কলাটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছে। সেই ২০১৯ সাল থেকে। একটি কলা নিয়ে কখনো এতদিন টানা আলোচনা হয়নি। এই কলার বিশেষত্ব হচ্ছে, এটি টেপ দিয়ে দেওয়ালে আটকানো। আর এই বৈচিত্র্যের কারণেই এটি হয়ে উঠেছে অনন্য। আর নিলামে বিক্রি হয়েছে ৬২ লাখ মার্কিন ডলারে (প্রায় ৭৪ কোটি টাকা)।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, দেয়ালে স্কচটেপ দিয়ে আটকানো একটি সাধারণ কলা হলেও এটি আসলে একটি শিল্পকর্ম। ইতালিয়ান শিল্পী মরিজিও ক্যাটেলান এই শিল্পের স্রষ্টা।
আমেরিকার নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত নিলামে শেষ পর্যন্ত ৬২ লাখ ডলারে বিক্রি হয়েছে একটি সাধারণ কলা দিয়ে তৈরি ‘কমেডিয়ান’ শিরোনামের শিল্পকর্মটি। এই দাম প্রত্যাশার চেয়ে ৪ গুণ। গত বুধবার অনুষ্ঠিত ওই নিলামে ‘কমেডিয়ান’ কিনে নেওয়ার জন্য অন্তত ছয়জন আগ্রহীকে পেছনে ফেলেন চীনা ক্রিপ্টোকারেন্সি উদ্যোক্তা জাস্টিন সান।
শিল্পটি কেনার পর সান সেখানে বলেন, ‘আগামী দিনগুলোতে আমি ব্যক্তিগতভাবে এই অনন্য শৈল্পিক অভিজ্ঞতার অংশ হিসেবে কলাটি নিজেই খেয়ে ফেলব।’
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, নিলামের দিন ‘কমেডিয়ান’ শিল্পকর্মে যে কলাটি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল, সেদিন সকালেই মাত্র ৩৫ সেন্ট দিয়ে কেনা হয় এটি। অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠতে পারে, মাত্র ৩৫ সেন্ট দিয়ে কেনা একটি কলা কোন যুক্তিতে ৭৪ কোটি টাকায় বিক্রি হলো!
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, প্রথমবার ২০১৯ সালে কমেডিয়ান নাম দিয়ে এই শিল্পকলাটি দর্শকের সামনে তুলে ধরেছিলেন শিল্পী, যা মুহূর্তে ভাইরাল হয়। এই উপস্থাপনা নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। অধিকাংশেরই প্রশ্ন ছিল, একটি কলাকে ডাক্ট-টেপ দিয়ে দেওয়ালে আটকে রাখার মধ্যে কোন শিল্প প্রকাশ পেয়েছে? কিন্তু, বোদ্ধারা এর প্রশংসাও করেছিলেন!
তবে, যে যাই বলুক না কেন, ক্যাটেলানের এই শিল্পকর্ম সারা পৃথিবী ঘুরছে! তা করতে গিয়ে কলা যে পচে যাবে, সেটাই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে পচে যাওয়া কলা সরিয়ে সেই জায়গায় নতুন একটি স্বাস্থ্যবান কলা কীভাবে আটকে রাখতে হবে, তার জন্য একেবারে নির্দিষ্ট ও নির্ধারিত নিয়মও বলা আছে!
তথ্য বলছে, ইতিমধ্যেই ক্যাটেলানের এই শৈল্পিক উপস্থাপনার অংশ হয়ে থাকা দুটি কলা খাওয়া হয়ে গেছে। ২০২৩ সালে সিওলের লিয়াম মিউজিয়াম অব আর্টে প্রদর্শিত হওয়ার সময় দক্ষিণ কোরীয় এক শিক্ষার্থী সেই কলা খান। প্রসঙ্গত, তিনিও শিল্পকলারই ছাত্র। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, এই ঘটনার পর মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ কলার শূন্যস্থান পূরণ করেন অন্য একটি কলা দিয়ে।
এরও চারবছর আগে, মিয়ামির আর্ট বাসেল-এ ১ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়ে যায় ‘কমেডিয়ান’। ঠিক তার পরই সেটি দেওয়াল থেকে খুলে খেয়ে নেন একজন শিল্পী! তবে, এর জন্য তাঁকে কোনো শাস্তির মুখে পড়তে হয়নি। শুধুমাত্র, ‘খাওয়া’ কলার জায়গায় অন্য একটি কলা লাগিয়ে দেওয়া হয়!
এই কলার মানে আসলে কী?
সোথোবাইয়ের সমসাময়িক শিল্পের প্রধান ডেভিড গ্যালপেরিন বলেছেন, শিল্পী ক্যাটেলানকে প্রায় সময়ই একজন ‘চালবাজ শিল্পী’ হিসেবে মনে করা হয়। কিন্তু তাঁর কাজ আসলে মানুষের হাস্যরস ও গভীর ক্ষোভের মিশ্রণ। তিনি প্রায়ই উসকানি দেওয়ার উপায়গুলো দেখেন, কেবল উসকানির জন্য নয়, বরং আমাদেরকে ইতিহাসের এবং নিজেদের সম্পর্কে কিছু অন্ধকার অংশের দিকে নজর দিতে বলেন।’
বিশ্লেষকেরা বলছে, কলার একটি অন্ধকার দিক আছে। এটি সাম্রাজ্যবাদ, শ্রম শোষণ ও করপোরেট ক্ষমতার সঙ্গে জড়িত ইতিহাস বহন করে।