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। এটা নরমাল গতিতে এটাতে যেতে দেওয়া উচিত। জোর করে সবাই মিলে টানাহেঁচড়া করে ২০২৬ সালে এলডিসি গ্র্যাজুয়েট হয়ে যাওয়ার কোনো যুক্তি আমাদের কাছে নেই।’

স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, ‘এই এলডিসি প্রি ম্যাচিউর গ্রাজুয়েশনের যে পরিকল্পনাটি এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ছিল। পরীক্ষায় নকল করে পাশ করা যেমন একটি উপায় এলডিসি গ্রাজুয়েশন জাস্ট সেরকমই একটা ব্যাপার ছিল। কিছু জিনিস সময় নিয়ে যখন আমাদের গ্রাজুয়েশনের সময় হবে ঠিক সেসময় যদি আমরা গ্রাজুয়েশন করি তখন আমরা কম্পিটিশন করার জন্য রেডি।’

এ অবস্থায় প্রকৃত যোগ্যতা ছাড়াই উন্নয়নশীল দেশের কাতারে এলডিসির সুবিধা হারিয়ে নামতে হবে নতুন প্রতিযোগিতায়। তাই উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য আরও সময় নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

অর্থনীতিবিদ ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকার এখানে ছিল যারা দুর্নীতিবাজ সরকার। ব্যাপকভাবে অর্থ লুটপাট করেছে। কাজেই এরকম একটা তথ্যের ভিত্তিতে এখনই যদি আমরা এলডিসি থেকে উত্তরণ করি, গ্রাজুয়েশন হই তাহলে এই যে আমাদের ঘাটতিগুলো ছিল তা মেকাপ করা কঠিন হয়ে যাবে। ভুল তথ্যের ভিত্তিতে আমরা যে গ্রাজুয়েশন সার্টিফিকেট দিচ্ছি এটা ভুল হবে। ফলে আমরা বাজারে গিয়ে কম্পিটিশনে পড়ে যাবো। এই অর্থনীতিতে আমাদের যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেই সমস্যাগুলো আমরা মিটআপ করে তারপর আমরা এলডিসিতে যেতে পারি তাহলে আমরা এর বেনিফিটটা বেশি পাবো।’

রপ্তানি বহুমুখীকরণের পাশাপাশি রাজস্ব আহরণ বাড়াতে কাঠামো সংস্কারসহ অর্থনীতির ঘাটতি মিটিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সক্ষমতা বৃদ্ধির পরামর্শ তাদের।