আগামী নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠন থেকে অনেক প্রার্থীর নাম মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা পড়েছে। নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে এবং কমিশনের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য প্রস্তাবিত প্রার্থীদের মধ্যে সাবেক সচিবদের নাম উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় এসেছে, যা আগের ধারাবাহিকতার প্রতিফলন। তবে এবার শিক্ষাবিদদেরও বেশ কিছু নাম আলোচনায় এসেছে।
নির্বাচন কমিশনার পদের জন্য সুধীসমাজের প্রতিনিধি, সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা, বিচারক, শিক্ষক, সিনিয়র সাংবাদিক, আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীর নামও জমা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর নাম প্রস্তাব করার শেষ সময় ছিল গত ৭ নভেম্বর বিকেল ৫টা।
সূত্রের তথ্যমতে, মোট ১৭টি রাজনৈতিক দল ও জোট বিভিন্ন নাম প্রস্তাব করেছে, যার মধ্যে বিএনপি এবং তাদের সমমনা কিছু দল প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে সাবেক সচিব এ এম এম নাসির উদ্দিন ও শফিকুল ইসলামের নাম প্রস্তাব করেছে। গণতন্ত্র মঞ্চের ছয়টি দলও পৃথকভাবে সাবেক সচিব শফিকুল ইসলামের নাম প্রস্তাব করেছে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খানের নাম দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে গণ অধিকার পরিষদ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন অধ্যাপকসহ ছয়জনের নাম জমা দিয়েছে, যার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক রুহুল আমিন ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসের নাম উল্লেখযোগ্য।
এবার কমিশনার পদের জন্য সাবেক বিচারক, সামরিক কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ এবং সাংবাদিকদের নামও এসেছে। প্রস্তাবিত প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঞা, বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) এর সাবেক প্রধান মেজর জেনারেল এ এল এম ফজলুর রহমান, এবং সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ আরও অনেক বিশিষ্টজন।
কোনো সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা না থাকলেও বিগত কমিশনগুলোতে একজন নারী সদস্য নিয়োগের বিষয়টি এবারও আলোচিত হচ্ছে। অনুসন্ধান কমিটি আগামী ২১ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিটি পদের জন্য দুজনের নাম চূড়ান্ত করে রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেবে।
আগের চার সিইসি ছিলেন সাবেক সচিব : দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ৭ জুলাই দেশের প্রথম নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান বিচারপতি মো. ইদ্রিস। এরপর বিচারপতি এ কে এম নুরুল ইসলাম, বিচারপতি চৌধুরী এ টি এম মাসুদ, বিচারপতি সুলতান হোসেন খান, বিচারপতি মো. আবদুর রউফ, বিচারপতি এ কে এম সাদেক, মোহাম্মদ আবু হেনা, এম এ সাঈদ, বিচারপতি এম এ আজিজ, ড. এ টি এম শামসুল হুদা, কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, কে এম নুরুল হুদা ও সর্বশেষ কাজী হাবিবুল আউয়াল প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ পান।
এঁদের মধ্যে সাতজন ছিলেন বিচারপতি এবং ছয়জন ছিলেন সাবেক সচিব। ১৯৭২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সাবেক বিচারপতিরাই সিইসি পদে নিয়োগ পেয়ে আসছিলেন। এর পরিবর্তন হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পর। ওই সময় বিচারপতি এ কে এম সাদেক পদত্যাগ করেন এবং সিইসি পদে প্রথমবারের মতো একজন সাবেক সচিব (মোহাম্মদ আবু হেনা) নিয়োগ পান। আবু হেনার পর নিয়োগ পান সাবেক সচিব এম এ সাঈদ। এরপর ২০০৫ সালের ২০ মে আপিল বিভাগে কর্মরত একজন বিচারপতি (বিচারপতি এম এ আজিজ) সিইসি হিসেবে নিয়োগ পেলেও ব্যাপক আন্দোলনের মুখে ২০০৭ সালের ২১ জানুয়ারি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এর পরের চার প্রধান নির্বাচন কমিশনার হয়েছেন সাবেক সচিব।
পর পর চারবার একই ছক : নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের বিশ্লেষণ, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া পর পর চারটি কমিশন প্রায় একই ছকে গঠন হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে সরকারের একজন সাবেক সচিব, নির্বাচন কমিশনার পদে সেনাবাহিনীর একজন সাবেক কর্মকর্তা এবং একজন সাবেক বিচারককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিদায়ি কে এম নুরুল হুদা কমিশনে দেশে প্রথমবারের মতো একজন নারীকেও নিয়োগ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছাড়াই পরের নির্বাচন কমিশনগুলোতেও একই ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়। এ ছাড়া গত তিনটি নির্বাচন কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ পাঁচজন করে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ হয়ে আসছে।