বিচার প্রক্রিয়ায় প্রসিকিউশনের হাতে যদি এমন কোন তথ্য প্রমাণ আসে যাতে অভিযুক্ত ঐ অপরাধের জন্য নিরপরাধ প্রমাণ হয়, সে তথ্য আসামি পক্ষের আইনজীবীর সঙ্গে ভাগাভাগি করার অনুমতি দেয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অর্ডিন্যান্সে। সম্প্রতি জারি করা এই অধ্যাদেশটিতে আগের আইনের ১৮টি ধারা সংশোধন করা হয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যামেন্ডমেন্ট অর্ডিন্যান্স ২০২৪ নামে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনটি সংশোধন করে যে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে, তার এক নম্বর ধারার দুই উপধারায় এই আইনের ব্যাপ্তি সম্পর্কে উল্লেখ আছে। আগে বাংলাদেশের ভৌগোলিক-সীমানায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের কথা বলা হলেও, সংশোধনীতে এর সীমানা বাংলাদেশসহ বাংলাদেশের বাইরে সংঘটিত অপরাধকে বিবেচনায় আনা হয়েছে।
অর্ডিন্যান্সের ২ নম্বর ধারায় এই আইনের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়েছে। যেমন এই ধারার ক্লোজ ডিসিপ্লিনড বাহিনী বলতে, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, আনসার বা আইনের দ্বারা সৃষ্ট অন্য কোন বাহিনীকে বোঝানো হয়েছে।
এই আইনের তৃতীয় ধারায় আছে ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার এবং অপরাধ নিয়ে বর্ণনা। এর দ্বিতীয় উপধারার ক্লোজ এ-তে মানবতাবিরোধী অপরাধ বর্ণিত আছে। এই উপধারাটিতে নতুন করে কোন জনগোষ্ঠীকে জোরপূর্বক স্থানান্তর, যৌন শোষণ, জোরপূর্বক গুম, মানব পাচার, যৌন দাসত্ব, জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি, জোরপূর্বক গর্ভধারণ ও গর্ভপাতকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে, আইনটিতে আগে যা ছিল না। তবে এই উপধারার ম ক্লোজে আগে নির্মূলের উদ্দেশ্যে কোন জাতিগোষ্ঠী, নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী, ধর্মীয় কিংবা রাজনৈতিক গোষ্ঠীর ওপর চালানো গণহত্যার যে উল্লেখ ছিল, সেখান থেকে পলিটিক্যাল গ্রুপ শব্দটি বাদ দেয়া হয়েছে।
ধারা ৪ এর অপরাধের দায় নিয়ে আলোচনা রয়েছে। আগে এই ধারাটির দুইটি উপধারা থাকলেও এবারে এর বিস্তৃত ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অধ্যাদেশে এই ধারাটির উপধারা ৩টি। এবং দ্বিতীয় উপধারায় অপরাধের ব্যাখ্যা দিয়ে ৬টি ক্লোজ যুক্ত করা হয়েছে।
অধ্যাদেশে নতুন সেকশন ৯ এর এ উপধারা। এই সেকশনটিতে ট্রাইব্যুনালের অডিও ভিজ্যুয়াল শুনানির সুযোগ রাখা হয়েছে। সেকশন বি তে যুক্ত হয়েছে বিচার, বিচার প্রক্রিয়া ও শুনানিতে জাতিসংঘের সংস্থা ও বিদেশি পর্যবেক্ষণ নিয়োগের সুযোগ।
ধারা ১১ তে যুক্ত হয়েছে ভার্চুয়াল শুনানির সুযোগ। এর জন্য এখানে আরও নতুন দুটি উপধারা যুক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, অনিবার্য কোন পরিস্থিতিতে ট্রাইব্যুনাল সন্তুষ্ট হলে ভিকটিম ও সাক্ষীদেরও ভার্চুয়াল শুনানি নিতে পারবেন।
১২ নম্বর ধারাকে বলা হচ্ছে আসামি পক্ষের আইনজীবীর প্রবিধান। এই ধারাটিতে আগে শুধু আসামি পক্ষ আইনজীবী নিয়োগ না করলে সরকারিভাবে আইনজীবী নিয়োগের প্রবিধান ছিল। তবে এখন এই ধারাটিতে ৬টি উপধারা যোগ করা হয়েছে। যেখানে, দ্বিতীয় উপধারায়, অভিযুক্ত ব্যক্তি নিরপরাধ বা কম দোষী প্রমাণিত হয় এমন সব সাক্ষ্যপ্রমাণ প্রসিকিউটরদের হাতে এলে তা আসামি পক্ষের আইনজীবীর কাছে উন্মুক্ত করার অনুমতি দিয়ে প্রবিধান যুক্ত করা হয়েছে।
অধ্যাদেশের ১৯ ধারায়ও এসেছে পরিবর্তন। যেখানে অডিও ভিডিও ডিভিডি সিসিটিভি অথবা অন্য কোন ডিজিটাল ডিভাইস ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা যাবে। ধারা ২১ এ অন্তর্বর্তী আদেশের বিরুদ্ধে আবেদন করার সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে আপিল বিভাগে আবেদন পেন্ডিং থাকলেও ট্রাইব্যুনাল মামলা চালিয়ে যাবেন সে কথাও বলা হয়েছে।
আইনের ২৩ ধারার পর ২৩ এর এ এবং ২৩ এর বি দুটি সেকশন সন্নিবেশ করা হয়েছে। এতে মূলত সাক্ষী ও ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা বিধান করার কথা বলা হয়েছে। ২৩ এর এ এর ১ নম্বর ক্লোজে বলা হয়েছে, এই আইনের অধীন বিচার প্রক্রিয়ার সাক্ষী দিয়ে বা তথ্যপ্রমাণ দিয়ে অংশ নেবে তাদের নিরাপত্তায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে ট্রাইব্যুনাল।
আইন বিশেষজ্ঞদের কাছে প্রশ্ন ছিল, সংশোধনের পর জারি করা অধ্যাদেশে কতটা আন্তর্জাতিক মানের হলো আইনটি?
এই আইনে অভিযুক্তের অনুপস্থিতিতে বিচারের যে বিধান তাতে কোন পরিবর্তন আনা হয় নি। প্রশ্ন ছিল, বিদ্যমান অধ্যাদেশ বা আইনে আসামি পক্ষের অনুপস্থিতিতে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা কতটা সম্ভব?
এই সংশোধনী ২০০৯ সালের পর এ আইনে করা বিচারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে আইনবিদরা।