কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলে এবার রেকর্ড ২৯ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। টাকা গণনা কাজ চলবে দিনভর। আজ (শনিবার, ৩০ নভেম্বর) সকাল থেকেই ছিল ব্যস্ততা, আর সবার চোখে-মুখে উচ্ছ্বাসের ছাপ। সকাল ৭টায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক মিজাবে রহমতের তত্ত্বাবধানে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীর উপস্থিতিতে দানবাক্সগুলো খোলা হয়।
এবার দানবাক্সের সংখ্যা ছিল নয়টি, যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল নতুন দু'টি ট্রাঙ্ক। মসজিদের দানবাক্স খুলে পাওয়া বিপুল পরিমাণ টাকার মাঝে ছিল সবার চোখে আনন্দের ঝিলিক। মাদ্রাসার ছাত্র থেকে শুরু করে মসজিদ কমিটির সদস্য, সবাই একত্রে গণনার কাজে অংশ নিচ্ছেন। টাকার পরিমাণ এত বেশি যে, রাত হওয়ার আগেই শেষ করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বলেন, 'এবার দানবাক্স থেকে ২৯ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। গণনার কাজ চলছে। চূড়ান্ত হিসাব পেতে অপেক্ষা করতে হবে। দানের টাকা থেকে গরিব অসহায় এতিমদের সাহায্য করা হয়। এছাড়াও মসজিদের নানা উন্নয়নমূলক কাজে তা ব্যবহৃত হয়। তবে একসাথে অনেক মানুষ যেন নামাজ আদায় করতে পারে সেজন্য শীঘ্রই একটি দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।'
এসপি মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, 'টাকার নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ সতর্কতা নিশ্চিত করা হয়েছে। টাকা গণনা শেষে ব্যাংকে পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত পুলিশ নিরাপত্তা প্রদান করবে।'
গণনার কাজে অংশ নিচ্ছেন ২৪৫ জন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, ৫০ জন ব্যাংক কর্মকর্তা, ৩৪ জন মসজিদ কমিটির সদস্য এবং ১০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। সকাল থেকে সবার মধ্যেই ছিল উৎসাহ উদ্দীপনা। এত টাকার মাঝে কাজ করতে পেরে তারা অভিভূত।
দানবাক্সগুলো খোলার পর থেকেই মসজিদের আশপাশে উৎসুক মানুষের ভিড়। কেউ এসেছেন মসজিদে দান করার জন্য, কেউবা এই অভূতপূর্ব গণনার দৃশ্য দেখতে।
এর আগে গত ১৭ আগস্ট দানবাক্স খুলে ২৮ বস্তা টাকা পাওয়া গিয়েছিল, যা গণনা শেষে দাঁড়ায় সাত কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা ও সোনার গহনাও পাওয়া গিয়েছিল।
পাগলা মসজিদ শুধু টাকার দানে নয় হাঁস-মুরগি, গরু, ছাগলসহ নানা উপকরণের দানেও বিখ্যাত। যা প্রতিদিন আসরের নামাজের পর নিলামে বিক্রি হয়। দানের জন্য স্থানীয় এবং দূরদূরান্তের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক এই মসজিদ।
কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত এই মসজিদটি বর্তমানে তিন একর ৮৮ শতাংশ জমি নিয়ে বিস্তৃত।