ঢাকা ০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

শুধু ওসির বাড়ির জন্য তিন কোটি টাকার কালভার্ট!

মাদারীপুর প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৩:১৭:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪
  • / ৩৪৩ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মাদারীপুরে এক পুলিশ কর্মকর্তার বাড়ির জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সোয়া তিন কোটি টাকার বেশি খরচে একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। সম্প্রতি কালভার্টের নির্মাণকাজ শেষে প্রকল্পের তথ্যসম্বলিত ফলক স্থাপনের পর বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তুমুল আলোচনার সৃষ্টি হয়। কালভার্ট নির্মাণে বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে, এমন অভিযোগ করে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের ইটেরপুল থেকে পাথুরিয়ারপাড় সড়কের সৈয়না গ্রামের কামাল মোল্লার বাড়ির সামনে ‘বরিশাল খালের’ ওপরে একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। কামাল মোল্লার বড় ভাই মোস্তাফিজুর রহমান মোল্লা শরীয়তপুর জেলার জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি ঢাকার উত্তরা হাইওয়ে থানায় কর্মরত আছেন। কামাল মোল্লার বাড়ির কথা প্রকল্প ফলকে উল্লেখ থাকলেও মূলত ওসি মোস্তাফিজুর রহমানই ওই বাড়ির মালিক বলে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, কামাল মোল্লার ভাই পাশের জেলা শরীয়তপুরের জাজিরা থানায় দীর্ঘদিন ওসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে ঢাকার উত্তরা হাইওয়ে থানায় কর্মরত আছেন। মূলত তিনি গত বছর তাদের ফসলি জমিতে বালু ফেলে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। নতুন এই বাড়ি ইটেরপুল-পাথুরিয়াপাড় সড়কের বরিশাল খালের পূর্ব পাড়ে অবস্থিত। তাই তিনি জাজিরা থানায় ওসি থাকাকালীন সময়ে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে মন্ত্রণালয়ে বিশেষ তদবির করে শুধু তার নিজের বাড়ির জন্য এই কালভার্টটি নির্মাণের প্রস্তাব পাস করিয়ে আনেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এডিপি প্রকল্পের আওতায় মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়েনের সৈয়না গ্রামের কামাল মোল্লার বাড়ির কাছে খালের ওপরে আরসিসি কালভার্ট নির্মাণে ৩ কোটি ২৩ লাখ ৮৭ হাজার ৯৬ টাকায় আবরার এন্টারপ্রাইজের সাথে চুক্তি করে। যা চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হয়।

মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘সৈয়না গ্রামের বাসিন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর (ওসি) মোস্তাফিজ। তিনি তাদের ফসলি জমিতে অবৈধভাবে বালু ভরাট করে নিজের ভাইদের নামের আড়ালে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। এত টাকা তিনি কোথায় পেলেন এই প্রশ্ন রইলো। এ ছাড়া তিনি জাজিরা থানায় ওসি থাকার সময় প্রভাব খাটিয়ে মন্ত্রণালয়ে তদবিরের মাধ্যমে নিজের বাড়ির জন্য একটি কালভার্ট সেতু নির্মাণ করেছেন। সেতুটির ফলক দেখে জানতে পারলাম এত ছোট্ট একটি সেতু নির্মাণ করতে সাবেক সরকার সোয়া তিন কোটি টাকা খরচ করেছে। এই সেতু নির্মাণের অনিয়মে যারা জড়িত তাদের সকলের বিরুদ্ধে তদন্ত ও সরকারি ব্যবস্থাগ্রহণের দাবি করছি।’

নিজের বাড়ির জন্য সেতু নির্মাণের বিষয়ে কথা হয় ইন্সপেক্টর মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের যৌথ পরিবার। পরিবারে প্রায় ৪০ জন সদস্য, সবাই এক সাথে থাকি। আর ওই বাড়িটি আমার নয়। আমার ভাই তুলতেছেন। আমাদের নতুন বাড়িতে যাতায়াতের ব্রিজটি আমরা অন্য সবার মতনই তদবির করে এনেছি। কিন্তু এরকম আরও ব্রিজ আছে, এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখেন। শুধু আমরা একারাই এরকম ব্রিজ করাইনি।’

এ বিষয়ে মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, ‘আমিতো এখানে নতুন এসেছি। আমি কিছুই জানি না। আপনি যখন বললেন, আমি বিষয়টির খোঁজ খবর নেব। একটি বাড়ির জন্য একটি সেতুতো নির্মাণ হওয়ার কথা নয়।’

নিউজটি শেয়ার করুন

শুধু ওসির বাড়ির জন্য তিন কোটি টাকার কালভার্ট!

