এই দিনে লাখো ভারতীয়কে স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন কামিন্স
- আপডেট সময় : ০৬:১৬:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪
- / ৩৪২ বার পড়া হয়েছে
মঞ্চ একদম প্রস্তুত ছিল। ঘরের মাঠে লাখো দর্শকের সামনে বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারত। উইকেট স্বাগতিক দলের কথা চিন্তা করেই বানানো। ভারতীয়রা অপেক্ষায় ছিলেন রোহিত শর্মার বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরার। শুধু অস্ট্রেলিয়ার জন্য চেন্নাইয়ে এক ভয়ংকর উইকেট বানিয়ে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছিল ভারত। ওই এক ম্যাচেই যা একটু কষ্ট হয়েছে, এরপর প্রতিটি ম্যাচেই দাপটের সঙ্গে জয় পাওয়া ভারত গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচ জিতেছে।
দাপটের সঙ্গে সেমিফাইনাল পার করে ফাইনালে ওঠা ভারত তবু অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে ভয়ে ছিল। তাই আহমেদাবাদের উইকেট অস্ট্রেলিয়ার জন্য যতটা সম্ভব কঠিন বানিয়ে রেখেছিল। তবু লাভ হয়নি, এক লাখ ৩০ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার আহমেদাবাদ স্টেডিয়ামে লাখো ভারতীয় সমর্থককে স্তব্ধ করে বিশ্বকাপ জিতেছিল অস্ট্রেলিয়াই।
এক বছর আগে ঠিক আজকের এই দিনেইই স্বাগতিক ভারতকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল ওয়ানডের সফলতম দল। ঘরের মাঠে নিজেদের তৃতীয় বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্নে বিভোর ভারত উলটো দেখল অস্ট্রেলিয়া কীভাবে নিজেদের ষষ্ঠ শিরোপা জিতছে।
ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জয়ের জন্য সবকিছু প্রস্তুত করে রেখেছিল ভারত। ফাইনালের তিন দিন আগেই উইকেট নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বকাপ জেতার নেশায় সে সমালোচনাকে পাত্তাই দেয়নি বিসিসিআই। টানা ১০ ম্যাচ জয়ী ভারত, উইকেট স্পিন বান্ধব, গ্যালারিতে লাখেরও বেশি দর্শক। আর ২০১১ সালের পর থেকে স্বাগতিক দলগুলো বিশ্বকাপ জিতেছে।
অন্য দিকে দুই ম্যাচে হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা অস্ট্রেলিয়া আফগানিস্তানের বিপক্ষেও হারতে বসেছিল। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অতিমানবীয় এক ডাবল সেঞ্চুরি সে যাত্রা বাঁচালেও সেমিফাইনালেই স্নায়ুর পরীক্ষায় প্রায় হেরে বসেছিল দলটি। সবদিক থেকেই পিছিয়ে ছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু অধিনায়ক প্যাট কামিন্স বলেছিলেন যত বেশি দর্শক, তাদের চুপ করিয়ে দিতে তত বেশি মজা।
গ্যালারিতে নীল ঢেউর মাঝে কোনো কমলা জার্সি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। লাখো ভারতীয়র মাঝে মুষ্টিমেয় অস্ট্রেলিয়ান সমর্থকদের খুঁজে পেতে ক্যামেরাম্যানকেও কষ্ট করতে হচ্ছিল। কিন্তু বড় মঞ্চ পেলেই যে নিজেদের জাত চেনান অস্ট্রেলিয়ানরা।
রোহিত শর্মা নেমেই ঝড় তুলেছিলেন। পাওয়ার প্লেতেই ৮০ রান তুলে ফেলে ভারত। কঠিন উইকেটে এমন এক শুরু জয় এনে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে চার চার ও ৩ ছক্কা মারা রোহিতের ৪৭ রানের (৩১ বল) ইনিংস থামান ম্যাক্সওয়েল।
বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান স্কোরার বিরাট কোহলি ও দারুণ ফর্মে থাকা কেএল রাহুল উইকেটে ছিলেন। কিন্তু ১৮ ওভার স্থায়ী জুটিতে ভারতের রান তোলার গতি থমকে গিয়েছিল। টানা ১৬ ওভার কোনো বাউন্ডারি পায়নি স্বাগতিক দল। ভারতীয় গ্যালারি অবশ্য এতেও দম হারায়নি।
কিন্তু ২৯তম ওভারে মাত্র ফিফটি পেরোনো কোহলি (৫৪) প্যাট কামিন্সের একটা বল টেনে আনেন স্টাম্পে। আহমেদাবাদ স্টেডিয়ামে তখন পিনপতন নিরবতা। ১৯৯৯ সালে ইডেন গার্ডেনসে শোয়েব আখতারের বলে শচীন টেন্ডুলকারের স্টাম্প উপড়ানোর পর ঘরের মাঠে এমনভাবে ভারতীয় দর্শকদের চুপ করাতে পারেননি কোনো বোলার।
১৪৮ রানে চতুর্থ উইকেট হারানো ভারত সে ধাক্কা আর সামলাতে পারেনি। লোকেশ রাহুলও (৬৬) একটু পর ফিরে যান। ভারত ২৪০ রানে গুটিয়ে যায়। পাওয়ার প্লের পরের ৪০ ওভারে মাত্র ৪টি বাউন্ডারি পেয়েছিল ভারত।
যশপ্রীত বুমরা ও মোহাম্মদ শামি আশা জাগিয়েছিলেন, ৪৭ রানেই অস্ট্রেলিয়ার ৩ উইকেট পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু ট্রাভিস হেডের ১২০ বলে ১৩৭ রানের ঝড় ভারতীয় বোলারদের কোনো সুযোগ দেয়নি। জয় থেকে ২ রান দূরে হেড আউট হলেও অন্য প্রান্তে ১১০ বলে ৫৮ রানে অপরাজিত ছিলেন মারনাশ লাবুশেন। ৭ ওভার বাকি থাকতেই ৬ উইকেটের জয় পায় অস্ট্রেলিয়া।
অস্ট্রেলিয়াকে আটকাতে ধীর গতির উইকেট বানিয়ে নিজেরাই থমকে গিয়েছিল ভারত। এ নিয়ে পরে সমালোচনা করেছিলেন মোহাম্মদ কাইফের মতো বেশ কিছু সাবেক ক্রিকেটার। ঘরের মাঠে সুবিধাজনক কন্ডিশনে বিশ্বকাপ জেতার সুবর্ণ এক সুযোগ নষ্ট করে ভারত।
সে হতাশা অবশ্য ছয় মাস পর ওয়েস্ট ইন্ডিজে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে কিছুটা ভুলেছে ভারত।