মৌসুমের সবজিতেও ভরে উঠেছে বাজার। এর পরও গত সপ্তাহের মতো এ সপ্তাতেও সবজির দামে খুব একটা হেরফের ঘটেনি, আগের মতোই রয়েছে অধিকাংশ সবজির দাম। সপ্তাহ ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমলেও কয়েক সপ্তাহ ধরে চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে আলু। দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে মজুমদারদের কথা বলছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা আর খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ আড়ৎদারদের দিকে।
আজ (শুক্রবার, ২২ নভেম্বর) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, নভেম্বরের শুরুতে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ৬০ থেকে ৬৫ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ঠেকেছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। সেই হিসাবে তিন সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ১৫ টাকা পর্যন্ত। তবে বেশ কিছুদিন চড়া দাম থাকার পর চলতি সপ্তাহে কমেছে পেঁয়াজের দাম। ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে দেশি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকা আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা।
আড়ৎদারদের কাছ থেকে বেশি দামে আলু কেনার অভিযোগ খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতাদের। আর আলুর দাম নাগালের বাইরে মন্তব্য করে ক্রেতারা বলছেন, মৌসুম অনুযায়ী কমেনি পেঁয়াজের দামও।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের তুলনায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এসব বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি কচুরমুখীর কেজি ৮০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পটল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপের কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধুন্দল ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙা ১০০ টাকা, শসা ৮০ থেকে ১০০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ ১০০ থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
শীতকালীন সবজি শিমের কেজি ১২০ টাকা, ফুলকপি প্রতিটি ৩০ থেকে ৬০ টাকা, ছোট আকারের বাঁধাকপি ৫০ টাকা, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, মুলা ৭০ টাকা। লেবুর হালি ২০ থেকে ৪০ টাকা, ধনে পাতার কেজি ৫০ টাকা কমে ১৫০ টাকা, কাঁচা কলার হালি ৫০ টাকা, চাল কুমড়া প্রতিটি ৬০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
লাল শাকের আঁটি ১৫ টাকা, লাউ শাক ৪০ টাকা, মুলা শাক ২০ টাকা, কলমি শাক ১৫ টাকা, পুঁই শাক ৪০ টাকা এবং ডাঁটা শাক ৩০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। সব ধরনের পেঁয়াজ কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। দেশি পেঁয়াজ ২০ টাকা কমে ১৪০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ প্রকারভেদে ৯০ থেকে ১২০ টাকা, কাঁচা আদা ১২০ টাকা এবং পুরোনো আদা ২৮০ টাকা, রসুন ২৪০ টাকা, নতুন আলু ১৪০ টাকা, বগুড়ার আলু ১০০ টাকা ও পুরোনো আলু ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতা মশিউর বলেন, বাজারে শীতের সবজির সাপ্লাই ভালো আছে, তাই দাম কিছুটা কম। শীত বাড়লে সাপ্লাই আরো বাড়বে, তখন দাম আরো কমতে পারে।
আরেক বিক্রেতা জালাল আহমেদ বলেন, কিছু সবজি ছাড়া প্রায় সব সবজির দাম কমের দিকে আছে, সামনে আরো কমে যাবে।
আগ্রহ নিয়েই শীতের সবজি কেনাকাটা করছেন ক্রেতারা। বাজারে আসা ক্রেতা নাইমুর বলেন, আগে শীতের সবজি আরো কম দামে কিনেছি। আশা করছি শীত আসলে দাম আরেকটু কমে যাবে, তখন আমরা একটু স্বস্তিতে কেনাকাটা করতে পারবো।
গত সপ্তাহের মতো ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সোনালি কক ৩০০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ২৮০ টাকা, দেশি মুরগি ৫২০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ২৯০ টাকা এবং সাদা লেয়ার ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকায়। হাঁসের ডিমের ডজন ২৩০ টাকা, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকা।
