ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনে প্যারিস চুক্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরিবেশবাদীরা
- আপডেট সময় : ০১:২২:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৪
- / ৩৫৪ বার পড়া হয়েছে
আজারবাইজানে হতে যাওয়া বার্ষিক জলবায়ু শীর্ষক সম্মেলন, কপ-টুয়েন্টি নাইনের আগে হোয়াইট হাউজে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনে আবারও প্যারিস চুক্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরিবেশবাদীরা। জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় এতদিনের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় কি-না তা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন তারা। কারণ জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় অর্থ ব্যয় করাকে আগে থেকেই যুক্তিহীন ও অহেতুক হিসেবে দেখে আসছেন ট্রাম্প।
জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবের জেরে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধুকছে বিশ্ববাসী। যা মোকাবিলায় পুরো বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলো ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি। বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রী সেলসিয়াস অথবা সম্ভব হলে ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস কমানোই ছিল মূল লক্ষ্য।
এর জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে কার্বন ও গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ প্রায় ৫০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। এমনকি ২১ শতকের মাঝামাঝি নাগাদ যা শূন্যে নামিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ নিয়ে শুরু হয়েছিলো প্যারিস চুক্তির যাত্রা।
শিল্পোন্নত দেশসহ প্রতিটি দেশের সম্মিলিত অবদান ছাড়া জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলার এই লক্ষ্যে পৌঁছানো কিছুতেই সম্ভব না। এর জন্য উন্নত দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বছরে ১০ হাজার কোটি ডলার অর্থায়ন সহায়তা অব্যাহত রাখার বিষয়টিও এই চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ২০১৭ সালে ক্ষমতায় বসতে না বসতেই প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুনিয়েছিলেন জীবাশ্ম জ্বালানিতে বাড়তি লগ্নির কথাও।
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘আমেরিকা এবং আমেরিকার নাগরিকদের রক্ষার জন্য দায়িত্ব পালন করবো। এর জন্য প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে আমরা বেরিয়ে আসবো।’
এর ভিত্তিতে ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকতেই ২০২০ সালে প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়েও আসে যুক্তরাষ্ট্র। পরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হাত ধরে ২০২১ সালে এই চুক্তিতে ফেরে ওয়াশিংটন। ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায়, দুশ্চিন্তা বাড়ছে। এতে বাইডেনের আমলে চালু হওয়া নীতি বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কাও প্রকট হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী জীবাশ্ম জ্বালানি অপসারণ চুক্তির এনগেজমেন্ট ডিরেক্টর হরজিত সিং বলেন, ‘এবারের নির্বাচনের ফলের পর থেকে আমরা সত্যিই খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি। যুক্তরাষ্ট্র যদি তার আর্থিক সহায়তার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না করে কিংবা বাইডেন প্রশাসন যে নীতিতে কাজ করছিলো তার বিপরীতে কিছু ঘটে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। এটি কপ-টুয়েন্টি নাইন সম্মেলনের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হতে যাচ্ছে।’
ইতোমধ্যে আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে ১১ নভেম্বর শুরু হতে যাওয়া বার্ষিক জলবায়ু সম্মেলন কপ-টুয়েন্টি নাইনেও পড়েছে কালো মেঘের ছায়া। আট বছর আগেও ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৬ সালের নভেম্বরে, মরক্কোর মারাকেশে হওয়া বার্ষিক জলবায়ু সম্মেলনেও একই উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছিল। কারণ ট্রাম্প বরাবরই জলবায়ু পরিবর্তন ও সেই সম্পর্কিত আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করে আসছেন।
জলবায়ু নীতি বিশ্লেষক, লিন্ডা কালচার বলেন, ‘ট্রাম্প এর আগে যখন নির্বাচিত হয়েছিলেন, তখনও মারাকেশে আয়োজিত জলবায়ু সম্মেলনে একই উদ্বেগের কারণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা প্রথম ঘণ্টাতেই অনেক অনিশ্চয়তা এবং উদ্বেগ দেখেছিলাম। এটি স্বাভাবিক। আমরা এখন আবারও তাই দেখছি।’
ট্রাম্পকে ঘিরে এসব শঙ্কা সত্যি হয়, তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত ৪০০ কোটি টন নির্গমন বাড়িয়ে তুলবে বলে ধারণা করছেন পরিবেশবাদীরা। অর্থাৎ পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপানের বার্ষিক নির্গমনের সমতুল্য। কারণ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন ও জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিনিদের কর্মসংস্থান ও অর্থনীতি শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যিনি এবারের ভোট যুদ্ধে জয়ী হলেন, সেই ট্রাম্প যদি আরও বেশি করে কয়লা, গ্যাস ও তেলকূপ খননের দিকে না আগান, তাহলে এতো কর্মসংস্থানের বন্দোবস্ত করা তার পক্ষে কঠিন হয়ে উঠবে। এসবের জন্যই কপ-২৯ আসরের আগে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন পরিবেশবাদীদের হতাশার কারণ হয়ে উঠেছে।