ঢাকা ১১:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

বিদেশি মোড়কে নকল পণ্যে সয়লাব প্রসাধনী বাজার

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:৫৩:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
  • / ৩৪২ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বছরে দেশে প্রসাধনী পণ্যের প্রবৃদ্ধি ৮ থেকে ১০ শতাংশ। যার সাথে তাল মিলিয়ে গড়ে উঠেছে দেশীয় প্রসাধনী প্রতিষ্ঠান। যেখানে উৎপাদিত হচ্ছে বিশ্বমানের পণ্য। তবে আকর্ষণীয় অনলাইন বিজ্ঞাপন আর বিদেশি মোড়কে নকল পণ্যে সয়লাব প্রসাধনী বাজার, যাতে প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তারা। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি সমন্বিত নীতি সহায়তা পারে এ শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে।

সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রসাধনীর রংচটা প্রদর্শনী আর আশ্বাসে আটকে যান অনেকে। তরুণদের চাওয়া এসবের লাগাম টানা হোক।

তরুণদের একজন বলেন, ‘ফেসবুকে স্ক্রলিং করলেই আমরা দেখতে পারি ত্বক সাদা হওয়ার ক্রিম।’

শুধু অনলাইন নয়, যাচাই-বাছাইের পরও ঠকতে হচ্ছে ভোক্তাদের। মুখে সানস্ক্রিন মেখে চোখের ক্ষতিতে পড়েন হুমায়রা। তিনি বলেন, ‘সান থেকে রক্ষা পেতে আমি সানস্ক্রিন ব্যবহার করছি। সেটা থেকে আমার চোখের বড় ধরনের ক্ষতি হবে সেটা ভাবিনি আমি।’

চিকিৎসকরা বলছেন, ত্বকের সমস্যায় ভোগা ৫০ শতাংশ নারীই নকল প্রসাধনী ব্যবহার করেন।

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সিলভিয়া চৌধূরী বলেন, ‘আমি বলবো ৫০ শতাংশ নারীই নকল প্রসাধনী ব্যবহার করে। তারা যখন আমাদের কাছে আসে তখন এতটাই খারাপ অবস্থা থাকে যেখানে আমরাই হিমশিম খেয়ে যাই। তখন এইটা অনেক দীর্ঘমেয়াদী ব্যয়বহুল চিকিৎসা হয়ে পড়ে।’

তবে আছে ভিন্ন চিত্রও। রয়েছে নির্ভরযোগ্য দেশিয় প্রতিষ্ঠান। সুযোগ থাকছে ত্বক অনুযায়ী পণ্য কেনার। এক ছাদের নিচে সকল মানের পণ্য পাওয়াতে খুশি ক্রেতারাও।

বিক্রেতাদের একজন বলেন, ‘আমাদের এখানে প্রথমে এক্সের মাধ্যমে প্রবলেমগুলো কি আছে তা জানা হয়। এরপর সেই অনুযায়ী প্রোডাক্ট সাজেস্ট করা হয়।’

প্রসাধনী খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরে এর প্রবৃদ্ধি বাড়ছে ৮-১০ শতাংশ হারে। ২০২৭ সালে এ খাতের প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণ হওয়ার আশা তাদের। তবে আমদানিনির্ভরতা কমাতে দরকার নীতি সহায়তা।

মমতাজ হারবাল প্রোডাক্টসের চিফ অপারেটিং অফিসার আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ছে। সেইসঙ্গে অর্থনীতির একটা বড় অপরচ্যুনিটি হাতছানি দিচ্ছে।’

রিমার্ক- হারল্যানের স্কিন কেয়ার নির্বাহী পরিচালক সুকান্ত দাশ বলেন, ‘বলা হয়ে থাকে ৩ বিলিয়ন ডলারের একটা মার্কেট। যা ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার মালিক মোহাম্মদ সাঈদ বলেন, ‘লোকাল কোম্পানিগুলো প্রায় ৩০ শতাংশের মতো কন্ট্রিবিউট করে। এইটা খুব ভালো নিউজ।’

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলছেন, কেউ দেশিয় পণ্য উৎপাদন করতে চাইলে তাকে সহযোগিতা করবে সরকার। তবে নৈতিক জায়গায় থাকতে হবে স্বচ্ছ ।

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, ‘দেশিয় পণ্য উৎপাদন করতে চাইলে তাকে সহযোগিতা করবে সরকার। প্রয়োজনে ব্যাংকিং চ্যানেলে সাহায্য করবে।’

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, দেশিয় কসমেটিকসের রপ্তানি বাড়াতে পণ্যে আনতে হবে বৈচিত্র্য।

অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ মাহবুব আলী বলেন, ‘দেশের জন্য এক ধরনের ডিজাইন আর বিদেশের জন্য আরেক ধরনের পণ্যের মান রাখতে হবে।’

স্কিন এনালাইজারের মাধ্যমে ত্বকের ধরন এবং সমস্যা চিহ্নিত করা যায়। তবে বাংলাদেশের মানুষ যেসব বিদেশি প্রসাধনী ব্যবহার করে তার বেশিরভাগই ত্বকের ধরন ও আবহাওয়ার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয় না। তাতে বিদেশি পণ্য ব্যবহারে অনেক ক্ষেত্রেই ত্বকের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বিশ্লেষকদের পরামর্শ, বিদেশি নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি, দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ত্বকের ধরন ও আবহাওয়া বিবেচনায় পণ্যে ভিন্নতা বাড়াতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

