২০২৩ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি সিরিজ খেলে প্রত্যাশিত ফল পায়নি বাংলাদেশ। আজ আয়ারল্যান্ডকে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ৫ উইকেটে হারানোর মাধ্যমে সিরিজ জয়ের মুখ দেখেছে নিগার সুলতানা জ্যোতিরা।
আইরিশদেরকে প্রথম ওয়ানডেতে ১৫৪ রানের বড় ব্যবধানে হারানোর পর আজ দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও হেসেখেলে জিতেছে বাংলাদেশ। ১৯৪ রানের লক্ষ্যে নেমে ৩৭ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটে জয় তুলে নিয়েছে স্বাগতিকরা।
মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় আয়ারল্যান্ড। শুরুতেই দলীয় অধিনায়ক ওপেনার গ্যাবি লুইসের উইকেট হারায় আইরিশরা। এরপর ১১তম ওভারে বল হাতে নিয়েই এলবিডব্লিউর ফাঁদে সারা ফোর্বসকে সাজঘরের পথ দেখান নাহিদা আক্তার। তবে প্রেন্ডারগাস্ট এবং আমি হান্টারের ৯৫ রানের জুটিতে ম্যাচে ফেরে সফরকারীরা। হান্টারের ৬৮ ও প্রেন্ডারগাস্ট- লরা ডিলানির ত্রিশোর্ধ্ব ইনিংসে ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৯৩ রানের পুঁজি পায় আইরিশ মেয়েরা।
১৯৪ রানের লক্ষ্যে নেমে ইনিংসের শুরুতেই ওপেনার মুর্শিদা খাতুনকে হারায় বাংলাদেশ। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে আইরিশ পেসার ওর্লা প্রেন্ডারগাস্টের বলে গ্যাবি লুইসের কাছে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মুর্শিদা (৬)। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে প্রথম ওয়ানডের মতো আজও বাংলাদেশের ঢাল হয়ে দাঁড়ান ওপেনার ফারজানা হক ও শারমিন আক্তার।
ফারজানা-শারমিনের দৃঢ়তায় ১৬তম ওভারেই দলীয় পঞ্চাশ রান পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ। আইরিশ পেসার ও স্পিনারদের সামলে মাঝ ওভারে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় স্বাগতিকরা।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের আগে ফারজানা হকের ওয়ানডে ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন ছিল অনেক। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চলতি বছর খেলা তিন ওয়ানডের একটিতেও নিজের রান দুই অঙ্কের ঘরে নিয়ে যেতে পারেননি ফারজানা। তবে আইরিশদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৬১ রানের ইনিংসের পর আজ আরেকটি ফিফটির দেখা পান ডানহাতি এই ওপেনার। ৮৮ বলে ফিফটির দেখা পান ফারজানা। ২৭ তম ওভারে ১০০ রান পূরণ করে বাংলাদেশ।
তবে ফিফটি করার পরের বলেই লরা ডেলানির বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ফারজানা। সেই সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ৮৫ রানের জুটির সমাপ্তি ঘটে।
প্রথম ওয়ানডেতে সেঞ্চুরির আক্ষেপ থাকা শারমিন আজও নিজের সেরাটা দিয়েছেন। দ্বিতীয় উইকেটে ফারজানাকে সঙ্গ দিয়ে দলের জয়ের ভিত গড়লেও শারমিন আক্তার খানিকটা আক্ষেপ নিয়ে ফিরেছেন। ২৯তম ওভারে এভা ক্যানিংয়ের মিডিয়াম পেসে উইকেটকিপারের কাছে ব্যক্তিগত ৪৩ রানে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শারমিন।
আগের দিন ৪ রানের সেঞ্চুরির আক্ষেপ থাকা এই ব্যাটার আজ ৭ রানের জন্য ফিফটি হাতছাড়া করেছেন। সতীর্থ ফারজানা এই সিরিজে টানা দুই ফিফটির দেখা পেলেও শারমিন তা পারেননি।
১০৭ রানে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশ বিপদে পড়তে পারত। তবে অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি দলকে চাপে পড়তে দেননি। সুবহানা মুস্তারি চতুর্থ উইকেটে ২২ রানের জুটি গড়ে ফিরে গেলেও আগ্রাসী ইনিংসে দলকে জয়ের পথে রেখেছেন জ্যোতি।
পঞ্চম উইকেটে স্বর্ণা আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে আইরিশ বোলারদের আগ্রাসী মেজাজে খেলতে থাকেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৩৯ বলে ৪০ রান করে দলীয় ১৮২ রানে জ্যোতি ফিরে গেলেও শেষ পর্যন্ত স্বর্ণার ২৯ রানের ইনিংসে ৩৭ বল হাতে রেখেই ৫ উইকেটের জয় পেয়ে যায় বাংলাদেশ। এই জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ওয়ানডে সিরিজ নিজেদের করেছে নিগার সুলতানার দল।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওয়ানডের ব্যর্থতা ছাপিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় আয়ারল্যান্ড। আগের ম্যাচে মাত্র ৯৮ রানে অলআউট হওয়া সফরকারীদের ওপেনাররা শুরুতে ব্যর্থ হলেও মাঝ ওভারে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় ওর্লা প্রেন্ডারগাস্ট ও অ্যামি হান্টার।
দলীয় ৩৫ রানে ২ উইকেট হারানো আইরিশদের পথ দেখান এই দুই টপ অর্ডার ব্যাটার। তৃতীয় উইকেটে ৯১ রানের জুটি গড়ে বড় সংগ্রহের ভিত তৈরি করেন প্রেন্ডারগাস্ট-হ্যান্টার। তবে ম্যাচের ৩৫তম ওভারে রান আউটের ফাঁদে পড়ে ওর্লা প্রেন্ডারগাস্ট। ৭২ বলে ৩৭ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেন এই ডানহাতি ব্যাটার।
৯১ রানের জুটি ভাঙার ওভারে আরেকটি সফলতা পায় বাংলাদেশ। নিজের সতীর্থ ফিরে যাওয়ার ওভারে আরেক সেট ব্যাটার অ্যামি হান্টারও প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। ৮৮ বলে ৬৮ রান করে স্বর্ণা আক্তারের বলে এলবিডব্লিউ হন হ্যান্টার। আইরিশ উইকেটকিপারের বিদায়ে ১২৬ রানে ২ উইকেট থেকে ১২৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে সফরকারীরা।
শেষ দিকে লরা ডেলাইনির ৩৩ রান ও উনা রেইমন্ডের ২১ রানে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৯৩ রানের সংগ্রহ পায় আয়ারল্যান্ড। বাংলাদেশের হয়ে ২টি উইকেট নেন সুলতানা খাতুন।
সিরিজের শেষ ওয়ানডে আগামী ২ ডিসেম্বর।