সেন্টমার্টিন নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে সরকার-পর্যটন ব্যবসায়ী
- আপডেট সময় : ০১:০৮:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪
- / ৩৭৯ বার পড়া হয়েছে
সেন্টমার্টিন নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে সরকার ও পর্যটন ব্যবসায়ীরা। পরিবেশ রক্ষায় পর্যটন সীমিত করার সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি দ্বীপবাসীও। সেন্টমার্টিনে ভ্রমণ বন্ধ না করে পরিবেশ রক্ষায় নীতিমালা চান ব্যবসায়ীরা। যদিও পরিবেশ উপদেষ্টা বলছেন, সেন্টমার্টিনের পরিবেশ রক্ষা ও পর্যটন দুটোরই সমন্বয় করছে সরকার। আর সমুদ্র গবেষকরা মনে করেন, সেন্টমার্টিন রক্ষায় পর্যটন নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই।
সেন্টমার্টিন নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে সরকার ও পর্যটন ব্যবসায়ীরা। পরিবেশ রক্ষায় পর্যটন সীমিত করার সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি দ্বীপবাসীও। সেন্টমার্টিনে ভ্রমণ বন্ধ না করে পরিবেশ রক্ষায় নীতিমালা চান ব্যবসায়ীরা। যদিও পরিবেশ উপদেষ্টা বলছেন, সেন্টমার্টিনের পরিবেশ রক্ষা ও পর্যটন দুটোরই সমন্বয় করছে সরকার। আর সমুদ্র গবেষকরা মনে করেন, সেন্টমার্টিন রক্ষায় পর্যটন নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই।
এ যেন আকাশ আর সমুদ্রের নীলের মিতালী। সাগরতীরে বাঁধা মাছ ধরার ট্রলার, সৈকতের লাল কাঁকড়া, ঝিনুক, গাঙচিল অনন্য করেছে নীল জলরাশির এই সাগর কুমারীকে। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য দেখতে বছরের ৫ মাস এখানে ভিড় করেন ভ্রমণপিপাসুরা।
পর্যটকের চাপ, অপরিকল্পিত হোটেল-রিসোর্ট নির্মাণ, নির্বিচারে গাছ কাটা, বর্জ্য ও প্লাস্টিক সামগ্রীর কারণে হুমকিতে পড়েছে প্রবাল দ্বীপটি। গেলো চার দশকে দ্বীপের উপকূল থেকে হারিয়েছে হাজার হাজার টন প্রবাল।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোসলেম উদ্দিন মুন্না বলেন, ‘প্রবাল মানে সিক্রেশন। সিক্রেশন মানে সে আস্তে আস্তে করে গড়বে, তৈরি হবে। কিন্তু তৈরি তো হচ্ছে না উল্টো এটা ভাঙার জন্য যত ধরনের আয়োজন সব সেখানে আছে। যার কারণে আমরা মনে করি একদিকে প্রাকৃতিকভাবে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে মানুষের অপরিকল্পিত যে পর্যটন সেটার কারণে প্রবাল নষ্ট হচ্ছে। প্রবাল ধংস হওয়া মানে হচ্ছে দ্বীপটা ধংস হওয়া দ্বীপটা ভেঙে যাওয়া।’
এমন পরিস্থিতিতে সেন্টমার্টিন রক্ষায় কঠোর হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। নভেম্বরে রাতে থাকার নিষেধাজ্ঞা, ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ২ হাজার পর্যটকের রাত্রিযাপনের অনুমতি আর ফেব্রুয়ারিতে পুরোপুরি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত সরকারের। পরিবেশ উপদেষ্টা বলছেন, সেন্টমার্টিনের পরিবেশ রক্ষায় এই উদ্যোগ।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সকল গ্রহণযোগ্য জার্নালে বলা হচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে ২০৪৫ সালের মধ্যে সকল কোরাল ক্ষয় হয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপটা ডুবে যাবে। তখন পর্যটনটা তাহলে থাকবে কোথায়?’
তবে সরকারের এমন ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছেন দ্বীপবাসী। তারা বলছেন, স্থানীয়দের সঙ্গে কথা না বলে এমন সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক।তাদের প্রশ্ন, যে দ্বীপের ৯৯ শতাংশ মানুষ পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। সেখানে এমন সিদ্ধান্ত হলে কোথায় যাবে তারা?
দীর্ঘ ২০ বছর ধরে সেন্টমার্টিনে গড়ে উঠেছে প্রায় ২০০ এর বেশি হোটেল মোটেল রিসোর্ট। বিনিয়োগ শত কোটি টাকার বেশি। পর্যটন ব্যবসায়ীদের কপালে তাই চিন্তার ভাঁজ।
নীল হাওয়া বিচ রিসোর্টের এমডি আব্দুল্লাহিল মামুন নিলয় বলেন, ‘হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়ে আছে ওখানে এবং অনেকগুলো মানুষের কর্মসংস্থান এটার সঙ্গে জড়িত। সেটাকে নেগেটিভলি উপস্থাপন করার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান না করে আপনি সেটা বন্ধ করে দিবেন সেটা কোনোদিক থেকে যৌক্তিক হয় না। পরিবেশের সঙ্গে যেসব বিষয় সাংঘর্ষিক সেগুলো প্রতিহত করা বা ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’
সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষা-উন্নয়ন জোট। পর্যটন চালু রেখে দ্বীপের পরিবেশ রক্ষার পক্ষে মত এই জোটের।
যদিও সেন্টমার্টিন নিয়ে সমুদ্র গবেষকদের মত সরকারের পক্ষেই। তারা বলছেন, প্রবাল এই দ্বীপ রক্ষায় পর্যটন নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে সেন্টমার্টিনের অধিবাসীদের পুরনো পেশা মাছ ধরায় প্রণোদনা দেবার পাশাপাশি বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরির পরামর্শ তাদের।