বাজারে গরু, খাসির মাংস ও মুরগির দাম স্থিতিশীল থাকলেও আগের সেই বাড়তি দামেই আটকে আছে সব ধরনের মাছ। দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থা চলতে থাকায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, মাছের ফিডের দাম বৃদ্ধির পর থেকেই বাজারে সব ধরনের মাছ বিক্রি হচ্ছে একটু বেশি দামে, যা আর কমেনি।
বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংসের কেজি এক হাজার ১৫০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ এক হাজার টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ দেড় হাজার টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ এক হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাষের শিংয়ের কেজি (আকারভেদে) ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, রুইয়ের দাম কেজিতে বেড়ে (আকারভেদে) ৩৮০ থেকে ৫০০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকা, মৃগেল ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা, পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়, বোয়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পোয়া মাছের কেজি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫৫০ টাকা, বাতাসি টেংরা এক হাজার ৩০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৫০০ টাকা, পাঁচমিশালি ২২০ টাকা, রূপচাঁদা ১ হাজার ২০০ টাকা, বাইম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, দেশি কই এক হাজার ২০০ টাকা, শোল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে ৮০০ টাকা ও কাইক্ক্যা ৬০০ টাকা।
রাজধানীর মহাখালী বাজারে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী শহীদুজ্জামান মীর। মাছের বাড়তি দামের বিষয়ে তিনি বলেন, মাছে ভাতে বাঙালি সেই কথা আর নেই। এখন বাজারে সবচেয়ে বেশি দাম মাছের। সাধারণ ক্রেতারা দুই একটি কমদামি মাছ ছাড়া, অন্য কোনো মাছ এখন আর কিনতে পারে না। কমদামি মাছ বলতে চাষের কই, পাঙাশ, তেলাপিয়া। তবে এসব মাছেরও এখন দাম আগের তুলনায় অনেক বেশি। এগুলো ছাড়া অন্য কোনো ধরনের ভালো মাছ কেনার সামর্থ্য আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের নেই। তাই ঘুরে ফিরে প্রতি সপ্তাহে এ ধরনের মাছই আমরা কিনি।
রাজধানীর মগবাজারের আরেক ক্রেতা মোজাম্মেল হক বলেন, আজ দীর্ঘদিন ধরে মাছের দাম বাড়তি যাচ্ছে। বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম চেয়ে বসে থাকে। মাছের দাম যে এত বাড়তি, তবুও সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে কোনো বাজার মনিটরিং, নিয়ন্ত্রণ, উদ্যোগ গ্রহণ করা কিছুই চোখে পড়ে না। বছরের পর বছর মাছের দাম এমন বাড়তি যাচ্ছে কিন্তু কেউ, এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। বাজারে এমন কোনো মাছ নেই যার দাম বাড়তি না। গরুর মাংস খাওয়া যেমনি মানুষ বাদ দিয়েছে, তেমনি এত বেশি দাম হলে সাধারণ মানুষ মাছও খেতে পারবে না।
মাছের বাড়তি দাম বিষয়ে রাজধানীর শান্তিনগর বাজারের মাছ বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, আসলে যখন থেকে মাছের খাবারের দাম বেড়েছে, তখন থেকেই মাছের দাম বাড়তি। এরপর থেকে সেভাবে আর দাম কমেনি। অল্প কিছু দাম ওঠানামা করে পাইকারি বাজারে। সেক্ষেত্রে আমরা যখন যেদিন যে দামে মাছ কিনতে পারি, খুচরা বাজারে একটু লাভ রেখে তেমন দামেই বিক্রি করি। পাইকারি বাজার থেকে মাছ কেনার পর বাজার খরচ, পরিবহন খরচ, লেবার খরচ, দোকান ভাড়া সবকিছুর সঙ্গে সমন্বয় করে পাইকারি বাজারের যে কিছুটা বেশি দামে আমরা খুচরা বাজারে বিক্রি করি। মূলত মাছ চাষি পর্যায়ে মাছের উৎপাদন খরচ বেড়েছে, যে কারণে তারা আগের চেয়ে বেশি দামে বাজারে বিক্রি করছে। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। আমরা যদি পাইকারি বাজার থেকে কম দামে মাছ কিনতে পারি, তাহলে খুচরা বাজারেও কম দামে মাছ বিক্রি করতে পারব।
পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল ৮১৮ টাকা, দেশি মসুর ডাল প্রতি কেজি ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, মিনিকেট চাল ৭৬ থেকে ৮০ টাকা ও নাজিরশাইল ৭৫ থেকে ৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।