জলবায়ু ঋণের বেশিরভাগই আওয়ামী সরকার ব্যয় করেছে অপরিকল্পিতভাবে
- আপডেট সময় : ০১:২০:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
- / ৪১১ বার পড়া হয়েছে
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২১০০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ৪২ শতাংশ ভূমি সাগরে তলিয়ে যাবার কথা উঠে এসেছে অনেক গবেষণায়। ক্ষতি এখন স্পষ্ট দৃশ্যমান উপকূলীয় পটুয়াখালী, ভোলা ও হাতিয়ায়। তার ওপরে জলবায়ু তহবিলের অনুদান মাত্র ৪.৯ শতাংশ। আর বাকিটা ঋণ, যার বেশিরভাগই গত সরকার ব্যয় করেছে অপরিকল্পিতভাবে। তবে জলবায়ু তহবিল ও ঋণের অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহারের আশ্বাস দিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা। আর বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রেই মওকুফ করা উচিত জলবায়ু ঋণ।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের কলাপাড়া উপজেলা, বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী এই এলাকাটি সিডর থেকে শুরু করে ঘূর্ণিঝড় রেমালে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে জর্জরিত। এই সংগ্রামী অঞ্চলের মানুষের একজন দুলালি বেগম, যিনি নদীগর্ভে হারিয়েছেন বাবার ভিটা।
তিনি বলেন, ‘আমার বাবার বাড়ি ১৫০ থেকে ২০০ বছরের পুরোনো। এই বাড়িটাকে আগে জমিদার বাড়ি বলতো। আমি এখন গল্প শুনি। কিন্তু জমিদার বাড়ির তো কিছুই তো দেখতে পাচ্ছি না।’
পাশের জেলা ভোলার প্রায় ৩০০ বর্গ কিলোমিটার ভূমি ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। ২০৫০ সালের মধ্যে সাগরের উচ্চতা ২৩ সেন্টিমিটার বেড়ে দেশের ১৮ শতাংশ ভূমি তলিয়ে যাবে।
গবেষণা বলছে, ২০০৯ সালে মাথাপিছু জলবায়ু ঋণ ২ ডলার ছিল, যা ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ ডলারে। ক্ষতিগ্রস্ত যারা তাদের উপরই বাড়ছে আরও ঋণের বোঝা। তাই জলবায়ু ঋণ মওকুফ করার প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
বাস্তুচ্যুতি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক জাতীয় কৌশলপত্রে বলা হয়, ২০০৮ থেকে ২০১৪ সালে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ৪৭ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অথচ বাংলাদেশ প্রতি বছর মাত্র ০.৫৬ শতাংশ কার্বন নির্গমন করে। বিপরীতে, চীন ও আমেরিকা যথাক্রমে ২৯ শতাংশ ও ১৫ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে ভূমিকা রাখে।
ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন বলেন, ‘প্রত্যেক জনের উপর ৯ হাজার ৫০০ টাকা ঋণের বোঝা রয়েছে আমাদের। এইগুলো আসার কথা ছিল ডোনেট থেকে। বলা যেতে পারে গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের প্রতিবছর দেয়ার কথা ছিল ১০০ বিলিয়ন ডলার। তারা কিন্তু সেটা ৩ থেকে ৫ শতাংশ দিতে পারছে না।’
চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খান বলেন, ‘আমরা যদি ঋণের ফাঁদে পড়ি তাহলে অর্থনৈতিকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়বে দেশ। এক্ষেত্রে আমাদের দাবি হচ্ছে সব ধরনের ঋণ মওকুফ করে দেয়ার জন্য।’
এই ক্ষতিতে যে দেশগুলো ভূমিকা রাখছে তারা ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে আর্থিক অনুদান দেয়ার কথা থাকলেও তাতে আছে শুভঙ্করের ফাঁকি।
অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, ‘যখন ফান্ডের প্রস্তাব করা হয় আর যতদিনে দেই তাতে দেশের অবস্থা পরিবর্তন হয়ে যায়। কারণ আমাদের মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৫ বার সাইক্লোন, বন্যা হয়েছে।’
জলবায়ু-সম্পর্কিত বিপর্যয়ের কারণে বার্ষিক ক্ষতি ৩ বিলিয়ন ডলার। তবে কেন এই খরচ বহন করবে এ দেশের জনগণ যখন সংকট সৃষ্টির জন্য দায়ী অন্য দেশগুলো?
২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ পর্যন্ত জলবায়ু তহবিলের টাকায় ৩২২টি প্রকল্প নেওয়া হলেও, এর শতাংশ সড়কবাতি প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে। বিগত সরকার জলবায়ু ঋণের ব্যবহার করেছে যত্রতত্র। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পুরো টাকাই ব্যবহার করতে চায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায়।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এবার যে ৭ টা প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে তার মধ্যে নর্দমা নেই। তার মধ্যে সোলার আছে, কেমন করে বন্যা, খরা সহিষ্ণু চাষাবাদ করা হবে, ট্যানারির মিথেন গ্যাস আসে সেটা নিয়ন্ত্রণের কথা বলা আছে।’
বিশ্লেষকদের মতে, প্রতি বছর ৪০ বিলিয়ন প্রয়োজন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায়, কিন্তু আসে মাত্র ১ বিলিয়ন। এবারের জলবায়ু সম্মেলনে ন্যায্য অনুদানের দাবি জানিয়েছেন তারা।