এখনও দগদগে ঘাঁ ৩৬ জুলাইয়ের। অভ্যুত্থান ঠেকাতে পুলিশের ছোড়া গুলির ও অবৈধ অস্ত্রের পাশাপাশি ব্যবহার হয়েছে সরকারি লাইসেন্স করা অস্ত্রও। কোথায় সেই অস্ত্র যা এখনও জমা পড়েনি, সরকারি নির্দেশনার পরও? খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পাশাপাশি থানা থেকে লুট হওয়া সরকারি অস্ত্র কত উদ্ধার হলো তা খুঁজছে এখন টিভি।
খোয়া যাওয়া অধিকাংশ অস্ত্র লুট হয়েছে থানা থেকে। কোন ধরণের কতগুলো অস্ত্র খোয়া গেছে। জানা গেলো সরকারি অস্ত্রের পাশাপাশি ব্যক্তিগত অস্ত্রও ছিল থানায়।
বাড্ডা থানা। সেখানে প্রাথমিক ভাবে অস্ত্রের হিসেব দেয়া নিয়ে কিছুটা গড়িমসি। অবশেষে পাওয়া গেলো খোয়া যাওয়া অস্ত্রের হিসেব। এই থানা থেকে ১টি পিস্তল, ১টি শটগান ও ৭৭টি সাউন্ড গ্রেনেড ও কালার স্মোক গ্রেনেড ৪টি উদ্ধার করা হয়েছে। রামপুরা থানা থেকে অস্ত্র খোয়া না গেলেও পুলিশের টহল টিম থেকে দুটি অস্ত্র ছিনতাই করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
পুলিশের হিসেব বলছে এখন পর্যন্ত চায়না রাইফেল লুট হয়েছে ১১০৬টি যার মধ্যে ৯৭২টি উদ্ধার হয়েছে, এছাড়া রাইফেল ১২ টি খোয়া গেছে উদ্ধার হয়েছে ১১টি, এসএমজি ২৫১টি খোয়া গেছে উদ্ধার হয়েছে ২২০টি, এলএমজি খোয়া গেছে ৩৪টি উদ্ধার হয়েছে ৩০টি, চায়না পিস্তল ৫৩৯টি খোয়া গেছে, উদ্ধার হয়েছে ৩১৭টি। পিস্তল ১০৯২ উদ্ধার হয়েছে ৬১৮টি। খোয়া যাওয়া সব গুলো এসএমটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। সব চেয়ে বেশি খোয়া গেছে শটগান ২০৭৬টি এর মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ১৬৫৬টি। সিগন্যাল পিস্তল ৩টি উদ্ধার হয়েছে ১টি।
পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, ‘তিন ক্যাটাগরির অস্ত্র আমরা মূলত উদ্ধার করছি। একটি হচ্ছে পুলিশের যে সমস্ত অস্ত্র লুট হয়ে গিয়েছিল সেগুলো উদ্ধার হচ্ছে। এর পাশাপাশি যেসব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছিল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেগুলো জমা দিতে বলা হয়েছিল। ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছিল। যারা জমা দেননি ৪ সেপ্টেম্বর থেকে কিন্তু এগুলো অবৈধ অস্ত্র হয়ে গেছে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি।’
এতো গেলো পুলিশের খোয়া যাওয়া অস্ত্রের হিসেব। অভিযোগ ছিল ছাত্র জনতার আন্দোলন থামাতে লাইসেন্স করা অস্ত্র ব্যবহার করেছিলো তৎকালীন ক্ষমতাসীনরা।
জানা গেলো সরকারি নির্দেশনার পরও ৪৩৭ জন লাইসেন্সধারী এখনও অস্ত্র জামা দেননি ডিসি অফিসে। ডিসি অফিসের হিসেব বলছে ঢাকার লাইসেন্সধারী ৫৩৩৮টি অস্ত্রের মধ্যে জমা যোগ্য আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা ৩৩৫৯টি। ব্যক্তিগত অস্ত্র জমার নির্দেশনার পরও জমা পড়েনি ৪৯১টি অস্ত্র। সরকারি নির্দেশনা না মানায় ৪৩৭ জনের লাইসেন্স বাতিল করেছে ডিসি অফিস। এর মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩৭৯টি ও ঢাকা উপজেলাধীন ৫৮টি লাইসেন্স বাতিল করেছে।
ঢাকা জেলা প্রশাসক তানভীর আহম্মেদ বলেন, ‘বাতিলের পর এখন এ অস্ত্রগুলোর ব্যাপারে মামলা করারম যে ব্যাপার সেটা ডিএমএর এখতিয়ারে নেই। মামলা তো করবেন, যে থানার অধীন তারা আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।’
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি লাইসেন্স বাতিল হওয়া অস্ত্র ও পুলিশের হারানো অস্ত্র উদ্ধার করতে মাঠে নামে যৌথ বাহিনী। যৌথ বাহিনীর অভিযানে রিভলভার ১৯টি, পিস্তল ৭৬টি, রাইফেল ২২টি, শটগান ৩৭টি, পাইপগান ৮টি, শুটার গান ৪৩টি, এলজি ৩১টি, বন্দুক ৪৮টি, একে৪৭ ১টি, এসএমজি ৫টি, গ্যাস গান ৪টি, এয়ারগান ১০টি, এসবিবিএল ১০টি, টিয়ার গ্যাস লঞ্চার ২টি এবং থ্রি-কোয়াটার ২টি জব্দ করা হয়েছে।
যৌথ বাহিনীর পাশাপাশি অস্ত্র উদ্ধার অভিযান মাঠে আছে র্যাব। খোয়া যাওয়া অস্ত্রের মধ্যে র্যাবের ৯০ টি ও পুলিশের ২২৬টি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এছাড়া র্যাবের অভিযানে অবৈধ ২৪৫টি অস্ত্র জব্দ হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফ্ট্যান্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, বিভিন্ন থানা ও সরকারি স্থাপনা থেকে যেসব অস্ত্র লুণ্ঠিত হয়েছিল এর প্রায় ৩১৭টি অস্ত্র উদ্ধার করতে সক্ষম হই। এর মধ্যে ২২৬টি পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনা থেকে যেসব অস্ত্র এবং র্যাব থেকে লুণ্ঠিত হওয়া অস্ত্র।’
নিরাপত্তা ঝুঁকি কমাতে দ্রুত খোয়া যাওয়া অস্ত্র উদ্ধার প্রয়োজন বলে মন্তব্য নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, জনমনে স্বস্তি বা এক ধরনের আশ্বস্ততা তৈরি করতে যদি দেরি হয় বা বিলম্ব হয় তখন যেটা হবে অবৈধ অস্ত্রগুলো যাদের কাছে আছে তারা বিভিন্ন অপরাধের পরিকল্পনা করে সমাজে অস্থিরতার তৈরির চেষ্টা করবে।’
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে তথ্য দিয়ে জনগণকে পাশে থাকার আহ্বান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। প্রয়োজনে ৯৯৯ এ কল দিয়ে অবৈধ অস্ত্রের সন্ধান দিতে পারে সাধারণ মানুষ।