আপডেট সময় : ০৩:১৭:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪

মাদারীপুরে এক পুলিশ কর্মকর্তার বাড়ির জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সোয়া তিন কোটি টাকার বেশি খরচে একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। সম্প্রতি কালভার্টের নির্মাণকাজ শেষে প্রকল্পের তথ্যসম্বলিত ফলক স্থাপনের পর বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তুমুল আলোচনার সৃষ্টি হয়। কালভার্ট নির্মাণে বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে, এমন অভিযোগ করে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের ইটেরপুল থেকে পাথুরিয়ারপাড় সড়কের সৈয়না গ্রামের কামাল মোল্লার বাড়ির সামনে ‘বরিশাল খালের’ ওপরে একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। কামাল মোল্লার বড় ভাই মোস্তাফিজুর রহমান মোল্লা শরীয়তপুর জেলার জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি ঢাকার উত্তরা হাইওয়ে থানায় কর্মরত আছেন। কামাল মোল্লার বাড়ির কথা প্রকল্প ফলকে উল্লেখ থাকলেও মূলত ওসি মোস্তাফিজুর রহমানই ওই বাড়ির মালিক বলে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, কামাল মোল্লার ভাই পাশের জেলা শরীয়তপুরের জাজিরা থানায় দীর্ঘদিন ওসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে ঢাকার উত্তরা হাইওয়ে থানায় কর্মরত আছেন। মূলত তিনি গত বছর তাদের ফসলি জমিতে বালু ফেলে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। নতুন এই বাড়ি ইটেরপুল-পাথুরিয়াপাড় সড়কের বরিশাল খালের পূর্ব পাড়ে অবস্থিত। তাই তিনি জাজিরা থানায় ওসি থাকাকালীন সময়ে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে মন্ত্রণালয়ে বিশেষ তদবির করে শুধু তার নিজের বাড়ির জন্য এই কালভার্টটি নির্মাণের প্রস্তাব পাস করিয়ে আনেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এডিপি প্রকল্পের আওতায় মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়েনের সৈয়না গ্রামের কামাল মোল্লার বাড়ির কাছে খালের ওপরে আরসিসি কালভার্ট নির্মাণে ৩ কোটি ২৩ লাখ ৮৭ হাজার ৯৬ টাকায় আবরার এন্টারপ্রাইজের সাথে চুক্তি করে। যা চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হয়।

মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘সৈয়না গ্রামের বাসিন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর (ওসি) মোস্তাফিজ। তিনি তাদের ফসলি জমিতে অবৈধভাবে বালু ভরাট করে নিজের ভাইদের নামের আড়ালে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। এত টাকা তিনি কোথায় পেলেন এই প্রশ্ন রইলো। এ ছাড়া তিনি জাজিরা থানায় ওসি থাকার সময় প্রভাব খাটিয়ে মন্ত্রণালয়ে তদবিরের মাধ্যমে নিজের বাড়ির জন্য একটি কালভার্ট সেতু নির্মাণ করেছেন। সেতুটির ফলক দেখে জানতে পারলাম এত ছোট্ট একটি সেতু নির্মাণ করতে সাবেক সরকার সোয়া তিন কোটি টাকা খরচ করেছে। এই সেতু নির্মাণের অনিয়মে যারা জড়িত তাদের সকলের বিরুদ্ধে তদন্ত ও সরকারি ব্যবস্থাগ্রহণের দাবি করছি।’

নিজের বাড়ির জন্য সেতু নির্মাণের বিষয়ে কথা হয় ইন্সপেক্টর মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের যৌথ পরিবার। পরিবারে প্রায় ৪০ জন সদস্য, সবাই এক সাথে থাকি। আর ওই বাড়িটি আমার নয়। আমার ভাই তুলতেছেন। আমাদের নতুন বাড়িতে যাতায়াতের ব্রিজটি আমরা অন্য সবার মতনই তদবির করে এনেছি। কিন্তু এরকম আরও ব্রিজ আছে, এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখেন। শুধু আমরা একারাই এরকম ব্রিজ করাইনি।’

এ বিষয়ে মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, ‘আমিতো এখানে নতুন এসেছি। আমি কিছুই জানি না। আপনি যখন বললেন, আমি বিষয়টির খোঁজ খবর নেব। একটি বাড়ির জন্য একটি সেতুতো নির্মাণ হওয়ার কথা নয়।’