সম্প্রতি অভিজিৎ হাওলাদার নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে সংঘর্ষে জড়ায় তিন কলেজের শিক্ষার্থীরা। ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে তাকে বাংলাদেশে হিন্দু বিরোধী সহিংসতার দৃশ্য বলে দাবি করা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া এসব ভিডিও ইতোমধ্যে ৪ লাখেরও বেশি বার দেখা হয়েছে।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের একাধিক এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে এসব ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। এরমধ্যে আছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির এক রাজনীতিবিদও। সোশ্যালে ছড়ানো সংঘর্ষের ওই ভিডিও পোস্ট করে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলীয় নেতা এবং নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীও দাবি করেছেন- এতে ধরা পড়া দৃশ্য হিন্দুদের ওপর হামলার।
তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে জানা যায়, সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত ওই ভিডিওটি গত ২৫ নভেম্বরের। আর এটি কোনো হিন্দু বিরোধী সহিংসতার ভিডিও নয়, বরং ঢাকার তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের। ওইদিন ঢাকার মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকারি শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তবে ওই সংঘর্ষের ঘটনার সঙ্গে ধর্মীয় কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
অনুসন্ধানে সোশ্যালে প্রচারিত ওই ভিডিওর একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে বাংলাদেশের একটি গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে প্রচারিত ভিডিওর সন্ধান পাওয়া যায়। যেখানে প্রচারিত ভিডিওর সঙ্গে ওই ভিডিওর হুবহু সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। ফেসবুকে পোস্ট করা ওই ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, রাজধানীর মাতুয়াইলের মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে সরকারি শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে মোল্লা কলেজ। এ ঘটনায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
পরবর্তীতে গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, ঘটনার দিন দুপুর ১২টা থেকে মোল্লা কলেজের সামনে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী তিন কলেজের ওই সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। ওই প্রতিবেদন থেকে সংঘর্ষের ঘটনার সূত্রপাত ছাড়াও ও মূল ঘটনা সম্পর্কে জানা যায়।
প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেলে অভিজিৎ হাওলাদার নামে মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় গত রোববার (২৪ নভেম্বর) ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দেয় মোল্লা কলেজসহ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। ‘সুপার সানডে’ নামের ওই কর্মসূচি থেকে সেদিন ন্যাশনাল মেডিকেল ও পাশের সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়।
ওই সময় সরকারি শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ কেন্দ্রে স্নাতকের পরীক্ষা দেয়া কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরাও হামলার শিকার হন। এতে তাদের পরীক্ষাও স্থগিত হয়। পরবর্তীতে ওই ঘটনার প্রতিবাদে ‘মেগা মানডে’ কর্মসূচির ডাক দেয় সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। এরপর সোমবার (২৫ নভেম্বর) যাত্রাবাড়ীর ডেমরা সড়ক সংলগ্ন মোল্লা কলেজে গিয়ে হামলা ও লুটপাট করেন তারা। ওই সময় সেখানে দুই পক্ষের সংঘর্ষে অনেক শিক্ষার্থী আহত হন।
সেদিনের এ ঘটনা দেশের মূলধারার সব সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও উঠে আসে। তবে কোথাও ঘটনাটিকে হিন্দু বিরোধী সহিংসতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি এবং এ পেছনে ধর্মীয় কোনো প্রাসঙ্গিকতাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। যদিও সামাজিক মাধ্যমে ভারতীয় অ্যাকাউন্টগুলো থেকে প্রচারিত ৩ কলেজের শিক্ষার্থীদের এই সংঘর্ষের দৃশ্যকে বাংলাদেশে হিন্দু বিরোধী সহিংসতার দৃশ্য বলে দাবি করা হয়েছে, যা পুরোপুরি মিথ্যা।