যুদ্ধবিরতির চেষ্টায় কায়রো যাচ্ছে হামাস
- আপডেট সময় : ১১:১৯:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪
- / ৩৬৩ বার পড়া হয়েছে
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সঙ্গে চলা যুদ্ধে বিরতি দিতে চায় হামাস। এ জন্য চেষ্টার অংশ হিসেবে মিশরের কায়রোতে আলোচনা করতে যাচ্ছে তারা। আজ শনিবার হামাসের একটি দলের সেখানে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
এক প্রতিবেদেন এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স। হামাসের দুই কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, মিশরীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য হামাসের একটি প্রতিনিধিদল শনিবার কায়রোতে যাবে।
গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনা পুনরুজ্জীবিত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কাতার, মিশর এবং তুরস্কের সাথে নতুন প্রচেষ্টা শুরু করার কথা বলার কয়েকদিনের মধ্যেই এ সফরে যাচ্ছে গাজার শাসক দল।
প্রতিবেদন বলছে, বেশ কয়েক দফা গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা হয়েছে এরই মধ্যে। তবে কার্যত কোনো সমাধান আসেনি। কয়েক মাসের প্রচেষ্টার সামান্য অগ্রগতি হয়েছে। আলোচনা এখন আটকে আছে। এবার আশা জাগিয়েছে হিজবুল্লার সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতির বিষয়টি।
এদিকে গাজায় বৃহস্পতিবার রাতভর এবং শুক্রবার ইসরায়েলি সামরিক হামলায় কমপক্ষে ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। চিকিৎসকরা বলেছেন, উপত্যকাটির আটটি শরণার্থী শিবিরের একটি নুসিরাতের উত্তরাঞ্চলে ১৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে। এ ছাড়া উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ায় একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অন্যরা গাজা উপত্যকার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলেও নিহত হয়েছেন কয়েকজন।
শুক্রবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী নতুন কোনো বিবৃতি দেয়নি। তবে বৃহস্পতিবারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাদের বাহিনী গাজা উপত্যকায় অপারেশনাল কার্যকলাপের অংশ হিসেবে সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
এরআগে বৃহস্পতিবার নুসিরাতের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে ইসরায়েলি ট্যাংক ঢুকে পড়ে। শুক্রবার তারা উত্তরাঞ্চল থেকে সরে গেলেও পশ্চিমাঞ্চলে সক্রিয় ছিল। ফিলিস্তিনি সিভিল ইমার্জেন্সি সার্ভিস জানিয়েছে, বাড়িতে আটকে থাকা বাসিন্দাদের কাছ থেকে দুর্দশার কলে সাড়া দিতে পারেনি তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চিকিৎসক এবং স্বজনেরা নারীসহ নিহত অনেকের মরদেহ ঢেকে রেখেছিলেন। কম্বল বা সাদা কাফনে মোড়ানো অনেক মরদেহ রাস্তায় পড়ে ছিল। স্ট্রেচারে নিয়ে যাওয়া হয় কিছু মরদেহ।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন,শুক্রবার একটি ইসরায়েলি ড্রোন গাজা উপত্যকার উত্তর প্রান্তে বেইত লাহিয়ার কামাল আদওয়ান হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের প্রধান আহমেদ আল-কাহলুতকে হত্যা করেছে। তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা হামলার বিষয়ে অবগত ছিল না।
কামাল আদওয়ান হাসপাতালে জ্বালানি এবং খাদ্য সরবরাহের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এর বেশিরভাগ মেডিকেল কর্মীদের আটক বা বহিষ্কার করেছে।
ফিলিস্তিনি সিভিল ইমার্জেন্সি সার্ভিস, হামাস এবং ফিলিস্তিনি সরকারি বার্তা সংস্থার তথ্যমতে, গত ২৪ ঘন্টায় বেইত লাহিয়াতে দুটি ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ৭০। তবে স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি।
সার্বিক পরিস্থিতিতে ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। ইসরায়েলকে উত্তর গাজার জনগণকে বাস্তুচ্যুত করার অভিযোগ এনেছেন তিনি।
প্রায় ১৪ মাসের সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে লেবাননে ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহর মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয় গত বুধবার। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় গাজার শাসক দল হামাসও যুদ্ধবিরতি চুক্তি চায় বলে ইঙ্গিত দেয়। তবে ইসরায়েল কিছু জানায়নি।
মঙ্গলবার লেবানন চুক্তি ঘোষণা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তিনি এখন গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য চাপ প্রয়োগ করবেন। তিনি বলেন, জিম্মিদের মুক্তি এবং ক্ষমতা থেকে হামাসকে অপসারণসহ গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সঙ্গে আরেকটি চাপ সৃষ্টি করবে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং এর আরব মিত্ররা বলতো, গাজায় যুদ্ধবিরতি হলে হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংঘর্ষের অবসান ঘটবে। এখন তারা উল্টো আশা করছে। এর পেছনে যুক্তি হলো, লেবাননে যুদ্ধবিরতি দেখায়, সমঝোতা সম্ভব এবং হামাস এখন আরও বিচ্ছিন্ন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা করে হামাস। এতে প্রায় ১২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এর পর ওইদিন থেকই গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, তখন থেকে গাজায় ৪৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছে।