রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে আগ্রহী জেলেনস্কি
- আপডেট সময় : ০৯:২০:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪
- / ৩৫১ বার পড়া হয়েছে
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে আগ্রহী ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। ফিরিয়ে নিতে চাইবেন না রাশিয়ার জোরপূর্বক দখল করা অঞ্চলগুলো। কিন্তু দিতে হবে পশ্চিমাদের সামরিক প্রতিরক্ষা জোট ন্যাটোর সদস্য পদ। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর প্রায় ৩ বছরের মাথায় এই দাবি করে বসলেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। যদিও সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জেলেনস্কি যেভাবে ন্যাটোর ছাতার নিচে যাওয়ার আশা করছেন, সেটা কখনই সম্ভব না।
যুদ্ধের ময়দানে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একের পর এক হামলার তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে অবশেষে সুর পাল্টালেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। স্কাই নিউজে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ার দখল করা এলাকাগুলো পুনর্দখল না করেই যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে আসবেন তিনি। তবে শর্ত, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনকে এর বিনিময়ে ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেয়ার চিন্তা করতে হবে।
ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘কেউ এখনও আমাদের ন্যাটোতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানায়নি। অথচ যুদ্ধ শেষ করার এটাই উপায়। আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলো ন্যাটোর অধীনে আসতো। ইউক্রেনের আন্তর্জাতিক সীমানা অনুযায়ী এই অফার দিতে হবে, শুধু একটা অংশকে দিলে হবে না।’
স্কাই নিউজকে জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়া যে অঞ্চলগুলো নিজেদের বলে দাবি করছে, সেগুলো মস্কোতে দিয়ে আপাতত মস্কোকে দিয়ে দেবেন তিনি। তবে পুরোদমে যুদ্ধ বন্ধ করতে ইউক্রেনের যেই অঞ্চলগুলো তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, পুরোটাই ন্যাটোর ছাতার নিচে আসতে হবে। এরপর কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্য দিয়ে দখল করা এলাকাগুলো ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবে ইউক্রেন।
জেলেনস্কি বলেন, ‘এই যুদ্ধ সাধারণ মানুষের স্বাধীনতার যুদ্ধ। ভূখণ্ড স্বাধীন করার যুদ্ধ না। ইউক্রেন একটা দেশ। এই দেশ ইউরোপের অংশ। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে। আমি ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করতে চাই।’
অথচ দেশটিতে সেনা অভিযান শুরুর পর থেকেই তিনি বলে আসছিলেন, ইউক্রেনের মূল ভূখণ্ড কিয়েভকে ফেরত দিতে হবে, পাশাপাশি পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহার করে নিলে তবেই হবে যুদ্ধবিরতি। গেলো মাসেও বিজয় পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন তিনি। সেখানে ছিল, পশ্চিমারা যুদ্ধের মধ্যে ইউক্রেনকে ন্যাটো সদস্যপদের জন্য আমন্ত্রণ জানালে আগামী বছরই যুদ্ধ শেষ হবে দুই দেশের।
কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কিয়েভ অন্ধকারে ডুবে যাওয়ার পর স্কাই নিউজের সাক্ষাৎকারে রাশিয়ার দখল করা ভূখণ্ড মস্কোকে দিয়ে দেয়ার কথা বলেন তিনি। ন্যাটোর সদস্যপদ পেলে ২০১৪ আর ২০২২ সালে রাশিয়ার দখল করা এলাকাগুলো ইউক্রেন আর নিজেদের বলে দাবি করবে না বলেও জানান তিনি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ন্যাটোতে যুক্ত হওয়ার আবেদন করেন ভভোদিমির জেলেনস্কি।
যদিও সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনের এই স্বপ্ন কোনদিনই পূরণ হবে না। কারণ পুতিন আরও এলাকা দখল করার চিন্তা করছে। যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিতে জেলেনস্কি অনেক দেরি করে ফেলেছেন।
সামরিক বিশ্লেষক ড্যানিয়েল এল ডেভিস বলেন, ‘জেলেনস্কি যেটা চাইছেন হবে না, কারণ সব কার্ড পুতিনের পক্ষে। সবকিছু রাশিয়ার জয়ের দিক নির্দেশনা দিচ্ছে। এখন পুতিনের দখলে যা আছে, পুতিন তারচেয়েও বেশি চাইছেন। তার মানে ন্যাটো সদস্যপদ পুতিন মানবেন না। আর রাশিয়া যুদ্ধ যে কারণে শুরু করেছিলো, সেই কারণই তো ন্যাটো। শেষ সময়ে এসে এই চুক্তি করতে চাইলে কোনোকিছুই হবে না।’
এদিকে, ইউক্রেনে আগ্রাসন বাড়াতে উত্তর কোরিয়ার সহযোগিতা নিচ্ছে রাশিয়া। রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলুসভের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। কিম বলেন, ইউক্রেন যেভাবে রাশিয়ায় পশ্চিমা মিসাইল ছুড়ছে, তাতে আত্মরক্ষার জন্য রাশিয়া যেকোনো পদক্ষেপই নিতে পারে। মস্কোকে পুরো একদল সেনাবাহিনী আর সমরাস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করছে পিয়ংইয়ং।
এদিকে, রাতভর ভয়াবহ ড্রোন আর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কিয়েভকে অন্ধকারে ডুবিয়ে দেয়ার পূর্ব ইউক্রেনে হামলা বাড়িয়েছে। অন্যদিকে, মস্কোর জ্বালানি ডিপোতে হামলা করেছে কিয়েভ। রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধের শুরুটা ইউক্রেনের ন্যাটোতে সদস্যপদ চাওয়া নিয়েই। যদিও কূটনীতিকরা বলছেন, আপাতত ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেয়ার কোন পরিকল্পনা নেই তাদের।