বিশ্ব কিংবা রাষ্ট্র নয়, বাংলাদেশে ২০২৪ এ বন্যা মোকাবিলা করেছে তরুণরা। বাকুতে জলবায়ু সম্মেলনের বিশ্বমঞ্চে এ তথ্য জানালেন, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বলেন, উন্নত বিশ্বের সদিচ্ছার অভাবে বাংলাদেশসহ জলবায়ু প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো ঋণের জালে আটকা পড়ছে। এই সংকট কাটাতে অর্থ ছাড় দেয়ার কোনো বিকল্প নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষতিপূরণ আদায়ে বিশ্বের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য পরিকল্পনা তুলে ধরা হচ্ছে।
একদিনের বিরতি দিয়ে বাকুতে ফের শুরু হয়েছে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্ব। যাকে বলা হয়ে থাকে মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনা। যেখানে অংশ নিচ্ছেন জাতিসংঘভুক্ত ১৯৮টি দেশের মন্ত্রী। সোমবার বাকুর স্থানীয় সময় সকালে সম্মেলনস্থলে নিজ প্যাভিলনে লস অ্যান্ড ড্যামেজ নিয়ে পর্যালোচনার আয়োজন করে বাংলাদেশ। যেখানে তুলে ধরা হয় ২০২৪ এ বাংলাদেশের বন্যা আর দুর্যোগের পরিস্থিতি।
বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা বলছেন, ক্ষয়ক্ষতির অর্থ আদায় করতে সম্মেলনে একটি আন্তর্জাতিক মানের পরিকল্পনা তুলে ধরা হচ্ছে। বাংলাদেশের চিত্রটি যেন বিশ্ব গ্রহণ করে তা নিয়েও তাদেরকে চাপ দেয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে এখন আর প্রমাণের কিছু নেই জানিয়ে তারা বলেন, টেবিলের আলোচনা বাদ দিয়ে টাকা ছাড়ে একমত হতে হবে বিশ্ব মোড়লদের।
নির্বাহী পরিচালক, সিইজিআইএসের নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা এ. খান বলেন, ‘প্রতি বছর আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলার ফান্ড চাচ্ছি। তেমনিভাবে আমরা মনে করি ভবিষ্যতে আমরা এটা অ্যাসেসমেন্ট করতে পারলে আমাদের কী পরিমাণ ফান্ড দরকার সেটাও আমরা বলতে পারবো। তবে আমি বলবো আমরা এখনো আশানুরূপ ফান্ডের বিষয়ে কোনো আশ্বাস পাইনি। সেই সঙ্গে যেসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী তারাও আশ্বস্ত করেনি।’
দ্বিতীয় পর্বে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়ে পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে যে প্রক্রিয়ায় ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে, তাতে করে বাংলাদেশসহ এসব দেশ আরো বেশি ঋণের জালে আটকা পড়বে। লস অ্যান্ড ড্যামেজের আওতায় ক্ষতিপূরণ পাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত দেশের প্রতি কোন করুণা নয় বরং অধিকার বলেও তিনি স্পষ্ট করে বিশ্বকে জানান।
বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘যে পরিমাণ টাকা আমাদের পাওয়ার কথা তার কাছে ধারেও আমরা পাচ্ছি না। আর উন্নত দেশের মিটিগেশন কমানোর যে প্রক্রিয়া সেটা দেরি হওয়ার কারণে আমাদের খাপ খাইয়ে নেয়া বা আমাদের অ্যাডাপ্টেশন বা দুর্যোগ মোকাবেলা করার সক্ষমতা আরো কমছে। কারণ ঝুঁকি আমাদের আরো বেড়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে যে, লস অ্যান্ড ড্যামেজে যেন তাড়াতাড়ি টাকা পাওয়া যায়। আমরা যেন সহজে ওটা পেতে পারি সেটা নিশ্চিত করতে হবে, পর্যাপ্ত টাকা নিশ্চিত করতে হবে, পাবলিক ফান্ড থেকে টাকা আসতে হবে এবং আমরা যেন সময়মতো এটা পাই সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’
২০২৪ এ রাষ্ট্র বা জাতিসংঘ এসে বাংলাদেশের বন্যা মোকাবেলা করেনি বরং তরুণরাই তা মোকাবেলা করেছে বলে তিনি বিশ্বকে জানান। আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়া শুরু করলে বাংলাদেশ তা গ্রহণে প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান পরিবেশ উপদেষ্টা।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বছরে তিনটা বড় বড় বন্যা মোকাবেলা করতে হয়। একটা ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে পড়তে হয় এবং ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রার ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয়। তাহলে আমাদের প্রস্তুতির ঘাটতি থাকার তো কারণ নাই। কিন্তু এইযে প্রস্তুতির ঘাটতির কথা বলা হচ্ছে এখানেও তো আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সাহায্য করার কথা ছিল। প্রযুক্তি দিয়ে, জ্ঞান দিয়ে। ঋণের বেড়াজালে পড়ে আমরা তো সে সক্ষমতাও বৃদ্ধি করতে পারছি না।’
আগামী জানুয়ারিতে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে একটি জলবায়ু সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। তবে তা কোথায় হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয় নি।