বিদেশি মোড়কে নকল পণ্যে সয়লাব প্রসাধনী বাজার

আপডেট সময় : ১২:৫৩:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

বছরে দেশে প্রসাধনী পণ্যের প্রবৃদ্ধি ৮ থেকে ১০ শতাংশ। যার সাথে তাল মিলিয়ে গড়ে উঠেছে দেশীয় প্রসাধনী প্রতিষ্ঠান। যেখানে উৎপাদিত হচ্ছে বিশ্বমানের পণ্য। তবে আকর্ষণীয় অনলাইন বিজ্ঞাপন আর বিদেশি মোড়কে নকল পণ্যে সয়লাব প্রসাধনী বাজার, যাতে প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তারা। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি সমন্বিত নীতি সহায়তা পারে এ শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে।

সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রসাধনীর রংচটা প্রদর্শনী আর আশ্বাসে আটকে যান অনেকে। তরুণদের চাওয়া এসবের লাগাম টানা হোক।

তরুণদের একজন বলেন, ‘ফেসবুকে স্ক্রলিং করলেই আমরা দেখতে পারি ত্বক সাদা হওয়ার ক্রিম।’

শুধু অনলাইন নয়, যাচাই-বাছাইের পরও ঠকতে হচ্ছে ভোক্তাদের। মুখে সানস্ক্রিন মেখে চোখের ক্ষতিতে পড়েন হুমায়রা। তিনি বলেন, ‘সান থেকে রক্ষা পেতে আমি সানস্ক্রিন ব্যবহার করছি। সেটা থেকে আমার চোখের বড় ধরনের ক্ষতি হবে সেটা ভাবিনি আমি।’

চিকিৎসকরা বলছেন, ত্বকের সমস্যায় ভোগা ৫০ শতাংশ নারীই নকল প্রসাধনী ব্যবহার করেন।

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সিলভিয়া চৌধূরী বলেন, ‘আমি বলবো ৫০ শতাংশ নারীই নকল প্রসাধনী ব্যবহার করে। তারা যখন আমাদের কাছে আসে তখন এতটাই খারাপ অবস্থা থাকে যেখানে আমরাই হিমশিম খেয়ে যাই। তখন এইটা অনেক দীর্ঘমেয়াদী ব্যয়বহুল চিকিৎসা হয়ে পড়ে।’

তবে আছে ভিন্ন চিত্রও। রয়েছে নির্ভরযোগ্য দেশিয় প্রতিষ্ঠান। সুযোগ থাকছে ত্বক অনুযায়ী পণ্য কেনার। এক ছাদের নিচে সকল মানের পণ্য পাওয়াতে খুশি ক্রেতারাও।

বিক্রেতাদের একজন বলেন, ‘আমাদের এখানে প্রথমে এক্সের মাধ্যমে প্রবলেমগুলো কি আছে তা জানা হয়। এরপর সেই অনুযায়ী প্রোডাক্ট সাজেস্ট করা হয়।’

প্রসাধনী খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরে এর প্রবৃদ্ধি বাড়ছে ৮-১০ শতাংশ হারে। ২০২৭ সালে এ খাতের প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণ হওয়ার আশা তাদের। তবে আমদানিনির্ভরতা কমাতে দরকার নীতি সহায়তা।

মমতাজ হারবাল প্রোডাক্টসের চিফ অপারেটিং অফিসার আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ছে। সেইসঙ্গে অর্থনীতির একটা বড় অপরচ্যুনিটি হাতছানি দিচ্ছে।’

রিমার্ক- হারল্যানের স্কিন কেয়ার নির্বাহী পরিচালক সুকান্ত দাশ বলেন, ‘বলা হয়ে থাকে ৩ বিলিয়ন ডলারের একটা মার্কেট। যা ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার মালিক মোহাম্মদ সাঈদ বলেন, ‘লোকাল কোম্পানিগুলো প্রায় ৩০ শতাংশের মতো কন্ট্রিবিউট করে। এইটা খুব ভালো নিউজ।’

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলছেন, কেউ দেশিয় পণ্য উৎপাদন করতে চাইলে তাকে সহযোগিতা করবে সরকার। তবে নৈতিক জায়গায় থাকতে হবে স্বচ্ছ ।

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, ‘দেশিয় পণ্য উৎপাদন করতে চাইলে তাকে সহযোগিতা করবে সরকার। প্রয়োজনে ব্যাংকিং চ্যানেলে সাহায্য করবে।’

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, দেশিয় কসমেটিকসের রপ্তানি বাড়াতে পণ্যে আনতে হবে বৈচিত্র্য।

অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ মাহবুব আলী বলেন, ‘দেশের জন্য এক ধরনের ডিজাইন আর বিদেশের জন্য আরেক ধরনের পণ্যের মান রাখতে হবে।’

স্কিন এনালাইজারের মাধ্যমে ত্বকের ধরন এবং সমস্যা চিহ্নিত করা যায়। তবে বাংলাদেশের মানুষ যেসব বিদেশি প্রসাধনী ব্যবহার করে তার বেশিরভাগই ত্বকের ধরন ও আবহাওয়ার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয় না। তাতে বিদেশি পণ্য ব্যবহারে অনেক ক্ষেত্রেই ত্বকের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বিশ্লেষকদের পরামর্শ, বিদেশি নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি, দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ত্বকের ধরন ও আবহাওয়া বিবেচনায় পণ্যে ভিন্নতা বাড়াতে হবে।