পাঠ্যবইয়ে মুজিবের ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ বাদ, থাকছে ৭ মার্চের ভাষণ
- আপডেট সময় : ০৫:২৫:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪
- / ৩৪১ বার পড়া হয়েছে
৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর, বদল এসেছে একাদশ-দ্বাদশের পাঠ্যবইয়ে। বাদ দেয়া হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘বায়ান্নর দিনগুলো’, আর শেখ কামালের জীবনী। তবে রেখে দেয়া হয়েছে ৭ মার্চের ভাষণ। ইংরেজি বইয়ে সম্পূর্ণ নতুন পাঠ্য যুক্ত করাসহ আইসিটি বইয়েও এসেছে পরিবর্তন।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর হাত দিয়েছে শিক্ষা সংস্কারেও। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যবইয়েও আনা হয়েছে সংযোজন বিয়োজন।
একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সাহিত্যপাঠ বই থেকে বাদ দেয়া হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র অংশ ‘বায়ান্নর দিনগুলো’। একইভাবে বাদ দেয়া হয়েছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’। এ ছাড়া কবিতা দিলওয়ারের ‘মানুষ সকল সত্য’ আর মহাদেব সাহা’র ‘শান্তির গান’ও বাদ পড়েছে।
২৮টি করে গদ্য এবং কবিতার মধ্য থেকে ২০২৬ সালের এইচএসসি পরীক্ষার জন্য ১২টি করে গদ্য এবং কবিতা নির্বাচিত করা হয়েছে। যেখানে গদ্য নতুন করে যুক্ত হয়েছে প্রমথ চৌধুরীর ‘সাহিত্যের খেলা’, মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ‘জীবন ও বৃক্ষ’, সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘গন্তব্য কাবুল’ এবং শওকত আলীর ‘কপিলদাস মুর্মুর শেষ কাজ’। আর কবিতা যুক্ত হয়েছে আলাওলের ‘ঋতু বর্ণন’ এবং আল মাহমুদুদের বিখ্যাত ‘সোনালী কাবিন’ কাব্যগ্রন্থের ‘প্রত্যাবর্তনের লজ্জা’ কবিতা।
প্রমথ চৌধুরীর ‘বর্ষা’র পরিবর্তে ‘সাহিত্যের খেলা’, রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেনের ‘গৃহ’র বদলে ‘অর্ধাঙ্গী’ এবং কাজী নজরুল ইসলামের ‘আমার পথ’র জায়গায় ‘যৌবনের গান’ যুক্ত করা হয়েছে। তবে সহপাঠের উপন্যাস ও নাটকে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।
‘ইংলিশ ফর টু ডে’ বইয়ে শেখ কামালকে নিয়ে ছয় পৃষ্ঠার যে জীবনী এতদিন পাঠ্য ছিল, সেটি বাদ দেয়া হয়েছে। রাখা হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ। তবে যেখানে ৭ মার্চের ভাষণের পরিচয়ে শেখ মুজিবের নামের আগে ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি বাদ দেয়া হয়েছে, সঙ্গে তার ছবিও।
এছাড়া এই বইয়ে সম্পূর্ণ নতুন করে ‘রিডিং ফর প্লেজার’ যুক্ত করা হয়েছে। যেখানে রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেনের ‘সুলতানাস ড্রিম’, ল্যাংসটন হিউজেসের ‘থ্যাংক ইউ ম্যাডাম’, সাদাত হোসেন মান্টোর ‘তোবা টেক শিং’ গল্প হিসেবে ইমাম আল গাজ্জালীর ‘ডেথ বেড’, এলিসি ডিকিনসনের ‘হোপ ইজ দ্য থিং উইথ ফ্যাদার্স’, পাবলো নেরুদা’র ‘বার্ড’ এবং আনতন চেখবের নাটক ‘প্রোপজাল’ পাঠ্য হিসেবে রাখা হয়েছে।
এবং সবশেষ ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ বইয়েও এসেছে খানিকটা পরিবর্তন। প্রথম অধ্যায়ের ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ সম্পর্কে বিস্তর জানতে নতুন করে আরও দু’টি প্যারা সংযোজন করা হয়েছে। একই অধ্যায়ে ‘ক্রায়ো সার্জারি’ বাদ দিয়ে সেই জায়গায় যুক্ত করা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ‘ইন্টারনেট অব থিংকস’। ‘প্লেজিয়ারিজম’ লেখা হয়েছে নতুন করে। পঞ্চম অধ্যায়ের ‘কনসেপ্ট অব প্রোগ্রামিং’ একেবারে বাদ দেয়া হয়েছে। বাদ দেয়া হয়েছে ‘ভিজুয়াল বেসিক’, ‘অ্যালগল’, ‘ফোর্ট্রান’ এর মতো অপ্রচলিত প্রোগ্রামগুলোর ধারণাও।
বিগত শেখ হাসিনা সরকারের সময় শিক্ষাক্রমে একটি দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। সেখান থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীদের সঠিক শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যেই পাঠ্যবই পরিমার্জন করা বলে জানান জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ. কে. এম রিয়াজুল হাসান বলেন।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষা সিলেবাস, কারিকুলাম যেন একটা কোনো দলের সম্পত্তি না হয়ে উঠে। পরিমার্জন করতে গিয়ে আমাদের যে শুধু গ্রহণ বা বর্জন হয়েছে তা নয়। অনেক কিছুই, অনেক বানান, অনেক বাক্যও পরিবর্তন করতে হয়েছে। বেশকিছু ছবি পরিবর্তন করতে হয়েছে।’
এদিকে এই পরিমার্জন জুলাই বিপ্লবেরই আকাঙ্ক্ষা বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ছাত্র-জনতার বিপ্লবের যে প্রত্যাশা, সে প্রত্যাশা অনুযায়ী এটাকে আমি ইতিবাচকভাবেই দেখি। কিন্তু এটার একটা স্থায়ীকরণ প্রয়োজন। যেন পরবর্তীতে আবার পরিবর্তন না হয়ে যায়। যে রাজনৈতিক সরকারই আসুক তারা একচোখা হয়ে যায়। এই একচোখাটা না হয়ে সার্বজনীনভাবে যদি এটা করা যায় সেটা অবশ্যই উত্তম।’
একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যবই মুদ্রণের কাজ চলছে। দু’একদিনের মধ্যে যেতে শুরু করবে বাজারেও। নকল এড়াতে বইয়ের প্রথম দুই পাতায় এনসিটিবি’র মনোগ্রাম দেখে কিনতে হবে শিক্ষার্থীদের। তবে প্রিন্টিং প্রেসগুলোকে মানসম্মত বই বাজারে সরবরাহের আহ্বান সংশ্লিষ্টদের।